ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কাজ কী?

নিলয় মামুন

প্রকাশিত : ০৯:০০ পিএম, ১৪ মে ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ১০:২৪ পিএম, ১৪ মে ২০১৯ মঙ্গলবার

ভেজাল আর নিম্নমানের পণ্যে বাজার সয়লাব বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে ক্রেতাদের কাছ থেকে। নিশ্চিন্তে কোনো পণ্য ব্যবহার করা কঠিন হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষের। নামি দামী কোম্পানিগুলোর পণ্যও এখন উৎপাদন হচ্ছে নিম্নমানের ও ভেজাল উপকরণে। সম্প্রতি ৫২টি পণ্যের মধ্যে ভেজাল উপকরণ নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে আরও ভালোভাবে সবার সামনে আসে বিষয়টি।

বিএসটিআই ৫২টি প্রতিষ্ঠানের পণ্যের মধ্যে ভেজাল পেলেও কোন কার্যকরী ভূমিকা নেয়নি। যার কারণে কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি (সিসিএস) নামে একটি বেসরকারি ভোক্তা অধিকার সংস্থা হাইকোর্টে রিট করার মাধ্যমে তা আদালতের সামনে আনে। এর মাধ্যমে মানুষও এ বিষয়ে আরো ভালোভাবে অবগত হয়। আদালত বাজার থেকে এসব পণ্য সরানোর নির্দেশ দেয়। কিন্তু এখনও এসব পণ্য বাজারে রয়েছে বলে জানা যায়। খুচরো বিক্রেতারা পড়েছেন এ নিয়ে বিপাকে। তারা বুঝে উঠতে পারছেন না আসলে তারা কি করবেন।

অন্যদিকে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ  জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিভাগের সদস্য মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ জানিয়েছেন, এই সব পণ্যে কি পরিমাণ ক্ষতিকর জিনিস রয়েছে তারা এখনও এ বিষয়ে অবগত নয়।

তবে দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ৩ দিনের ভেতর বাজার থেকে এই ৫২টি পণ্য সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক। 

জানা যায়, জাতীয় সংসদ ১০ অক্টোবর ২০১৩ সালে নাগরিকের জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষে নিরাপদ খাদ্য আইন অনুমোদন করে। আর বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করতে খাদ্য উৎপাদন, আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুদ, সরবারহ, বিপণন, বিক্রয় সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের সমন্বয়ের মাধ্যমে সহযোগীতা প্রদান ও নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষে গঠিত হয় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)। 

এ কর্তৃপক্ষের অন্যতম দায়িত্ব হলো- আইনের আলোকে উৎকৃষ্ট পন্থায় গৃহীত খাবার সব সময় সবার জন্য সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পোঁছানো।  কিন্তু  সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ কেমন দায়িত্ব পালন করছে এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

একটা সময় শুধু প্রচার আর বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা ছিলো নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চোখে পড়ার মত কার্যক্রম। পরে ২০১৮ সালে ম্যাজিস্টেটের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনার জন্য ম্যাজিস্টেট পায় (বিএফএসএ)। কিন্তু আরও নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদলত পরিচালনার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট দরকার বলে জানান নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিভাগের সদস্য মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এখন নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা হচ্ছে। তিনজন ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে আমরা ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করছি।’’

৫২টি পণ্য যেসব প্রতিষ্ঠানের তারা যে আবার এমন পণ্য তৈরি করবে না এমন নিশ্চয়তা কি? আর এ বিষয়ে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) কি ভূমিকা নিয়েছে, এমন প্রশ্নে মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ বলেন, ‘‘ এই বিষয়ে দেখছে বিএসটিআই। যদি পণ্যের গুনগত মান ঠিক না হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে বিএসটিআই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। তবে দৈনিক হাজার হাজার পণ্য উৎপাদন হচ্ছে সব তো ধরে ধরে পরীক্ষা করে বাজারে নিয়ে আসা কঠিন।’’তাহলে কিভাবে পণ্যে ভেজাল বা নিম্মমান ঠেকানো যেতে পারে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘আমরা নিয়মিত কারখানাগুলো ভিজিট করার মাধ্যমে এটি ঠেকাতে পারি।’’

এদিকে বিভিন্ন ফল ও শাক সবজির মধ্যে ফরমালিন বা কেমিক্যাল ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া যায় বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু ফরমালিন ব্যবহার করা হয় তিনি এ বিষয়ে মানতে নারাজ। তিনি জানান, ‘এসব অপপ্রচার। কিছু কিছু ফল রয়েছে যেগুলো এমনিতেই অনেক দিন না পঁচে ভালো থাকে। তাহলে এখানে ফরমালিন ব্যবহারের বিষয় কেন আসবে?’’ কলা দ্রুত পাকানোর জন্য কিছু কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় শুধু এটিই উল্লেখ করেন তিনি।

এছাড়া কিছু কিছু কৃষক না বুঝেই ফলের মধ্যে স্প্রে করেন। দেখা যাচ্ছে একটি বাগানে একবার স্প্রে করার প্রয়োজন আছে। কিন্তু কৃষক না বুঝেই সেখানে কয়েকবার কেমিক্যাল দিয়ে স্প্রে করেন। এর জন্য তিনি কৃষি বীদদের সঙ্গে কথা বলে স্প্রে করার বিষয়ে পরামর্শ দেন তিনি।

শুধু বিভিন্ন কোম্পানির পণ্যই নয়, সম্প্রতি বাজারে বেশির ভাগ মুরগীকে এন্টিবায়োটিক খাওয়ানো হচ্ছে। মুরগীকে সুস্থ রাখার জন্য। আর এর মাধ্যমে দেখা গেছে যে, এটি  মানুষের শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের তৎপরতা কি? এ বিষয়ে মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ বলেন, ‘‘মুরগীর ফিড পরীক্ষা করার জন্য এ বিষয়ে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরকে আমরা বলেছি। তারা ব্যবস্থা নিবেন।’’ চারদিকে এমন ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্যের সয়লাব ঠেকানোর ক্ষেত্রে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ভবিষৎ পরিকল্পনা কী?

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে বাজারে কিছু জিনিস চলে আসার পর তা যদি শনাক্ত হয়, তাহলে দেখা যায় কিছু পণ্য মানুষ এর মধ্যে ব্যবহারও করে ফেলেছে। তাই আমাদের এসব ঠেকানোর জন্য পূর্ব থেকেই এর মূল উৎস বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে। যেন বাজারে ভেজাল পণ্য না ঢুকতে পারে। আর নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান চলবে। এছাড়া ভোক্তাদের বলবো তারা যেন বিভিন্ন পণ্য কেনার সময় আরো যাচাই বাছাই করে কিনে। এছাড়া কৃষকরাও আরও  সচেতন হয়। তাহলেই এসব ভেজাল খাদ্য পরিহার করা সম্ভব।

এ বিষয়ে বেসরকারি ভোক্তা অধিকার সংস্থা কনজুমার্স সোসাইটি (সিসিএস) এর পরিচালক  পলাশ মাহমুদ বলেন, বিএফএসএ চাইলে ভেজাল পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ অথবা যে কাউকে গ্রেফতারসহ সব ভেজাল বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। কিন্তু তাদের কার্যক্রম সেভাবে চোখে পড়ছে না। মানুষের খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এ বিভাগের মূল কাজ। কিন্তু বাজারে এখনও ভেজাল খাদ্যের ছড়াছড়ি চলছেই।

 

এসএইচ/