ধান নিয়ে হচ্ছেটা কি?
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:২০ পিএম, ১৫ মে ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ১২:২১ পিএম, ১৫ মে ২০১৯ বুধবার
ফসলের বাম্পার ফলন হলে কৃষকের মুখে হাসি ফোটে। কৃষকের মুখে হাসি থাকলে চাঙ্গা হয় দেশে অর্থনীতি। চলতি বোরো মৌসুমেও ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। যা দেখে কৃষক বেজায় খুশি। কিন্তু ধান কাটার মৌসুমে সব হাসি ম্লান হয়েছে কৃষকের। কারণ ফলন বাড়লেও দাম কম ধানের। সেই সঙ্গে জনবল সংকটে কোথাও কোথাও ফসল কাটার খরচই বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃষকের জন্য। দুই মণ ধানের দামেও একজন দিনমজুর মিলছে না কোথাও কোথাও। ফলে অনেক এলাকায় কৃষকরা জমিতেই ফেলে রাখছে ধান। এমন চিত্র দেশের বিভিন্ন এলকায়।
মাঠপর্যায়ে কৃষকের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, স্থানভেদে প্রতিমণ ধানের দাম হাকা হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকায়। অথচ প্রতিমণ ধান উৎদন করতে খরচ হয়েছে ৭০০-৮০০ টাকা। ফলে কৃষকের লোকসান হচ্ছে গড়ে মণপ্রতি ৩০০ টাকা।
কিন্তু আসল রহস্য কি? কেনোই বা এমন তারতম্য দেখা দিয়েছে দেশের অর্থনীতির বড় এই উৎস ধানের ক্ষেত্রে? এই প্রশ্ন এখন সবার।
কৃষক ও বিশেষজ্ঞরা, ধানের দাম কম হওয়ার পেছনে বিভিন্ন জায়গায় মজুদদার ও মিল মালিকদের কারসাজিকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন। সেই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে ধান-চাল সংগ্রহের প্রক্রিয়াগত ত্রুটিকেও চিহ্নিত করেছে তারা। বিশেষ করে চাল সংগ্রহের নামে মিলার-ডিলারদের মাধ্যমে মধ্যস্বত্বভোগীদের সুযোগ করে দেওয়ার পদ্ধতি বাদ দিয়ে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাল কেনার তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
চলতি বোরো মৌসুমে এখনো সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ করা হয়নি। কৃষক তাদের অসহায়ত্বের প্রকাশ ঘটিয়েছে নানাভাবে। মাঠপর্যায়ে খাদ্য কর্মকর্তারাও ধান সংগ্রহে অনেকটা নির্লিপ্ত। কেউ কেউ বলছে, মাঠপর্যায়ের একশ্রেণির কর্মকর্তা ও মিলার বা মজুদদার অপেক্ষায় আছে আরেক দফা বৃষ্টির। তখন কৃষকরা মাঠের পাকা ধান নিয়ে আরো বিপাকে পড়লে ধানের দাম আরো কমে যাবে, আর মিলাররা কম দরে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে চাল বানিয়ে সরকারের কাছে বেশি দামে বিক্রি করার সুযোগ নেবে।
এসব বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আরিফুর রহমান অপু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এখনো ধান সংগ্রহে গতি আসেনি। এরই মধ্যে মাঠপর্যায়ের খাদ্য কর্মকর্তাদের তাগিদ দিয়েছি যাতে তাঁরা যেন দ্রুত মাঠে নেমে পড়েন। এমনকি আমরাও মন্ত্রী মহোদয়কেসহ মাঠে নামব। কারণ আমরাও চাই কৃষক যেন বঞ্চিত না হয়। তাদের কাছ থেকেই আমরা সরাসরি ধান কিনতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সব ক্ষেত্রেই কিছু দুষ্ট লোকজন থাকে। এখানেও তেমন কিছু হতে পারে। মিলাররা নানা অজুহাতে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে চাল করে বিক্রির কারসাজি করার চেষ্টা করতে পারে। তবে আমরা এসব বিষয় কঠোরভাবে মনিটর করব।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইসমত আরা বেগম বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরেই আমাদের দেশে এটা প্রায় স্বতঃসিদ্ধ হয়ে গেছে যে প্রকৃত কৃষকরা তাদের উৎপাদন মূল্য তুলতে হিমশিম খাচ্ছে। অথচ অন্য সব পেশার মতো তাদেরও উপার্জনের মূল উৎস হচ্ছে এই ধান উৎপাদন। যেখানে তার উৎপাদন খরচ এবং সংসার চালানোর মতো অর্থ ওঠানোর জন্যই কৃষকের চাষাবাদ করার কথা, সেখানে এখন উৎপাদন খরচই ঠিকমতো উঠছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে কৃষির ভবিষ্যৎ খুব একটা ভালো হবে না।’
কৃষি অর্থনীবিদরা জানান, ‘সরকারের দিক থেকে কৃষকদের ভাগ্যের উন্নয়নে সদিচ্ছার কোনো ঘাটতি নেই, প্রচুর ভালো উদ্যোগও আমরা দেখছি। কিন্তু নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কেন যেন কিছু গলদ থেকে যায়। যে গলদের ফাঁক দিয়ে সহজেই মধ্যস্বত্বভোগীরা কৃষকের ভাগের লাভ খেয়ে ফেলে আর বঞ্চিত হচ্ছে কৃষক। এ ক্ষেত্রে আমার মতামত হচ্ছে, যে করেই হোক সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যে ধান-চাল সংগ্রহ কর্মসূচির সময় সরকারের লোকজন সরাসরি যাতে কৃষকের কাছে গিয়ে ধান কিনে আনে।’
এসএ/