ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি

উৎকণ্ঠায় নিখোঁজ বাংলাদেশীদের পরিবার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০২:১৫ পিএম, ১৫ মে ২০১৯ বুধবার

স্বপ্নগুলো ডুবে গেলো ভূমধ্যসাগরে। উন্নত জীবনের আশায় সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হরালো বাংলাদেশী তরুণরা। লিবিয়া থেকে ইউরোপের উদ্দেশে যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরের তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি প্রাণ হারায়। যাদের অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা এখনও পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় নিখোঁজদের পরিবারগুলো রয়েছে উৎকণ্ঠায়।

গত বৃহস্পতিবার রাতে লিবিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জুয়ারা উপকূল থেকে একটি বড় নৌকা ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। গভীর রাতে ভূমধ্যসাগরে তিউনিসিয়ার জলসীমায় ওই বড় নৌকা থেকে প্রায় ৭৫ জনকে ছোট একটি নৌকায় নামানো হয়। পরে ওই ছোট নৌকাটি ডুবে যায়।

রেড ক্রিসেন্টের তথ্যানুযায়ী, নৌকাটিতে মোট ৫১ জন বাংলাদেশি ছিলেন, যাদের ১৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া নিহত ২৭ বাংলাদেশির পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। সে হিসাবে বাকি ১০ বাংলাদেশির পরিণতি এখনও জানা সম্ভব হয়নি।

ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজের তালিকায় রয়েছেন বিশ্বনাথের দিলাল মিয়া (৩৪) ও রেদওয়ানুল ইসলাম খোকন (২৬) নামের দুই ব্যক্তি আছেন। এর মধ্যে দিলাল নৌকায় ওঠার ১০ মিনিট আগে মোবাইল ফোনে ভাই শানুর মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন খোকন তার ভাই রাজু আহমেদকে ভয়েস মেসেজ পাঠিয়েছিলেন।

নিখোঁজ দিলাল সিলেটের অলংকারী ইউনিয়নের শিমুলতলা গ্রামের ইরশাদ আলীর ছেলে। আর খোকন রামপাশা ইউনিয়নের নওধার মাঝপাড়া গ্রামের ইলিয়াস আলীর ছেলে। তারা দুজনই পাঁচ মাস আগে লিবিয়া গিয়েছিলেন। তাদের নিখোঁজের খবরে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় পড়েছে।

অপরদিকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চার যুবক আছেন। তাদের সন্ধান না পেয়ে পরিবারগুলোতে চলছে মাতম।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উন্নত জীবনের আশায় ইতালির উদ্দেশে দেশ ছাড়েন নড়িয়া উপজেলার ভূমখাড়া ইউনিয়নের পাটদল গ্রামের মৃত হাসেম মোল্যার ছেলে সুমন মোল্যা (২৬), দক্ষিণ চাকধ গ্রামের গৌতম দাসের ছেলে উত্তম দাস (২৩), হারুন হাওলাদারের ছেলে জুম্মান হাওলাদার (১৯) ও চাকধ গ্রামের মোর্শেদ আলী মৃধার ছেলে পারভেজ মৃধা (২২)। ওই যুবকরা গত বছরের রমজান মাসে স্থানীয় দালাল কেদারপুর গ্রামের আক্কাছ মাদবরের সঙ্গে লিবিয়া যান।

নৌকাডুবির ঘটনায় মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার জুয়েল আহমেদের (২৩) খোঁজ পায়নি তার পরিবার। এতে চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে পড়েছে স্বজনরা।

জুয়েল উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের ছাতারখাই গ্রামের জামাল উদ্দিন বছরের ছেলে। তার পরিবার জানিয়েছে, ইতালিতে যাওয়ার উদ্দেশে ২০১৮ সালের ৫ মার্চ দালালের মাধ্যমে লিবিয়া পাড়ি দেন জুয়েল। এরপর কেটে যায় প্রায় দেড় বছর। এরপর ইতালিতে বসবাসরত বিশ্বনাথ উপজেলার পারভেজের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ওই দালাল আড়াই লাখ টাকার বিনিময়ে জুয়েলকে ইতালিতে নেওয়ার আশ্বাস দেয়। এরপর গত ডিসেম্বরে বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের বাবা রফিক উদ্দিনের (পারভেজের বাবা) ওই টাকা পরিশোধ করা হয়।

জুয়েলের বাবা জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে জুয়েলকে ইতালিতে নেওয়ার কথা বলে বিয়ানীবাজার উপজেলার দালাল বদরুল ইসলাম আট লাখ ২০ হাজার টাকা নেয়। এরপর ছেলেকে লিবিয়া পাঠালেও সে ইতালি পাঠাতে পারেনি। এরপর দালাল পারভেজের সঙ্গে চুক্তি হয়। নৌকায় ওঠার আগে ছেলে ফোন দিয়েছিল। এরপর আর তার খোঁজ মিলছে না।’

এছাড়া নিখোঁজ বাংলাদেশিদের মধ্যে বিয়ানীবাজারের আব্দুল হালিম সুজন, রফিক আহমদ ও রিপন আহমদ নামের তিন যুবক আছেন।

সুজনের বাড়ি উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের বড়উধা মাইজকাপন গ্রামে। তার বড় ভাই আব্দুল আলিম জানান, সুজন দেশে অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পরিবারের অর্থকষ্ট দূর করতে ইউরোপে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সুজন। এ জন্য তিনি গোলাপগঞ্জ উপজেলার পারভেজ আহমদ ও মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার শাহিন আহমদ নামের দুই দালালকে ৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকা দেন। গত বৃহস্পতিবার নৌকায় চড়ার আগে বাড়িতে যোগাযোগ করেছিলেন সুজন। ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির পর থেকে দালালরা ফোন বন্ধ রেখেছে। এখন সুজনের পরিবার চরম উৎকণ্ঠায় আছে।

উল্লেখ্য, এরই মধ্যে নিহত ২৭ জনের লাশ শনাক্ত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (বিডিআরসিএস)।

বিডিআরসিএসের দেওয়া তথ্যমতে নিহতরা হলেন—নাসির (নোয়াখালী), কামরান (টঙ্গী), জিল্লুর রহমান, লিমন আহমেদ, আবদুল আজিজ, আহমেদ, জিল্লুর, রাফিক, আয়াত, আমজাল, কাসিম আহমেদ, খোকন, রুবেল, মনির, বেলাল, মারুফ, রিপন (সিলেট), জালাল উদ্দিন ও আল আমিন (কিশোরগঞ্জ), মাহবুব (সুনামগঞ্জ), সজীব (মাদারীপুর), পারভেজ ও কামরুন আহমেদ মারুফ (শরীয়তপুর), শামীম ও ফাহাদ (মৌলভীবাজার), মাহবুব ও নাদিম (সুনামগঞ্জ)।

এসএ/