সংকটে ভিকারুননিসা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:০৪ পিএম, ১৫ মে ২০১৯ বুধবার
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে নেই নিয়মিত অধ্যক্ষ। ফেলে শিক্ষকদের মধ্য থেকে একজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পূর্ণকালীন অধ্যক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়া আটকে আছে অনিয়মের অভিযোগে।
এদিকে দেশের অন্যতম শীর্ষ এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির মেয়াদও ফুরিয়ে গেছে। গত ৩ মে থেকে কমিটি ছাড়াই চলছে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। এমন পরিস্থিতিতে নানামুখী সংকটে প্রতিষ্ঠানটি।
অপদিকে পরিচালনা কমিটির মেয়াদ ফুরানোর এক মাস আগেই অভিভাবক সদস্য ও শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন সম্পন্ন করার বাধ্যকতা রয়েছে। কিন্তু সদ্য বিদায়ী কমিটি সেই নিয়ম পালন করেনি। একই সঙ্গে নির্বাচনের আগেই কমিটির মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে ছয় মাসের জন্য আহ্বায়ক কমিটি গঠনের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু বোর্ডের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাই গত কয়েক দিন ধরে ভিকারুননিসা স্কুলে আইনিভাবে নেই কোনো ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষও।
এ প্রসঙ্গে ভিকারুননিসার সর্বশেষ গভর্নিং কমিটির চেয়ারম্যান গোলাম আশরাফ তালুকদার গণমাধ্যমকে বলেন, যেহেতু তার কমিটির মেয়াদ ফুরিয়েছে, তাই ওই প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তিনি কোনো খোঁজ-খবর রাখেন না।
মেয়াদ ফুরানোর আগে নির্বাচন প্রক্রিয়া কেন সম্পন্ন করা যায়নি- তা জানতে চাইলে গোলাম আশরাফ বলেন, অরিত্রী অধিকারী নামে এক ছাত্রীর মৃত্যুতে সৃষ্ট সংকটের কারণে এ অবস্থা হয়েছে। গভর্নিং বডির কয়েকজন সদস্য ভুল বুঝিয়েছিলেন যে, কমিটির মেয়াদ বাড়ানো যাবে। তাই নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন সম্পন্ন করা যায়নি।
এছাড়া নিয়মিত অধ্যাপক নিয়োগ নিয়েও দেখা দিয়েছে জটিলতা। লিখিত পরীক্ষায় ৩০ নম্বরের মধ্যে মাত্র সাড়ে ৩ পাওয়া একজন প্রার্থীকে অনিয়মের মাধ্যমে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিতে গিয়ে বিদায়ী গভর্নিং বডি এই জটিলতা সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যক্ষ নিয়োগ স্থগিত রেখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি বিষয়টি তদন্ত করছে।
তবে তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি রয়েছে ভিকারুননিসার শিক্ষক ও অভিভাবকদের।
প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষক গণমাধ্যমকে জানান, পূর্ণকালীন অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হতে যে সময় প্রয়োজন; শুধু সে সময়ে দায়িত্ব সামলানোর জন্য ফেরদৌসী বেগমকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। নিয়মিত অধ্যক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। যদিও দুর্নীতির অভিযোগে বিষয়টি তদন্ত করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাই আটকে আছে অধ্যক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়া। এমন প্রেক্ষাপটে পুরো প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব এখন ফেরদৌসী বেগমের হাতে। ভিকারুননিসার চারটি শাখার ২৮ হাজার ছাত্রীর দায়িত্ব সামাল দিতে গিয়ে তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নানা কারণে বিতর্ক উঠেছে কলেজের প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়েও।
এ ব্যাপারে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক মো. হারুন অর রশীদ বলেন, সর্বশেষ কমিটি নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেনি। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের জন্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নাম প্রস্তাব করা হয়। ভিকারুননিসা থেকে কোনো নামের প্রস্তাব না আসায় বোর্ড থেকেও কোনো আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা যায়নি।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মেয়াদোত্তীর্ণ গভর্নিং বডির অভিভাবক সদস্য ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, নিয়োগ নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড ঘটিয়েছে নিয়োগ কমিটি। গভর্নিং বডির সভায় ত্রুটিপূর্ণ এ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছিলেন তিনি। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি এখনও তার কোনো বক্তব্য নেয়নি।
এদিকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক হারুন অর রশীদের দাবি, সবার মতামত নেওয়া হয়েছে। নিরপেক্ষভাবে তদন্ত চলছে। শিগগিরই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। প্রতিবেদন প্রকাশ পেলেই সবকিছু স্পষ্ট হবে।
এসএ/