ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

যাকাত বণ্টনের সঠিক পন্থা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:৩৮ পিএম, ১৫ মে ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ০৪:৪০ পিএম, ১৫ মে ২০১৯ বুধবার

যাকাতের সুফল সম্পর্কে উপলব্ধি করতে হলে ইসলামের কতগুলো মৌলিক নীতিকে সর্বাগ্রে বুঝে নিতে হবে। ‘আল্লাহর খলিফা’ (প্রতিনিধি) হিসেবে প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব হচ্ছে পারিবারিক মর্যাদা ও ভ্রাতৃত্ববোধের ভিত্তিতে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলা, সেখানে প্রত্যেকে সামর্থ্য অনুযায়ী জীবিকা উপার্জন করবে এবং যারা অসামর্থ্য তাদের দেখাশুনা করা সবার সামষ্টিক দায়িত্ব।

মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘সে ব্যক্তি প্রকৃত মুসলমান নয়, যে তার প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে নিজের উদরপুর্তি করে।’ (তাবারানী, রায়হাকী)

হযরত আলী (রা.) বলেছেন, ‘গরীবদের জন্য যা পর্যাপ্ত প্রয়োজন তা তাদেরকে প্রদান করা ধনীদের ওপর আল্লাহ বাধ্যতামূলক করেছেন। যদি গরিবরা অভুক্ত থাকে বা বস্ত্রহীন থাকে বা কষ্টভোগ করে, তার কারণ ধনীরা তাদের বঞ্চিত করে। এমতাবস্থায় মহামহিম আল্লাহর জন্য এটাই যথোপযুক্ত যে, তিনি এদের হিসেব নিবেন এবং শাস্তি প্রদান করবেন।’

প্রফেসর উমর চাপরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, যাকাত হচ্ছে এমন পূর্ণ ধর্মীয় আঙ্গিকে একটি সামাজিক আত্ম-সহযোগিতার ব্যবস্থা যাতে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির পরও যারা নিজেদের সাহায্য করতে পারে না, সেরূপ গরীব ও দুঃস্থদের সাহায্য করা যাতে মুসলিম সমাজ থেকে দারিদ্র্য ও কৃপণতা দূর হয়। যদি যাকাত আদায়ের পরিমাণ গরীবের চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট না হয়, তা হলে সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য অন্য উপায় বের করা।

ইবনে হাযম আল জাহির মনে করেন যে, প্রতিটি দেশের ধনীদের কর্তব্য হচ্ছে দরিদ্রদের চাহিদা পূর্ণ করা এবং যাকাত যদি এ উদ্দেশ্য পূরণে যথেষ্ট না হয় তাহলে শাসকের কর্তব্য হলো দরিদ্রের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করা, শীত ও গ্রীষ্মে বস্ত্র প্রদান করা এবং রৌদ্র, তাপ ও বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা; এ ছাড়া তাদেরকে অনুকূল পরিবেশ প্রদান করা।

উমর চাপরা আরও বলেন যে, যেহেতু একজন মুসলমানের দায়িত্ব হচ্ছে নিজের উপার্জন নিজে করা যেহেতু এটাই সমীচীন হবে যে, যাকাত এমনভাবে বিতরণ করতে হবে যাতে দরিদ্ররা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয়। যাকাত হচ্ছে তাদের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা যারা নিজেদের প্রচেষ্টায় নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম নয়। অন্যদের জন্য যাকাত হবে একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা যা দ্বারা তাদেরকে পর্যাপ্ত উপার্জনের জন্য প্রশিক্ষণ, যন্ত্রপাতি ও উপকরণ সরবরাহ করা হবে। আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্প বিকাশের উৎসাহ দিতে হবে, যার মাধ্যমে লোকেরা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য যাকাতকে ব্যবহার করবে। এভাবে মুসলিম দেশগুলোতে বিরাজমান বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও বৈষম্য হ্রাসে যাকাত কার্যক্ষম না হওয়ার কোন কারণ নাই।

ইমাম হাসান আল বান্না ইসলামী সমাজের অর্থনৈতিক সংস্কার প্রসঙ্গে কুটির শিল্পকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি মনে করেন যে, কুটির শিল্প দরিদ্র পরিবারগুলোর সব সদস্যের জন্য উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে এবং বেকারত্ব ও দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়ক হবে।

ইসলামী অর্থনীতিবিদরা আত্ম-কর্মসংস্থান তথা ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশে যাকাত থেকে মূলধন সরবাহের পরামর্শ দিয়েছেন। যাকাত তহবিল এ উদ্দেশ্যে যথেষ্ট না হলে সদাকা, ওয়াকফ থেকেও এরূপে অর্থায়নে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। তৃতীয় ধাপেই কেবল সুদবিহীন ক্ষুদ্র ঋণের কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।

তথ্যসূত্র : সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট (সিজেডএম)

এএইচ/