এক পায়ের তামান্নার গল্প
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:০৫ পিএম, ১৫ মে ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ০৬:০৭ পিএম, ১৫ মে ২০১৯ বুধবার
মেয়েটির নাম তামান্না আক্তার নূরা। জন্ম থেকেই দু’টি হাত আর একটি পা নেই তার। মেয়েটি এক পা দিয়ে লিখে পিইসি ও জেএসসি পাস করে এসএসসি পরীক্ষাতেও বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-ফাইভ পেয়েছে।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া আলীপুরের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে বড় তামান্না নূরা। লেখাপড়ার প্রতি তার প্রবল আগ্রহ। তাই ছয় বছর বয়সে মায়ের কাছে পায়ের ভেতর কাঠি ও কলম দিয়ে লেখা শুরু করে। মাত্র দু’মাসের মধ্যে পা দিয়ে লেখা ও ছবি আঁকা রপ্ত করে ফেলে সে। মেয়ের এই আগ্রহ দেখে বাবা রওশন আলী তাকে ভর্তি করে দেন স্কুলে।
হুইল চেয়ারে করে প্রতিদিন স্কুলে আনা-নেয়া করেন নিজেই। এতো প্রতিবন্ধকতার মাঝেও বাবা মার কষ্টের প্রতিদান দিয়েছে তামান্না। এক পা দিয়ে লিখে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা, জেএসসি এবং সবশেষ এসএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। ধারাবাহিক এ সাফল্যে খুশি তামান্না ও তার গর্বিত পিতা-মাতা।
যখন থেকে তার জ্ঞানবুদ্ধি হয়, তখন তার মা একমাত্র সম্বল বাঁ পায়ের আঙুলের ভেতর চক দিয়ে লেখা রপ্ত করাতেন। সকাল-সন্ধ্যা পড়াতেন। এভাবে এক-দেড় বছর পর তাকে একটি প্রাইভেট স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মা-ই তাকে কোলে করে স্কুলে নিয়ে যেতেন-আসতেন। ক্লাসে বসিয়ে মা বাইরে বসে থাকতেন মেয়ের ডাকের অপেক্ষায়। হাই স্কুলে ভর্তির পর হুইলচেয়ারে বসিয়ে তাকে মায়ের মতো বাবাও কখনো কখনো আনা-নেওয়া করতেন। যতক্ষণ না তার স্কুলের পড়া শেষ হতো, ততক্ষণ মা পাশে বসে থাকেন। এ পর্যন্ত মায়ের পরিশ্রমই তার এই ফল এনে দিয়েছে বলে জানাল তামান্না।
মায়ের শেখানোর বদৌলতে পা দিয়ে শুধু লেখে না, চামচ ধরে খেতেও পারে সে। এমনকি মুঠোফোন ব্যবহার করতে পারে। যেন একটি পা-ই তার দুই হাতের সমান।
বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্ব দেখানো তামান্না প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায়ও জিপিএ ৫ পেয়েছিল। একসময় ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখত। এখন ভবিষ্যতে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে প্রশাসনের বড় কর্মকর্তা হয়ে দেশের সেবা করতে চায়।
একসময় শ্রেণি পুস্তক পাঠের বাইরে অবসরে চিত্রাঙ্কন করলেও এখন আর সেটি করা হয়ে ওঠে না। তার অবসর কাটে কোরআন শরিফ, বিভিন্ন গল্প ও কবিতার বই পড়ে।
তামান্নার বাবা বলেন, মেয়েকে বার বার বলি শিক্ষার উদ্দেশ্য চাকরী করা না, শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো জ্ঞান অর্জন করা। শত কষ্টের মধ্যেও মেয়ের সাফল্যে আমি সব দুঃখ কষ্ট ভুলে যাই।
তামান্নার এমন সাফল্যে খুশি তার সহপাঠীরাও। সহপাঠীরা বলেন, মেয়েদের ক্লাস রুম দুতালায়, তামান্না উঠতে পারেনি দেখে নিচে আমাদের সাথেই ক্লাস করতো। তামান্না পড়াশোনায় অনেক ভালো।
মেধাবী তামান্নার প্রবল ইচ্ছাশক্তি তাকে আরো বহুদূর নিয়ে যাবে এমন প্রত্যাশা তার বিদ্যালয় শিক্ষকদেরও।
এসএ/