ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

বিদেশের মাটিতে দেশের পণ্যকে তুলে ধরতে চান সাফিয়া শ্যামা

আলী আদনান

প্রকাশিত : ০২:২৭ পিএম, ১৬ মে ২০১৯ বৃহস্পতিবার

 

তার এখন একটাই স্বপ্ন। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি পণ্যকে তুলে ধরা। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশীয় পণ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে সে স্বপ্ন আটকে আছে তার।

তিনি মনে করেন, সরকার যদি কিছু সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে শুধু তার নয় তার মতো অসংখ্য ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা দেশীয় পণ্য নিয়ে প্রবেশ করাটা সহজ হবে।

যার কথা বলছি তিনি সাফিয়া শ্যামা। শুন্য থেকে উঠে আসা একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। মূলত পাট ও চামড়াজাত দ্রব্য উৎপাদন করেন তিনি। তার অধীনে রাজধানী ঢাকার বাইরে কাজ করছে প্রায় দুই হাজার কর্মী।

সাফিয়া শ্যামা যাত্রা শুরু করেছিলেন শুন্য থেকে। একদিন খালি হাতেই তিনি যুদ্ধে নেমেছিলেন। অনেক কষ্টে জমানো চার হাজার টাকা দিয়ে সেলাই মেশিন কিনেছিলেন।

সাফিয়া শ্যামার ভাষায়, এখন যারা অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলোতে খেতে যান- সেখানে চার হাজার টাকা বিল দেওয়া খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা। কিন্তু আমি একদিন মাত্র চার হাজার টাকা দিয়েই জীবন যুদ্ধে নেমেছিলাম।

তিনি (সাফিয়া শ্যামা) আরো বলেন, তখন কয়েক রাত আমি ঘুমাতে পারিনি। সেই সেলাই মেশিন বসানোর মতো কোনো জায়গা ছিল না। সেলাই মেশিন চালানোর জন্য একজন লোক রাখব ভাবছিলাম। কিন্তু সেই লোকের বেতন দেওয়ার মতো অর্থও আমার ছিল না।

মেধা ও পরিশ্রমের সমন্বয়ে যে `না` শব্দটিকে পরাজিত করা যায় সাফিয়া শ্যামা তার উদাহরণ। কয়েকটি পোশাক প্রস্তুত প্রতিষ্ঠানে উৎপাদনকারী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন তিনি। নিজের সৃজনশীল মেধাকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করতে থাকেন নিত্য নতুন ডিজাইনের পোশাক। এগুলো ২০০৩- ০৪ সালের দিকের কথা। তারপর তাকে আর পেছনে ফিরতে হয়নি।

২০০৭-০৮ সালের দিকে সাফিয়া শ্যামা পাটজাত দ্রব্য উৎপাদন শুরু করেন। তার কারখানা থেকে ৭০ টিরও বেশি নানা ধরনের পাটজাত দ্রব্য নিয়মিত উৎপাদিত হয়।

তিনি মনে করেন, আমাদের পাটের গুণগত মানের দিক বিবেচনা করলে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পাট আমরা উৎপাদন করি। সেই দিক থেকে পোশাক শিল্পের মতো বাংলাদেশি পাটজাত পণ্য বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো সম্ভব।

কেন আমরা পাটজাত পণ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে জায়গা করে নিতে পারছি না এমন প্রশ্নের জবাবে সাফিয়া শ্যামা বলেন, আমরা কাঁচামাল পাচ্ছি না। যে কাঁচামাল পাওয়া যাচ্ছে তা আমাদের কিনতে হয় অধিক দামে। কারণ কাঁচাপাট চলে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে। মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা পাটকে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে রফতানি করে দেয়। ফলে ভাল মানের পাট সেখানে চলে যাওয়ায় আমরা যেটা পাই সেটা মানসম্মত নয়। ফরিদপুর, রংপুরের পাট ভাল হয়।

সাফিয়া বলেন, সেখান থেকে একেবারে মাঠ থেকেই কাঁচা পাট চলে যাচ্ছে ভারতে। দেশের সব জায়গার পাট কিন্তু সমান মানসম্মত নয়। সেটাই দেশে থাকছে যেটা মানসম্মত নয়। আমাদের ভালো মানের পাট দিয়ে ওরা ভালো মানের পণ্য উৎপাদন করছে। যেহেতু আমরা মানসম্মত পাট পাচ্ছি না তাই আমাদের উৎপাদিত পণ্য ওদের তুলনায় পিছিয়ে থাকছে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাফিয়া শ্যামা বলেন, ভারতীয় উদ্যোক্তারা তাদের দেশীয় চাহিদা মেটানোর পরে উদ্ধৃত পণ্য রফতানি করার সুযোগ পায়। পক্ষান্তরে আমাদের কথা বলি। আমাদের তো পোশাকের বা পাটের কারখানা নেই। আমরা পোশাক বা পাট ক্রয় করে তারপর পণ্য উৎপাদন করছি। কিন্তু সরকার পাট রফতানির উপর যে বিশ পার্সেন্ট ইনসেনটিভ দিচ্ছে আমরা দেশে বসে সেই বিশ টাকা বেশি দিয়ে পাটটা কিনছি । ফলে আমাদের উৎপাদনের মোট খরচ যাচ্ছে বেড়ে। অর্থাৎ একজন ভারতীয় উদ্যোক্তা যখন একশ টাকা বিনিয়োগ করে তখন আমাকে বিনিয়োগ করতে হচ্ছে একশ বিশ টাকা। এদিক থেকে আমরা বাজারে পিছিয়ে যাচ্ছি।

সাফিয়া শ্যামা করে বলেন, এদেশে পাটজাত পণ্যের চাহিদা অনেক। কিন্তু ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার মতো সহজ মাধ্যম তেমন নেই। অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে মেলার উপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় থাকে না। কিন্তু মেলা দীর্ঘস্থায়ী বাজার সৃষ্টি করতে পারে না। ব্যবসা করতে হলে আমাদের দীর্ঘস্থায়ী বাজার লাগবে। তবে ই কমার্স সাইটগুলো এখন এক্ষেত্রে সম্ভাবনার আলো দেখাচ্ছে। আমি নিজেও ই-কমার্সের উপর গুরুত্ব দিচ্ছি।

সাফিয়া শ্যামা বলেন, দেশি বা বিদেশি বাজার প্রতিযোগিতাময়। এখানে টিকতে হলে শুধু পণ্য উৎপাদন করলে হবে না। বরং নিত্যনতুন সৃজনশীলতার উদ্ভব ঘটাতে হবে। অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে পাটজাত পণ্যের গুণগত মান যে এগিয়ে আছে তা কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে। এভাবে এগিয়ে গেলে পোশাক শিল্পের পাশাপাশি পাটজাত শিল্প হয়ে উঠবে আমাদের রফতানি আয়ের অন্যতম মাধ্যম।

নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে ঠিক কোন জায়গাটাতে দেখতে চান এমন প্রশ্নের জবাবে সাফিয়া শ্যামা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা পাটজাত পণ্য উৎপাদনে কাজ করছি। আমাদের আবেগ, ভালবাসা এখন এই পাটের প্রতি পণ্যের প্রতি মিশে আছে। বিদেশের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে সেটাই প্রত্যাশা।

আআ//