ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৫৩ পিএম, ১৬ মে ২০১৯ বৃহস্পতিবার
ঋণ খেলাপিরা মাত্র দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়েই ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারবেন। ১৬ মে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলারে এই নির্দেশনা জারি করা হয়।
পুনঃতফসিল হওয়া ঋণ পরিশোধে তারা সময় পাবেন টানা ১০ বছর। এক্ষেত্রে প্রথম এক বছর কোনও কিস্তি দিতে হবে না। এই নির্দেশনার সুবাদে ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিরাও এখন থেকে ঋণ পুনঃতফসিল করার সুযোগ পাবেন। এ সার্কুলারের মাধ্যমে দেশের ঋণখেলাপিদের নিয়মিত হওয়ার সুযোগ করে দিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিদের্শনা অনুযায়ী, খেলাপিরা ব্যাংকের টাকা ফেরত দেওয়া শুরু করলে নিয়মিত গ্রাহকদের চেয়েও খেলাপি গ্রাহকদের কম সুদ দিতে হবে। মাত্র ৯ শতাংশ হারে এই ঋণখেলাপিদের সুদ গুনতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, খেলাপিরা ব্যাংকের টাকা ফেরত দেওয়া শুরু করলে নিয়মিত গ্রাহকদের চেয়েও খেলাপি গ্রাহকদের কম সুদ দিতে হবে। চিহ্নিত এই ঋণখেলাপিদের গুনতে হবে ৯ শতাংশেরও কম সুদ।
দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো এই নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্যাংকের ঋণ অনেক ক্ষেত্রেই নিয়মিত পরিশোধ হচ্ছে না। যে কারণে ওই সব ঋণ বিরূপভাবে খেলাপি হয়ে পড়ায় ঋণ বিতরণ ও আদায় কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে ৩১ ডিসেম্বর সময়ে মন্দ বা ক্ষতিজনক মানে শ্রেণিকৃত রয়েছে এমন ঋণগ্রহীতার অনুকূলে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে পুনঃতফসিল বা এক্সিট সুবিধা দেওয়া যাবে।
সুবিধা পাবে যেসব খাত:
ট্রেডিং খাত (গম, খাদ্যদ্রব্য, ভোজ্যতেল ও রিফাইনারি), জাহাজ শিল্প (শিপ ব্রেকিং ও শিপ বিল্ডিং), লৌহ ও ইস্পাত শিল্প। অন্যান্য খাতের ব্যাংক কর্তৃক বিশেষ নিরীক্ষার মাধ্যমে চিহ্নিত প্রকৃত ব্যবসায়ী, যাদের ঋণ নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে মন্দ মানে শ্রেণিকৃত হয়েছে। এছাড়া বিশেষায়িত ব্যাংকের অকৃষি খাতের আমদানি-রফতানিতে সম্পৃক্ত শিল্পঋণ।
পুনঃতফসিলে শর্ত
সার্কুলার জারির ৯০ দিনের মধ্যে ঋণগ্রহীতাকে আবেদন করতে হবে। এ সময় পার হলে আবেদনের সুযোগ থাকবে না।
ঋণস্থিতির ন্যূনতম ২ শতাংশ হারে ডাউনপেমেন্ট নগদে দিতে হবে। এর আগের আদায় করা কিস্তির অর্থ ডাউনপেমেন্ট হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না।
কেস টু কেস বিবেচনায় ঋণ পরিশোধের সময় এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ১০ বছর। সুদ হার ৯ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে। ঋণ পরিশোধের জন্য ৯টি মাসিক কিস্তি অথবা ৩টি ত্রৈমাসিক কিস্তির মধ্যে ২টি ত্রৈমাসিক কিস্তি অনাদায়ী হলে এ সুবিধা বাতিল বলে গণ্য হবে।
পুনঃতফসিল পরবর্তী ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ব্যাংক থেকে গ্রাহক নতুন ঋণ নিতে পারবে। তবে নতুন নেওয়া ঋণ যথানিয়মে পরিশোধে ব্যর্থ হলে এই সার্কুলারের আওতায় দেওয়া সব সুবিধা বাতিল বলে গণ্য হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, খেলাপি ঋণ এককালীন এক্সিট করতে হলে এই সার্কুলারের আওতায় ঋণগ্রহীতার আবেদন পাওয়ার তারিখ হতে ৪৫ দিনের মধ্যে ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেবে। তবে যেসব ক্ষেত্রে বিশেষ নিরীক্ষার প্রয়োজন হবে, সেসব ক্ষেত্রে নিরীক্ষা প্রতিবেদন পাওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এর আগে ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে এমন আভাস দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গত ২৫ মার্চ শেরেবাংলা নগরে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের তিনি জানান, যারা ঋণ শোধ করতে না পারার ‘যৌক্তিক’ কারণ ব্যাখ্যা করতে পারবেন, তাদের মোট ঋণের ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৭ শতাংশ সুদে ওই টাকা পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হবে।
আরকে//