ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সেই নবজাতক ভাগ্যবতী গহিনের কথা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৫০ এএম, ১৭ মে ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ১২:১৯ পিএম, ১৭ মে ২০১৯ শুক্রবার

রাজধানী ঢাকার রাস্তা-ঘাটে কত শিশু, কত শিশুর বাবা-মা নেই, এতিম। রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কতজনকে এতিমখানায় রেখে আসছে। তাদের প্রতি কারও মায়া হচ্ছে না, সবার চোখ এখন ওই একজনের দিকে আর সে হচ্ছে গহিন।

সম্প্রতি রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকার শিশু হাসপাতালের একটি বাথরুমের ভেতর থেকে উদ্ধারকৃত এক নবজাতক। তারই নাম রাখা হয়েছে গহিন।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে ওই শিশুটিকে রেখে আসা হয়েছে রাজধানীর আজিমপুরের ছোটমনি নিবাসে। তুলে দেয়া হয় সেখানকার কর্মকর্তাদের হাতে।

শিশুটিকে উদ্ধারের পর ওই হাসপাতালেই ভর্তি এবং থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ছোটমনি নিবাসে নেয়ার আগে বাচ্চাটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য হাসপাতালে ভিড় জমান বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষ। বাচ্চাটিকে দত্তক নিতে হাসপাতালে আসে শত শত ফোন।

জানা গেছে, ওই শিশুটিকে দত্তক নিতে বিশাল অঙ্কের টাকাও দিতে চাচ্ছেন কেউ কেউ। আবার নিজের ফ্ল্যাট পর্যন্ত লিখে দিতে চাচ্ছেন অনেকে। তবুও শিশু গহীনের দত্তক নিতে চান অনেক নিঃসন্তান।

এদিকে শিশুটির সন্ধান পাওয়ার পর থেকেই তার দেখাশোনা করছেন শিশু হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল মাহমুদ ও তার স্ত্রী পলি বেগম। ১০ বছর আগে এই দম্পতির বিয়ে হলেও তারা নিঃসন্তান। তারাও এই শিশুটিকে দত্তক নিতে চান। তবে নিয়ম অনুযায়ী সরাসরি এভাবে হাসপাতাল থেকে কোনো শিশুকে হস্তান্তরের নিয়ম নেই বলে গহিনকে শিশুমনি নিবাসে পাঠানো হয়েছে।

পলি বেগম বলেন, ‘আমি এই মেয়েকে কাউকে দেব না। যারা ফেলে গেছে, সিসিটিভিতে তো তাদের দেখা গেছে। শুধুমাত্র যদি আসল মাকে পাওয়া যায়, তাহলে তার কাছেই আমি ওকে দেব। নয়তো আর কারো কাছে না।’

এছাড়া হাসপাতালে শিশুটিকে একনজর দেখতে ও দত্তক নিতে ছুঁটে আসা মানুষের ভিড়ে শিশুটির নিরাপত্তা দিতে হিমশিম খায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ জন্য কেবিনের বাইরে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ।

সমাজকল্যাণ অধিদফতরের কর্মকর্তা ইসরাত জাহান জানান, গত তিনদিনে বিভিন্ন মহল থেকে শিশুটিকে দত্তক নিতে শতাধিক মানুষ আবেদন করেছেন। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যোগ্য ব্যক্তির কাছে শিশুটিকে তুলে দেয়া হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের ছোট ছেলে ফারুক, সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ শিশুটিকে দত্তক নিতে ছুটে আসছেন। তারা শিশুটির নামে বিপুল অর্থ, বাড়ি, ফ্ল্যাট লিখে দিয়ে দত্তক নিতে সমাজসেবা অধিদফতরে আবেদন করেছেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, নিয়ম অনুযায়ী সরাসরি এভাবে হাসপাতাল থেকে কোনো শিশুকে হস্তান্তরের নিয়ম নেই। কোনো শিশুকে পাওয়া গেলে তাকে চিকিৎসা দিয়ে আজিমপুরের শিশু নিবাসে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখান থেকে শিশুদের দত্তক নিতে আগ্রহী দম্পতিরা পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। এরপর আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। গহিনের ক্ষেত্রে তাই করা হবে।

এরআগে ওই শিশুটির বিষয়ে শেরে বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম বলেন, গত বুধবার সকাল পর্যন্ত কেউ শিশুটিকে নিজের বলে দাবি করেনি। তবে শিশুটি জন্য রাত থেকে শত শত ফোন আসছে। সকাল থেকে আমি নিজেই ১০০’র বেশি ফোন রিসিভ করেছি। সবাই শিশুটিকে দত্তক নিতে চাচ্ছেন। আমরা আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী তদন্তের কাজ করছি।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে মানুষের ভিড় বেড়ে যাওয়ায় শিশুটির স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিরাপত্তায় ওই কেবিনের বাইরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। চিকিৎসক ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।

পুলিশের তেজগাঁও জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মাহমুদ হাসান বলেন, শিশুটির বাবা-মাকে খুঁজতে রাতে ডিসি-তেজগাঁও-ডিএমপি ফেসবুক পেজে ছবিসহ একটি পোস্ট দেওয়া হয়। এরপর থেকে অনেক ফোন আসছে শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য। অনেকে ফেসবুক পোস্টের নিচেই তাদের দত্তক নেয়ার জন্য নাম-ঠিকানা ও সিরিয়াল দিয়ে রাখছেন। আমরা তার বাবা-মাকে খুঁজে বের করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পরবর্তীতে শিশু আইনে আদালত যা সিদ্ধান্ত দেবে পুলিশ সেটা মেনেই কাজ করবে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত গত ১৪ মে সন্ধ্যায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকার শিশু হাসপাতালের একটি বাথরুমের ভেতর থেকে এক নবজাতককে উদ্ধার করা হয়।

চিকিৎসকরা বলছেন, ‘তারা যখন বাচ্চাটিকে পেয়েছেন তখন তার বয়স ছিল তিন দিন।’ পরে ওই কন্যাশিশুর নাম রাখা হয় ‘গহীন’। শিশুটি সুস্থ রয়েছে বলেও জানান শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শেখ শরীফ শাহীন।