ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

রমজান উপবাসের উৎসব নয়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৪১ পিএম, ১৭ মে ২০১৯ শুক্রবার

রোজা ফরজ হয়েছিল দ্বিতীয় হিজরীতে। রামাদান নামকরণ করার আগে এ মাসের নাম ছিল নাতিক। নাতিক মানে হচ্ছে ধুলিসাৎ করে দেওয়া। অন্য দিকে রমজ মানে হচ্ছে পুড়িয়ে দেওয়া, জ্বালিয়ে দেওয়া। মরুভূমিতে পাথরের উপর রৌদ্রতাপ পড়লে তা যখন গনগনে চুল্লীর মত উত্তপ্ত হয় তখন তাকেও রমেজ বলে। আরবরা হুজুর পাকের (সা:) জামানার আগে বলির পশুকে উত্তপ্ত পাথরের উপর রেখে দিত। এতে পশিুটি মারা যেত-এটাই ছিল তাদের বলিদান।

তবে এ মাসটির তাৎপর্য গভীর। সে কথা উপলব্দির চেষ্টা করতে হবে। এ মাসে শুধু কোরআন নয়, আরও তিনটি ধর্মগ্রন্থ নাজিল হয়েছিল। জবুর নাজিল হয়েছিল রমজানের ৩ তারিখে, তাওরাত নাজিল হয়েছিল রমজানের ৭ তারিখে এবং ইঞ্জিল বা বাইবেল নাজিল হয়েছিল রমজানের ১৭ তারিখ। আর শবে ক্বদরে নাজিল হয়েছিল কোরআন।

রমজানের ২০ তারিখের পর বেজোড় রাতে শবে ক্বদরের খোঁজ করতে হবে। হযরত আলী (রা:) বলেছেন আল্লাহতায়ালা শবে ক্বদরকে লুকিয়ে রেখেছেন। হযরত ফাতেমা জানতে পেরে জিদ করাতে হযরত আলী (রা:) বললেন, ‘সুরা ক্বদর ‘লাইলাতুল ক্বদর’ কথাটি তিনবার এসেছে। লাইলাতুল ক্বদর কথাটিতে মোট ৯টি অক্ষর আছে। অতএব ৯কে ৩ দিয়ে গুন করলেই পেয়ে যাবে রহস্যের চাবি। সে অর্থে শবে ক্বদর ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান আন্দাজ করা যায়। যা হোক, এ মাসেই হুজুর পাক (সা:) নবুওতের এলান করেছিলেন। সেদিক থেকে এ মাসের গুরুত্ব অপরিসীম।

সুরা বাকারার ১৮৩ নং আয়াতের দিকে তাকালে দেখা যায় রোজা কোন নতুন বিধান নয়। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগন! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হলো। যেমন দেওয়া হয়েছিল তোমাদের পূর্বসূরীদের যাতে তোমরা সাবধানতা অবলম্বন করতে পার। এখানে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। জীবনের এই অন্তহীন প্রবাহ-সুখ-দুঃখ, ভোগবিলাস নিয়ে যে জীবন, সে জীবন মানুষকে জীবন প্রবাহের উৎসবমুখ থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। মাওলানা রুমি বলেছেন, যে জিনিসটি তোমাকে আল্লাহর ভালোবাসা থেকে দূরে সরিয়ে নেয় তারই নাম দুনিয়া। কিন্তু এ মাসের সওম অর্থাৎ এ মাসের সাধনা মানুষকে ফিরিয়ে আনবে ওই পথে যে পথে তোমার গন্তব্য রয়েছে। এখানে কিন্তু উপবাসের কথা বলা হয়নি। সাধানার কথা বলা হয়েছে। সওম মানেও সাধনা, উপবাস নয়। এ মাসের এ সাধনার ফজিলত বর্ণনার অতীত। শুধু একটি কথাই বলি এ মাসে যে পথের উপর থেকে অন্যে কষ্ট পাবে মনে করে একটি পাথর সরিয়ে দেয় সে একটি পুরো হজের সওয়াব পাবে।

শেষ কথা হচ্ছে রমজানে তোমরা সেবার উদ্দীপ্ত হও। সেবার মাঝে পরমাত্মাকে পাবার চেষ্টা কর। হযরত যায়েদ (রা:) একবার হুজুর পাক (সা:) কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন- হুজুর, আল্লাহকে জীবনের কোন কোন স্থানে পাওয়া যাবে?

হুজুর পাক (সা:) বললেন, ‘যায়েদ তুমি কি মানুষের সেবা কর?’ যায়েদ বললেন, হুজুর করি। তখন রাসূল (সা:) বললেন, ‘দুস্থ মানুষকে সেবা কর, সেখানেই আল্লাহকে পাবে। হুজুর পাক (সা:) আরও বললেন, ‘যেখানে মাসুম, নিষ্পাপ শিশু খেলা করছে সেখানে আল্লাহকে পাবে। আর পাবে তার কাছে যিনি সব দুঃখ-কষ্টে আল্লাহর ওপর বিশ্বাসী, ধৈর্যশীল।

রমজান উপবাসের উৎসব নয়-রমজান হচ্ছে মানবতার আলোকে আলোকিত হবার সাধনা। আর এ সাধনা যখন পূর্ণ হবে তখনই কোরআনের সে কথা তোমার জীবনে সত্য হয়ে উঠবে। আল্লাহ সুরা বাকারার ১৮৬ নং আয়াতে বলেছেন, ‘আমার বান্দারা যখন আমার সম্পর্কে প্রশ্ন করে, আমি তো নিশ্চয়ই নিকটে।’ আল্লাহ আরও বলেছেন, ‘আহবানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে তখন আমি তার আহ্বানে সাড়া দেই।’

সূত্র: হযরত সৈয়দ রশীদ আহমদ জৌনপুরি’র (রহ.) সংলাপ সমগ্র বই থেকে সংগৃহীত।

 

এমএস/ এসএইচ/