ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৪ নভেম্বর ২০২৪,   কার্তিক ৩০ ১৪৩১

বিশ্বকাপের আগে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় বাংলাদেশের

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:০০ এএম, ১৮ মে ২০১৯ শনিবার

ত্রিদেশীয় সিরিজ ও অন্য টুর্নামেন্ট মিলে ২০০৯ সাল থেকে ছয়টি ফাইনাল খেলেও ট্রফি ছুঁতে পারেনি বাংলাদেশ দল। রানার্সআপ হয়েই আগের ছয়বার সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে টাইগারদের। তাই অনেকেই ধরে নিয়েছিল ফাইনাল বাংলাদেশের জন্য ‘অপয়া’। কিন্তু সপ্তমবার ফাইনালে এসে লাকি সেভেন ধরা দিয়েছে বাংলাদেশের কাছে।

শুক্রবার ডাবলিনে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো কোনও টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতলো বাংলাদেশ। এদিন শুরুটা করেছিলেন সৌম্য সরকার। আর শেষ করলেন মোসাদ্দেক। মাঝে মুশফিক ঝড়। সবমিলিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পাহাড়সম টার্গেট সহজেই পার করলো টাইগাররা।

ক্রিকেট ইতিহাসে এটিই প্রথম ত্রিদেশীয় সিরিজ জয় বাংলাদেশের, তাও আবার বিদেশের মাটিতে। স্বভাবতই বিশ্বকাপের আগে যে এই জয় এককথায় টনিকের কাজ করবে বাংলাদেশের কাছে, তা আর বলার আপেক্ষা রাখে না। জোগাবে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস।

যাইহোক, এ দিন টসে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠান বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। বৃষ্টিবিঘ্নিত ফাইনালে ওভার সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২৪-এ। দুই ওপেনার শাই হোপ ও সুনীল আমব্রিসের দ্রুত অর্ধশতরানে হাইভোল্টেজ ফাইনালে ভালো জায়গায় পৌঁছে যায় ক্যারিবিয়ানরা।

২০ ওভার ১ বোলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান যখন বিনা উইকেটে ১৩১, ঠিক তখনই ম্যাচে বিঘ্ন ঘটায় বৃষ্টি। বৃষ্টি বন্ধ হলে ফের শুরু হয় খেলা। ২৪ ওভারে শেষ পর্যন্ত ১ উইকেট হারিয়ে ১৫২ রান তোলে ক্যারিবিয়ানরা। অর্থাৎ পুনরায় খেলা শুরু হলে বাংলাদেশ বোলারদের দুরন্ত কামব্যাকে বাকি ২৩ বলে মাত্র ২১ রান তুলতে সমর্থ হয় ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানরা। ৬৪ বলে ৭৪ রান করে মেহদি হাসানের শিকার হন হোপ। ৭৮ বলে ৬৯ রানে অপরাজিত থাকেন আমব্রিস। ডারেন ব্র্যাভো অপরাজিত থাকেন ৩ রানে।

আর ক্যারিবীয়দের দেওয়া ২১০ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে তামিম-সৌম্য ওপেনিং জুটি ঝড়ো সূচনা এনে দেয় বাংলাদেশকে। তবে সৌম্য বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন। তামিম দলীয় ৫৯ রানে ব্যক্তিগত ১৮ রানে বিদায় নেন। এরপর সাব্বির রহমান শূন্য রানে বিদায় নেন। 

২৭ বলে ৫০ রান পূর্ণ করে টানা তৃতীয় ফিফটি তুলে নেন সৌম্য। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৪৯ রান যোগ করেন সৌম্য ও মুশফিক। ৪১ বলে ৯টি চার ও ৩টি ছয়ে ৬৬ রান করে বিদায় নেন সৌম্য। মুশফিকও হাত খুলতে শুরু করেন। তবে ২২ বলে ৩৬ রান করে দলীয় ১৩৪ রানে বিদায় নেন তিনিও। মোহাম্মদ মিঠুন ১৭ রান করে আউট হন দলের রান যখন ১৪৩। সেসময় কিছুটা চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। 

কিন্তু এরপরই সব আলো নিজের দিকে টেনে নেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ম্যাচের কঠিন সমীকরণটা একাই সহজ করে দেন তিনি। ক্যারিবীয় বোলাদের ওপর রীতিমতো ঝড় বইয়ে দেন মেসাদ্দেক। ফ্যাবিয়ান অ্যালেনের করা ২২তম ওভারে মোসাদ্দেক একাই ২৫ রান তুলে ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। ২০ বলে ৫০ রান করে বাংলাদেশের পক্ষে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ডটি নিজের করে নেন তিনি।

ফলে ৭ বল হাতে রেখেই ২১০ রানের টার্গেট টপকে যায় টাইগাররা। আর এর মধ্য দিয়ে প্রথম কোনও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে শিরোপার স্বাদ পেল বাংলাদেশ। ২৪ বলে ৫২ রানে অপরাজিত থাকা মোসাদ্দেকের ইনিংসটি ২টি চার ও ৫টি ছয়ের মারে সাজানো ছিল। পঞ্চম উইকেট জুটি ৭০ রানে অবিচ্ছিন্ন থাকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের গ্যাব্রিয়েল ও রেইফার ২টি এবং অ্যালেন ১টি উইকেট নেন।  

দুরন্ত ইনিংসের জন্য ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হন মোসাদ্দেক হোসেন। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের শাই হোপ সিরিজ সেরা হয়েছেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২৪ ওভারে ১৫২/১ (হোপ ৭৪, আমব্রিস ৬৯*, ব্রাভো ৩*; মাশরাফি ৬-০-২৮-০, সাইফ ৫-০-২৯-০, মুস্তাফিজ ৫-০-৫০-০, মোসাদ্দেক ২-০-৯-০, মিরাজ ৪-০-২২-১, সাব্বির ২-০-১২-০)।

বাংলাদেশ: ২২.৫ ওভারে ২১৩/৪ (তামিম ১৮, সৌম্য ৬৬, সাব্বির ০, মুশফিকুর ৩৬, মিঠুন ১৭, মাহমুদউল্লাহ ১৯*, মোসাদ্দেক ৫২*; নার্স ৩-০-৩৫-০, হোল্ডার ৪-০-৩১-০, রোচ ৫-০-৫৭-০, গ্যাব্রিয়েল ৩-০-৩০-২, রিফার ৩.৫-০-২৩-২, অ্যালেন ৪-০-৩৭-১)।