পেপটিক আলসার হলে রোজা না রাখা কতটা যুক্তিসঙ্গত? [ভিডিও]
অধ্যাপক ডা. ফিরোজ কবির
প্রকাশিত : ০৪:০৬ পিএম, ১৮ মে ২০১৯ শনিবার
রমজান এসেছে। আমরা সবাই সিয়াম পালন করছি। একটু ব্যতিক্রমী মাস হওয়ায় অনেক কিছুই ব্যতিক্রম ঘটে বসে, বিশেষ করে পেটের বিভিন্ন সমস্যা। এ ক্ষেত্রে পেপটিক আলসার একটি বড় সমস্যা। এছাড়াও আরও অনেক সমস্যা আছে এগুলো পেয়ে বসে। পেপটিক আলসার আছে, এই অজুহাতে অনেকে রোজা রাখেন না। এটা কতটা যুক্তিসঙ্গত? জানালেন ইউ এস বাংলা মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ফিরোজ কবির।
আসলে পেপটিক আলসার হওয়ার জন্য দুইটি কারণ। যথা- জেনারেল আলসার এবং গ্যাসট্রিক আলসার।
যেমন- কিছু কিছু লোকজন আছেন, যারা খালি পেটে থাকলে ব্যথাটা বেশি হয়। আর কিছু লোকের আছে যে খাওয়ার পরে ব্যথাটা বেশি হয়। তো রমজান মাসে আসলে যেটা হয় যে খালি পেটে যারা থাকে, তাদের কিন্তু পেপটিক আলসারের সমস্যাটা খুবই কম। কারণ যখন খাবারটা সে খাচ্ছে না, তখন এসিড তার তৈরি হচ্ছে না।
কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। সমস্যা হচ্ছে, ইফতারির পরে। যখন সে ইফতারি করল, তখন তো সে হঠাৎ করে খালি পেটের মধ্যে খাবারদাবার খেল, অনেকে আছে ভাজাপোড়া খায়। আর এর সবগুলোই আলসারের উপর দিয়ে যাচ্ছে। এবং সবগুলোই যাওয়ার পরে যদি হঠাত করেই তার অনেক সময় যে পারফিশন নিয়ে চলে আসতে পারে আমাদের কাছে। মানে ফুটো হয়ে যাওয়া। নাড়ীর ছোট একটা অংশ ফুটো হয়ে যাওয়া।
তবে এ জাতীয় রোগ আমাদের দেশে এখন অনেক কমে গেছে। কারণ এসিড কমানোর জন্য যে ওষুধগুলো বাংলাদেশ আছে, তা খুবই এভেলএভেল; সব জায়গায়ই পাওয়া যায়।
যদি কারও ব্লিডিং পেপটিক আলসার থাকে, তারা কি রোজা রাখতে পারবে?
আসলে এ ক্ষেত্রে তার রক্ত বের হয়। এ সমস্ত ক্ষেত্রে রমজানের এ সময়টায় তার সিয়াম সাধনা না করাই ভালো। কেন? এক নম্বর হচ্ছে, যদি এ রকম একটি ফর্ম থাকে যে সব সময় রক্তক্ষরণ হয়, তখন তো তাকে সব সময় একটা চিকিৎসার মধ্যে থাকতে হয়। এখন সেখানে যদি এমন হয়, একটা লম্বা সময় তাকে চিকিৎসা ছাড়া রাখতে হয়, তখন তার সমস্যা বেশি হয়ে যেতে পারে। কিন্তু যদি এমন হয় যে সে মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আছে, তবে এই রমজান মাসটা তার জন্য অনেক উপকারি। কারণ সে খাচ্ছে না। ফলে এসিড কম হচ্ছে। কিন্তু যদি সমস্যা বেশি হয় তবে রোজা রাখার ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অন্যদিকে, ধুমপান পেপটিক আলসারের কারণ না হলেও পেপটিক আলসার বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই ধুমপান ত্যাগ করার একটা অন্যতম সময় রমজান মাস। যেহেতু দিনের একটা বড় সময় সে ধুমপান করছে না, তাই পরে তো আর ধুমপান করার সময় থাকছে না। তো মানসিকভাবে সে একটু শক্ত হলেই আশা করা যায় এ মাসে সে ধুমপান ত্যাগ করতে পারবে।
আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের যে ট্র্যাডিশন্যাল ইফতার যেমন ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত জিনিস এগুলো সবই কিন্তু এসিড তৈরি করে। এগুলো আলসার তৈরি করার মতো নিয়ামক। তাই ইফতারের সময় পানি জাতীয় জিনস যতো বেশি খাওয়া যায়, ততোই ভালো; ফল খাওয়া ভালো। যেমন- কলা, তরমুজ, আপেল, কমলা, খেজুর ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। আর ইফতারির সময় প্রচুর পরিমাণে পানি খেলে আলসার থেকে বিরত থাকা যায়।
কিন্তু আমরা যদি খ্যাদ্যাভ্যাসটা পরিবর্তন না করি তবে কিন্তু আলসারটা আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আর এটা কিন্তু একটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি যে, রমজান মাসে যেহেতু সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমাদের প্রায় অর্ধেক সময় আমরা রেস্ট দেই, তাই এটার ফলে যেটা হয় যে আলসার যেটা যেখানে আছে সেটা উপরে আস্তে আস্তে নিরাময় হয়। তাই রমজান মাসে যাদের আলসার আছে, তারা যদি ঠিক মতো চলে তবে আস্তে আস্তে তাদের আলসার নিরাময় হয়ে যাবে।
পেপটিক আলসারের জন্য স্ট্রেস একটা বড় ফেক্টর। রমজান মাস যেহেতু সিয়াম সাধনার মাস, সেহেতু সবাই মানসিকভাবে অনেক ভালো থাকে। সে ক্ষেত্রেও এই আলসার থেকে নিরাময় পাওয়ার জন্য তার দুই দিক থেকেই কাজ করছে।
শুধু আলসার নয়, এ সময় ব্লাস সুগার কমে যায়, ব্লাড প্রেসার কমে যায়। অর্থাৎ সব দিক দিয়েই রমজান একটা আশীর্বাদ নিয়ে আসে।
(শ্রুতি লিখন করেছেন আব্দুল করিম)