ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

‘আমার বয়স কত কইতে পারি না’

নিলয় মামুন :

প্রকাশিত : ০৭:১৮ পিএম, ১৯ মে ২০১৯ রবিবার

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার ছেলে রুহুল আমিন। বয়স ১২ থেকে ১৩ হবে। এখনই তার উপর চেপে বসেছে সংসারের বোঝা। কারণ পরিবারে চার ভাই বোন, অভাব অনটনের সংসার। বাবার একার আয়ে চলতো সংসার। এরই মধ্যে হঠাৎ মায়ের মৃত্যু। জীবনের এই কঠিন সময়ে রুহুল আমিন চলে আসে ঢাকায়। প্রায় পাঁচ বছর আগে বাবার সঙ্গে ঢাকায় এসে শুরু করে ক্ষুদ্র ব্যাবসা। ব্যাবসাটা এমন, আজ এখানে তো কাল ওখানে। কারণ রাস্তার পাশে ফুটপাতের ব্যাবসা ক্ষণস্থায়ী।

বিমানবন্দর এলাকার আশকোনায় রাস্তার পাশে ছোট্ট চকির উপর দোকান তাদের। যেখানে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী- আয়না, সুই, চিরুনীসহ বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে সে। ঢাকায় এসেই বাবার এই ছোট্ট ব্যাবসায় সহযোগীতা করছে সে।

ঠিক যে বয়সে স্কুলের বারান্দায় থাকার কথা ছিল, তখন সে বাবার সঙ্গে কর্মজীবনে ঢুকে পড়েছে। স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে এখন সে কর্মজীবী শিশু।

কেনো স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেছে? জানাতে চাইলে সে জানায়, ‘তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছে সে। তারপর পড়াশুনা বন্ধ করে দেয়। কারণ তার বাবার সেই সামর্থ নেই পড়াশুনা করানোর। এ জন্য স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় অনেক আগেই। চার ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট সে। বাবার সঙ্গেই থাকে। অন্য ভাই বোনের মধ্যে বড় ভাই ট্রাকের ড্রাইভার। সে তার মতো আলাদা থাকে। একটা বোনের বিয়ে হয়েছে। অন্য বোনের এখনো বিয়ে হয়নি।’

ব্যবসা যদি ভালো হয় তবে দোকানে দৈনিক বিক্রি হয় এক হাজার টাকার মত। যাতে আয় হয় এক থেকে দেড়শ’ টাকা। আর তা দিয়েই চলে তাদের সংসার।

রুহুল যখন কথা বলছিলো, মাথার উপর তখন সূর্যের উত্তাপ। রোদের কারণে ঘামছিলো সে। ঘাম মুছতে মুছতে সে জানালো,‘মানুষ বেশিরভাগ এসে দেখে চলে যায়। কেনে খুব কম।’

রোদ বৃষ্টি উপেক্ষ করে ফুটপাতে বসে থাকতে কষ্ট হয় না? এমন কথার জবাব চুপ থাকে সে। তারপর লাজুক লাজুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে সে বলে- ‘কষ্ট তো হয়ই। কষ্ট না করলে চলবে কি করে!’

আনুমানিক ১২-১৩ বছর হবে রুহুল আমিনের। কিন্তু সে নিজেই জানেনা তার বয়স কত। বয়সের কথা জিজ্ঞাস করলে সে বলে- ‘আমার বয়স কত তা কইতে পারিনা’।

নিজের বয়স না জানলেও টাকা রোজগার করে নিজের পেট চালাতে হবে, এটা সে ভালো ভাবেই রপ্ত করেছে। তাই রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে পথচারী মানেুষের দিকে চেয়ে থাকে সে, এই বুঝি কোউ একটা কিছু কিনে নিলো, সেই আশায়!’

এই শহরে এমন করে কত দিন! এখানে টিকে থাকা তো অনেক কঠিন!

এমন প্রশ্নের জবাবে সে বলে, ‘হ হেইডা তো জানি। কিন্তু কি করুম কন?’

ভবিষৎতে কি করতে চায় এমন প্রশ্নে সে বলে, ‘কি হবে তা তো জানিনা, আল্লাহ কপালে যা রাখছে তাই হবে। তবে ইচ্ছে আছে বাপের লগে থাইকা কিছু একটা করার।’

এসএ/