ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কুরআনে আল্লাহ অনুশোচনা নিয়ে কি বলেছেন?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:৪৮ পিএম, ২১ মে ২০১৯ মঙ্গলবার

আমরা প্রতিদিন অনেক কাজ করে থাকি। এর মধ্যে ভাল যেমন আছে তেমনি মন্দ কাজও আছে। রাতে কোনো এক সময়ে নির্জনে একাকী হয়ে দেখে নেই প্রতিদিনের কাজগুলো। খারাপ কাজগুলোর জন্য নিজের ভেতরে একধরনের অনুশোচনা আসে। আল্লাহর কাছে এই অনুশোচনা প্রিয়।

বঞ্চিত, অবহেলিত বা অধঃপতিত মানুষ যদি কোরআনের মর্মবাণীকে অনুধাবন করতে পারে, অনুসরণ করতে পারে, তাহলে সেও পরিণত হবে যথার্থ মানুষে, সফল মানুষে, আলোকিত মানুষে। তাই দেখে নেই কুরআনে আল্লাহ অনুশোচনা নিয়ে কি বলেছেন :

‘এরপর আল্লাহ এক কাঁক পাঠালেন। কাঁক মাটির নিচে লাশ কীভাবে লুকানো যায় সেই প্রক্রিয়া দেখানোর জন্যে মাটি খুঁড়তে লাগল। তখন কাবিল বলল, আমি কি এ কাঁকের মতোও হতে পারলাম না, যাতে আমার ভাইয়ের লাশ লুকাতে পারি! তারপর অনুশোচনায় তার মন ভরে গেল।’ (সূরা মায়েদা ৩১)

‘এতে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত করবে না। (আর হে নবী! ওদের বলো) নিশ্চয়ই আমি তাঁর কাছ থেকে তোমাদের কাছে এসেছি সতর্ককারী ও সুসংবাদ বহনকারীরূপে। তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে পাপের জন্যে ক্ষমা চাও, ভুলের জন্যে অনুশোচনা করে তাঁর কাছে ফিরে এসো। তিনি ইহাকালে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত তোমাদের সুখী জীবন উপভোগ করতে দেবেন। আর (পরকালীন জীবনে) অনুগ্রহ পাওয়ার যোগ্য প্রত্যেককে নিজ নিজ অবদান অনুসারে অনুগ্রহে ভূষিত করবেন। আর যদি তোমরা (সত্য থেকে) মুখ ফিরয়ে নাও, তবে মহাবিচার দিবসে আমি তোমাদের জন্যে ভয়ানক আজাবের আশঙ্কা করছি।’ (সূরা হুদ ২-৩)

‘আল্লাহ যদি অন্যায় ও বাড়াবাড়ির জন্যে মানুষকে সঙ্গে সঙ্গেই পাকড়ও করতেন, তবে জমিনে কোনো চলমান প্রাণীই এ থেকে রেহাই পেত না। কিন্তু তিনি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাদের সুযোগ দেন (চিন্তাভাবনা ও অনুশোচনা করার জন্যে)। কিন্তু নির্ধারিত সময় এলে তখন এটাকে কেউ বিলম্বিত বা ত্বরান্বিত করতে পারে না।’ (সূরা আন-নহল ৬১)

‘তবে যে অনুশোচনা করে, বিশ্বাস করে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে চলে তার প্রতি আমি সবসময়ই ক্ষমাশীল।’ (৮২)

‘আল্লাহ (প্রার্থণা কবুল করে) বললেন, ওদের কৃতকর্মের জন্যে ওরাই অনুশোচনা করবে।’ (সূরা মুমিনুন ৪০)

‘একদিন লোকজন যখন অলস সময় কাটাচ্ছিল তখন সে শহরে প্রবেশ করল। সে দেখল, দু’জন লোক মারামারি করছে। একজন তার সগোত্রীয়, অন্যজন বিপক্ষ দলের। সগোত্রীয় লোকটি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মুসার সাহায্য চাইল। মুসা এক ঘুষি মারল এবং প্রতিপক্ষের লোকটি মারা গেল। তখন মুসা (মনে মনে অনুশোচনা করে) বলল, এতো শয়তানি কাজ হয়ে গেল। নিঃসন্দেহে শয়তান আমার প্রকাশ্য শত্রু ও বিভ্রান্তকারী।’ (সূরা কাসাস ১৫)

অনুশোচনাকারী বান্দার জন্যে স্রষ্টার নিদর্শন : ‘ওরা কি ওদের সামনে ও পেছনে, মহাকাশ ও পৃথিবীতে যা-কিছু আছে তার প্রতি লক্ষ্য করে না? আমি ইচ্ছা করলে জমিন ওদের গ্রাস করে ফেলতে পারে, আকাশের অনেক কিছু খণ্ডে খণ্ডে ওদের ওপর ভেঙে পড়তে পারে। এর মধ্যে অবশ্যই শিক্ষণীয় নিদর্শন রয়েছে সেই বান্দাদের জন্যে, যারা (অনুশোচনা করে) তাঁর দিকে ফিরে আসে।’ (সূরা সাবা ৯)

অনুশোচনা না করার পরিণাম : ‘হে নবী! সত্য অস্বীকারী ও মুনাফেকদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সংগ্রাম করো। ওদের মোকাবেলায় সবসময় অনঢ় অটল থাকো। আর (ওরা যদি তওবা বা অনুশোচনা না করে, তবে) ওদের নিবাস হবে জাহান্নাম। (হায়!) এই পরিণতি কতই না করুণ!’ (সূরা তওবা ৭৩)

‘(হে নবী!) সত্য অস্বীকারকারীরা যদি তোমাকে অস্বীকার করে (তাহলে মনে রেখো), ইতোপূর্বে নূহ, আদ, সামুদ, ইব্রাহিম ও লুতের সম্প্রদায়ও তাদেরকে অস্বীকার করেছিল। মাদিয়ানবাসীরাও মানেনি তাদের রসুলকে। মুসাকেও ফেরাউন বলেছিল, মিথ্যুক। আমি সত্য অস্বীকারকারীদের (অনুশোচনার জন্যে) অবকাশ দিয়েছিলাম, পরে তাদের দিয়েছি কঠিন শাস্তি।’ (সূরা হজ ৪২-৪৪)

‘অতএব হে নবী! সত্য অস্বীকারকারী ও মুনাফেকদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সংগ্রাম করো এবং ওদের ব্যাপারে দৃঢ় হও। (অনুশোচনা না করলে) ওদের আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম। আর চূড়ান্ত গন্তব্য হিসেবে তা কতই না নিকৃষ্ট!’ (সূরা তাহরিম ৯)

যখন অনুশোচনা কোনো কাজে আসবে না : ‘তখন ওদের বলা হবে, তোমরা যেহেতু সীমালঙ্ঘন করেছিলে, তাই আজকের অনুশোচনা তোমাদের কোনো উপকারে আসবে না। তোমাদেরকে একসঙ্গেই শাস্তি ভোগ করতে হবে।’ (সূরা জুখরুফ ৩৯)

এএইচ/