‘ভেজালের বিষয়টি একটি চক্রে আবদ্ধ’
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:৩২ পিএম, ২২ মে ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ০৬:৪২ পিএম, ১৪ নভেম্বর ২০২০ শনিবার
বর্তমানে দেশের অন্যতম আলোচিত বিষয় ‘খাদ্যে ভেজাল’। দুর্নীতি, খাদ্যে ভেজাল, জালিয়াতিসহ নানা ধরণের অপরাধ দমনে একের পর এক আপোষহীন অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে দেশবাসীর কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। সম্প্রতি তিনি মুখোমুখি হয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইনের।
খাদ্যে ভেজাল প্রসঙ্গে সারওয়ার আলম বলেন, ‘খাদ্যে ভেজাল এ বিষয়টি বর্তমানে সবচেয়ে বেশি চর্চিত। অভিযানে গিয়ে আমরা নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখিন হচ্ছি। প্রতিদিনই নতুন নতুন কায়দায় খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার বিষয়টি দেখা যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘পণ্য বিক্রেতারা সবচেয়ে বেশি জ্ঞাত সাড়ে খাদ্যে ভেজাল দিয়ে থাকে। এ ভেজালের বিষয়টি চক্রের মতো। যেমন-অনেক সময় একজন চাষী জানে না জমিতে কতটুকু ক্যামিকেল ব্যবহার করতে হবে। তাই তারা অনেক সময় অধিক হারে ক্যামিকেল ব্যবহার করে। এই ক্যামিকেল দেওয়া খাবার আমরা খাচ্ছি।’
নামী-দামী প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতা:
সারওয়ার আলম বলেন, ‘দোকানে অনেক সময় মোয়াদউত্তীর্ণ ভোগ্যপণ্য বিক্রি করা হয়। এ পণ্যগুলো সাধারণত লিভারের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। মাছের খাদ্য এবং মুরগীর খাবারে ট্যানারির বর্জ্য দেওয়া হয়। ট্যানারির বর্জ্যে থাকা মারাত্মক বর্জ পদার্থ মানব শরীরে বিরুপ প্রভাব ফেলে।’
‘ভোগ্যপণ্যকে মানুষের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্য রং ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও মেয়াদউত্তীর্ণ ভোগ্য পণ্যে আবার তারিখ লাগিয়ে বিক্রি করা হয়। রেস্টুরেন্টে যে চিকেন বিক্রি করা হয় এগুলোকে মুখরোচক করার জন্য বিভিন্ন ধরণের ক্যামিকেল ব্যবহার করা হয়। বাচ্চাদের খাবারেও ভেজাল দেওয়া হচ্ছে। -যোগ করেন তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে ভেজাল বিরোধী অভিজানে অনেক নামী-দামী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো শুধু আর্টিফিশিয়ালভাবে তৈরি করা হয়। কিন্তু এগুলো বিক্রির জন্য বাহারী বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি করা, খাদ্যে ভেজাল দেওয়া বিষয়টি দেখা হয়।
খাদ্যে ভেজাল দেয়ার শাস্তি:
শাস্তির বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, ‘ভেজালপণ্য বিক্রি, মিথ্যা বিজ্ঞাপন, ওজনে কারচুপি, অতিরিক্ত মূল্য আদায়সহ ভোক্তার অধিকার ক্ষুণ্ন হলেই আইন অনুযায়ী শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা করে থাকি। দোকানদারের পাশাপাশি দোকানে যে মাল সরবরাহ করে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে কিছু কিছু বিদেশী পণ্যেও মেয়াদের বিষয়ে হেরফের দেখা গেছে। এ ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে যে পথে মাল আমদানী করা হয়, তথা বন্দরে এর নজরদারি বাড়াতে হবে। তাহলে এর লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে।’
সারওয়ার আলম বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকলেও ব্যবসায়ীরা এ ব্যপারে সচেতন নন। তাই গত এক দশকে খাবারের ভেজাল বৃদ্ধি পেয়েছে। দিন দিন এর প্রবণতা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এখন আগের চেয়ে অভিনব কায়দায় খাবারে ভেজাল দেওয়া হচ্ছে। পূর্বে দুধে ভেজাল হিসেবে আমরা জনাতাম শুধু পানি মিক্স করার বিষয়টি। কিন্তু এখন রাসায়নিক ব্যবহার করে দুধে ভেজাল দেওয়া হয়।
ভেজাল দেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধির পেছনে ব্যবসায়ীদের মনমানসিকতাও দায়ী । তারা সাধারণত আল্প সময়ে অনেক টাকা পয়সার মালিক হতে চান। যেভাবেই হোক তাদের সম্পদ বাড়াতেই হবে।
এ ক্ষেত্রে কার ক্ষতি হলো না হলো তার তোয়াক্কা করছে না। যে নিজে ভেজাল দিচ্ছে সে ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে জানে, কিন্তু মানে না।’
অভিযান ও গোপনীয়তা:
সারওয়ার আলম বলেন, ‘অভিযানের আগে আমরা সাধারণত কোনো রকম জানাজানি করি না। এমনকি আমাদের ড্রাইভারও জানে না যে কোথায় অভিযান পরিচালনা করতে যাব।’
পণ্য বিক্রির আগে পণ্যের গায়ে তিনটি বিষয় উল্লেখ করতে আমরা জোর দিয়েছি। এর মধ্যে উৎপাদন, প্যাকেটজাত এবং মেয়াদউত্তীর্ণের তারিখ যোগ করা।
সম্প্রতি আমি নিজে অভিযান পরিচালনা করতে মাংসের বাজারে গিয়েছি। সঙ্গে আমি বাজারের ব্যাগ নিয়েছি। এখন আমরা রাতেও অভিযান পরিচালনা করে থাকি। অনেক দোকানদার মনে করেন রাতে অভিযান পরিচালনা করা হয় খুবই কম। তবে পণ্য কিনার আগে ভোক্তাকেও সচেতন হতে হবে।’
এমএইচ/