ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

দুর্নীতি কমলে দ্বিগুণ হবে রাজস্ব: অর্থমন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৪৮ পিএম, ২২ মে ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ১০:৩৭ পিএম, ২২ মে ২০১৯ বুধবার

দেশে দুর্নীতি কমলে রাজস্ব আহরণ দ্বিগুণ বেড়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, বেশি শুল্ক রয়েছে এমন পণ্য আমদানি করা হয় কম শুল্কের পণ্য ক্যাটাগরিতে। এ অবস্থার উত্তরণে আগামী অর্থবছরে দুর্নীতি বন্ধে জোর দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে কাস্টমস থেকে পণ্য আমদানি রফতানির ক্ষেত্রে স্ক্যানার মেশিন বসানো হবে। কেননা দুর্নীতি কমলে রাজস্ব আহরণ দ্বিগুণ হবে।

অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইআরএফের সঙ্গে প্রাকবাজেট-আলোচনায় বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা বলেন। রাজধানীর আগারগাঁও এ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ আলোচনায় ইআরএফের সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল সভাপতিত্ব করেন। এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম প্রমুখ।

অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতির যে আকার, তার সঙ্গে রাজস্ব আয়ের সামঞ্জস্য নেই। অর্থনীতির আকারের তুলনায় রাজস্ব আহরণ অনেক কম। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতেও জিডিপির বিপরীতে প্রাপ্ত করের হার ১৭/১৮ শতাংশ। কিন্তু আমরা দীর্ঘদিন ধরেই ১০ শতাংশেই আটকে আছি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি বাড়াতে কর আহরণের পরিমাণও বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের কর আহরণ কম হওয়ার পেছনে নানা কারণ আছে। এর অন্যতম কারণ দুর্নীতি। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানি রফতানি করা হয়।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আমদানিকারকরা একটি পণ্যের ঘোষণা দিয়ে অন্য পণ্য না দিয়ে আসে। এতে সরকার কম রাজস্ব পায়। অন্যদিকে আমদানি ও রফতানির ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিং এর মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার করা হয় বলেও অভিযোগ। এতে নানাভাবে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রথমত সরকার তার প্রকৃত রাজস্ব পায় না। দ্বিতীয়ত দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা বাইরে চলে যায়। তৃতীয়ত এই অর্থের একটি অংশ জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কাজে ব্যয় হওয়ার আশংকা থাকে। তাই এই বিষয়টিকে খুব গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, ইআরএফ সদস্যদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রকল্পের মাধ্যমে বাজেট থেকে কীভাবে সহায়তা দেয়া যায়, তা বিবেচনা করবে সরকার। এ ব্যাপারে ইআরএফের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব চান তিনি। এ সময়ে ইআরএফের সদস্য সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কারসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেন।

আলোচনায় ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল বাজেটে মানবসম্পদ উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডকে কাজে লাগাতে হলে আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠিকে বড় মানবসম্পদে রূপান্তর করতে হবে। দেশে দক্ষ জনবলের ঘাটতির বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, দেশে যে হারে শিল্প-বাণিজ্যের বিকাশ হচ্ছে, সে হারে দক্ষ জনবল বাড়ছে না। এই সুযোগে গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন খাতের মধ্যবর্তী ম্যানেজমেন্টে বিপুল সংখ্যক বিদেশী বৈধ-অবৈধভাবে কাজ করছে; মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে যাচ্ছে। উপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরি করলে এসব খাতে আর কোনো বিদেশীর প্রয়োজন হবে না। তাতে দেশের তরুণদের জন্য বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থানের যেমন সুযোগ তৈরি হবে, তেমনই দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা দেশেই থেকে যাবে।
ইআরএফ সভাপতি অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রনয়নের সময় মানবসম্পদ উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখার সুপারিশ করেন।

ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের দক্ষতা উন্নয়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের দক্ষতা যত বাড়বে তারা গঠনমূলক ও বস্তুনিষ্ট সংবাদের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তত বেশি ভূমিকা রাখতে পারবেন।

রাশিদুল ইসলাম বলেন, অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের দক্ষতা উন্নয়নে ইআরএফ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারি সহযোগিতার বিষয়ে সাহায্য করার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান তিনি। এ সময় ইআরএফের সদস্যরা সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কারসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেন।

এ ছাড়া আলোচনা সভায় রাজস্ব আদায়ে আউট সোর্স হিসেবে ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতির আকার অনুযায়ী যে রাজস্ব আদায় হয় তা প্রায় অর্ধেক। রাজস্ব আদায় বাড়াতে এসব জনবল নিয়োগ দেয়া হবে।

আমাদের আরও ৩ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা পেতে হবে। আমরা যদি ৬ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করতে না পারি তাহলে আমাদের অর্থনীতি যে গতিশীলতা বা গভীরতা পেয়েছে-এটার সঙ্গে রাজস্ব আদায়ের কোনো মিল থাকে না। আমাদের এ কাজটা করতে হবে।

তিনি বলেন, খুবই দুঃখজনক যে যারা ট্যাক্স দেয়, তারাই দেয়। মাত্র ২১ বা ২২ লাখ ট্যাক্স দেয়। এ ছাড়া যাদের দেবার ক্ষমতা রয়েছে তারাও কোনো ট্যাক্সই দেয় না। সুতরাং আগামী বাজেটে আমরা কোনোভাবেই করের হার বাড়াব না। তবে যারা কর দেয় না তাদেরকে করের আওতায় নিয়ে আসব।

১০ হাজার জনবল নিয়োগ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, যারা ট্যাক্স দেয়ার ক্ষমতা রাখে কিন্তু ট্যাক্স দিচ্ছে না তাদের কাছে পৌঁছাব, তাদের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায় করব। এ জন্য আমরা প্রথম বছর আউট সোর্স হিসেবে ১০ হাজার জনবল বাড়াব। এসব জনবল হবে স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী, যারা কোনো কাজ পাচ্ছে না তাদেরকে আউট সোর্স হিসেবে এ নিয়োগ দেয়া হবে।

প্রতি উপজেলায় ট্যাক্স অফিস নিয়ে যাওয়া হবে জানিয়ে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আগামী জুলাই মাস থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন শুরু করব। তবে এটা প্রথম থেকেই পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।

সম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপের বরাত দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, রাজধানী ঢাকা ও বড় বড় শহরে প্রায় ৯ লাখ ব্যবসায়ীপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রথমে বড় বড় জায়গায় এটা (ট্যাক্স আদায়) বাস্তবায়ন করা হবে। ভ্যাট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই আমরা আয়করের বিষয়টি জনগণের নিকট নিয়ে যাব। তবে জোর করব না। জনগণ যখন ভ্যাট দেবে তখন কর দেয়াতেও অভ্যস্ত হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, রাজস্ব ফাঁকি ও অর্থপাচার রোধে সকল আমদানি-রফতানিকৃত পণ্য যথাযথভাবে স্ক্যানিং করা হবে। পাশাপাশি আমদানি-রফতানিতে যারা ওভার অ্যান্ড আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের সঙ্গে জড়িত তাদের জরিমানার পাশাপাশি মামলা করা হবে। মামলার রায় অনুযায়ী তাদেরকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।

আরকে//