ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

রমজানে পায়ুপথের রোগীদের করণীয় কী?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:০৮ এএম, ২৩ মে ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১২:১০ এএম, ২৩ মে ২০১৯ বৃহস্পতিবার

প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে মুসলিম জাতি পালন করছে দীর্ঘ একমাসব্যাপী রোজা। একদিকে গরম অন্যদিকে দীর্ঘ সময় রোজা রাখতে গিয়ে শারীরিকভাবে আমাদের অনেক সমস্যার ‍মুখোমুখী হতে হয়। এরমধ্যে অন্যতম হলা পায়ুপথের সমস্যা। 

একুশে টিভির দর্শকদের জন্য এবারের আলোচনার বিষয় ‘রমজান ও পায়ুপথের রোগ’। এ বিষয়ে কথা বলেছেন কেয়ার হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. এস এম এ এরফান।

একুশে টিভিঃ রমজানে পায়ুপথের কোন কোন রোগগুলো বেশি হতে পারে?

ডা. এস এম এ এরফানঃ পায়ুপথের রোগকে আমরা দু’ভাগে ভাগ করতে পারি। প্রথমত, যাদের পায়ুপথের রোগ আছে তাদের কি অবস্থা হতে পারে আর দ্বিতীয়ত, পায়ুপথের কোন রোগগুলো বেশি হতে পারে।যারা রমজানের আগে থেকে পায়ুপথের সমস্যায় ভোগেন তাদের পাইলস, ইনার্ফিসার, ফিস্টুলা, কোস্টকাঠিন্যতার সমস্যায় পড়তে হয়। আর মাসের শেষের দিকে ডায়েরিয়া ও আমাশয় সমস্যা হয়ে থাকে। রমজানে এসব রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। আঁশ জাতীয় খাবার কম খাওয়া ও বেশি পরিমাণ ক্যালরি জাতীয় খাবার গ্রহণের কারণে এ সমস্যা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

একুশে টিভি: রমজানে যারা ইনার্ফিসিয়া সমস্যা আছে, তাদের করণীয় কি হতে পারে?

ডা. এস এম এ এরফানঃ রমজানে এ ধরণের রোগের কোস্টকাঠিন্য বেড়ে যায়, তাই এর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। ফলে, পায়খানা অনেক শক্ত হয়ে থাকে। এতে করে অনেকের পায়ুপথ ছিড়ে যায় এবং ব্যাথার শুরু হয়। তীব্র ব্যাথার সাথে পায়খানের সাথে রক্তও বের হয়ে থাকে। ফলে, এই সমস্ত রোগীদের জন্য রোজা রাখা খুবই কষ্টোকর হয়ে থাকে। তাই এসমস্ত রোগীদের করণীয় হলো, কোলোরেক্টর সার্জনের পরামর্শ অনুযায়ী মলম, কিংবা ভিন্ন কোন ঔষুধ গ্রহণ করা।

এছাড়া, পায়খানা স্বাভাবিক রাখতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করা। এমনকি যদি অপারেশন করার প্রয়োজন হয়, সেটিও দ্রুত সময়ে তা করিয়ে নেয়া। এতে তার জন্য রোজা রাখা সম্ভব হতে পারে।

একুশে টিভিঃ দীর্ঘ সময় পানাহারের কারণে পানি কম খাওয়া হচ্ছে কিন্তু ভাজা, পোড়া খাওয়া হচ্ছে অনেক বেশি। এতে করে নতুন কারো পায়ুপথের সমস্যা হতে পারে কিনা?

ডা. এস এম এ এরফানঃ পায়ুপথের বিভিন্ন ধরণের রোগ রমজান মাসেই বেশি হয়ে থাকে। সারাদিন উপবাস থাকায় পানিসহ শাক, সবজি আমরা কম খেয়ে থাকি, ফলে খাবারের এ পরিবর্তনে কোস্টকাঠন্য বৃদ্ধি পায়।

বিশেষ করে যাদের পায়ুপথ সরু, তাদের ক্ষেত্রে এ আশঙ্কা আরও বেশি। কেননা, পায়খানার সময় সেটি অনেক সময় ছিড়ে যায়, যাকে অ্যানাল ফিসার নামে আমরা জানি। এক্ষেত্রে করণীয় হলো, ইফতারিতে কার্বোহাইড্রেট রিচ ও সাহরিতে ক্যালরির পাশাপাশি আশ জাতীয় খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া।

এছাড়া, ইসুবগুলের ভূসি, লেবুর শরবত বেশি করে খেতে হবে। এরপরও, যদি বৃদ্ধি পায় তবে, দ্রুত তাকে কোলেক্টর চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এক্ষেত্রে যে ঔষধগুলো দেয়া হয়ে থাকে, তা ব্যবহার করেও রোজা থাকা যায়।

একুশে টিভি: পায়ুপথের রোগীদের কোন পর্যায়ে গিয়ে হাসপাতালে যেতে হতে পারে?

ডা. এস এম এ এরফানঃ চিকিৎসার উন্নতির ফলে বর্তমানে এসমস্ত রোগীদের তেমন হাসপাতালে যেতে হয়না। তারপরও, যাদের পায়ুপথ অনেক ন্যারো, তাদেরকে অ্যালায়েস নামক একটি অপারেশ করা হয়ে থাকে। যা পায়ুপথের বাহিরে করা হয়ে থাকে। ২৪ ঘন্টা অবজারভেশন শেষে এ সমস্ত রোগীরা স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারেন। অপারেশনের দু’তিন পরই তিনি রোজা রাখতে পারেন। পরবর্তী পুনরায় যাতে একই অপারেশন করতে না হয়, সেক্ষেত্রে ভাল একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরাপন্ন হতে হবে।

একুশে টিভিঃ পায়ুপথে রোগীদের শঙ্কিত হওয়ার সম্ভাবনা কতুটুকু?

ডা. এস এম এ এরফানঃ আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক এগিয়ে গেছে। সব ধরণের চিকিৎসা আমাদের আছে,  তাই শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশে পায়ুপথের সবধরণের রোগকে পাইলস হিসেবে ধরা হয়। এর সাথে আরো অন্যান্য রোগের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারও আছে। যেমন অ্যানাল ক্যানাল ক্যানসার,রেকটার ক্যানসার, কোলন ক্যানসার প্রভূতি। পায়ুপথের রোগের সাথে ক্যানসারের যথেষ্ট সম্পর্ক আছে। তাই, সবপ্রথম ক্যানসার আছে কিনা নির্ণয়ে কোলনস্কপি নামে একটি পরীক্ষার করতে হবে।এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো, তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত কিনা। ক্যানসার ধরা না পড়লে, অন্যাসব রোগ খুব সহজেই সমাধান সম্ভব।

আই/কেআই