ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

যেভাবে শিল্পপতি হলেন সালমান এফ রহমান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:৩০ পিএম, ২৩ মে ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৫:১৬ পিএম, ২৩ মে ২০১৯ বৃহস্পতিবার

সালমান ফজলুর রহমান বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও উদ্যাক্তাদের আইকন যিনি সালমান এফ রহমান নামেই বেশী পরিচিত। তিনি বাংলাদেশের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং ভাইস চেয়ারম্যান।আন্তজার্তিক পরিমন্ডলেও তিনি একজন খ্যাতিমান শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী হিসেবে স্বীকৃত। শুধু ব্যবসায়ী হিসাবে নয় নিজেকে গড়ে তুলছেন আপাতমস্তক একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে। গেল ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন।

তাঁর গতিশীল নেতৃত্ব এবং সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপগুলো দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশকে নতুন এক রূপ দিয়েছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। এই ব্যবসায়ী নেতা ও সমাজসেবকের আজ জন্মদিন।
১৯৫১ সালের আজকের এই দিনে (২৩ মে)তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

রাজধানী ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার শাইনপুকুর গ্রামের এক ঐতিহ্যবাহী সম্ভ্রান্ত মুসলিম জমিদার পরিবারের গর্বিত সন্তান। তাঁর বাবা মরহুম ফজলুর রহমান ছিলেন খ্যাতিমান আইনজীবী।তিনি অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী,শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বাধীন পার্লামেন্টের চিফ হুইপ ছিলেন।পরবর্তীসময়ে তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারের রাজস্বমন্ত্রী ছিলেন।তিনি ১৯৪৭-১৯৫৩ সাল পর্যন্ত তদানিন্তন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সভার সদস্য হিসেবে শিক্ষা ও বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

তাঁর মাতা সৈয়দা ফাতিনা রহমান কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী জঙ্গল বাড়ির সৈয়দ বংশের জমিদার সৈয়দ মুহম্মদ আতিকুল্লাহর কন্যা।সৈয়দ মুহম্মদ আতিকুল্লাহ হযরত শাহজালাল (রঃ) - এর সিলেট বিজয়ের প্রধান সিপাহসালার সৈয়দ নাসিরুদ্দিনের বংশধর ছিলেন।সৈয়দা ফাতিনা রহমান মাতৃসূত্রে নবাব আব্দুল লতিফ, নবাব সৈয়দ মুহম্মদ, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বংশধর ছিলেন।তিনি উপমহাদেশের অন্যতম প্রথম মুসলিম ছাত্রী হিসেবে স্বর্ণপদকসহ প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন এবং লেডি ব্রেবুন কলেজে লেকচারার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।কর্মজীবনে তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। তাঁর স্ত্রী সৈয়দা রুবাবা রহমান এবং একমাত্র ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান।
সালমান এফ রহমান ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হন। পরবর্তী সময়ে তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন লাভ করেন।

সালমান এফ রহমান ১৯৬০ দশকের মাঝামাঝিতে পারিবারিক ব্যবসায়ে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে তিনি ও তাঁর বড় ভাই সোহেল ফাসিউর রহমান মিলে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড (বেক্সিমকো) নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ইউরোপের বাজারে সামুদ্রিক খাবার এবং হাড়চূর্ণ রপ্তানি শুরু করেন। এসব পণ্য রপ্তানীর বিনিময়ে তাঁরা ইউরোপ থেকে মানসম্পন্ন ঔষধ আমদানি করতেন।
বছরের পর বছর ধরে সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে বেক্সিমকো গ্রুপ ক্রমান্বয়ে বড় হয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের বেসরকারী খাতে অন্যতম সর্ববৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি টেক্সটাইল, ঔষধশিল্প, সামুদ্রিক খাবার, আবাসন, কনস্ট্রাকশন, তথ্য ও প্রযুক্তি, গণমাধ্যম, সিরামিকস্, আর্থিক সেবা এবং জ্বালানী সহ বিবিধ খাতে ব্যবসা পরিচালনা করছে। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ-এর অল্টারনেটিভ ইনভেষ্টমেন্ট মার্কেট-এ তালিকাভুক্ত প্রথম বাংলাদেশী কোম্পানি । এছাড়াও বেক্সিমকো বাংলাদেশের বেসরকারী খাতের সর্ববৃহৎ নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৬০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান করেছে।

সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি ও দৃঢ়ব্যক্তিত্বের অধিকারী সালমান এফ রহমান শুধুমাত্র বেক্সিমকো গ্রুপের বৃদ্ধি ও প্রসারই নিশ্চিত করেননি, একই সাথে তিনি সফল ভাবে বাংলাদেশের ব্যবসা খাতে উন্নয়ন এবং গতিশীলতা এনেছেন। স্বাধীনতার পরপর দেশের প্রাথমিক পর্যায়ে বেসরকারি খাতের উন্নয়নে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।সালমান এফ রহমান দেশের বেসরকারী খাতের প্রণোদনায় নিয়োজিত শীর্ষ বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের বোর্ড অব গভর্নরস এর চেয়ারম্যান।তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ইংরেজী দৈনিক ‘দ্য ইনডিপেনডেন্ট’ এর বোর্ড অব এডিটর’স এর চেয়ারম্যান। এছাড়াও তিনি ২৪ ঘন্টা সংবাদ-ভিত্তিক চ্যনেল ‘ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন’ এর চেয়ারম্যান।

তিনি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল, সার্ক অঞ্চলের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংস্থা ‘সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’, ব্যবসায়ীদের শীর্ষসংগঠন এফবিসিসিআই, এমসিসিআই, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ-এর সভাপতি হিসেবে কাজ করেছিলেন।সালমান এফ রহমান “প্রয়াস” এর একজন পৃষ্ঠপোষক। এই প্রতিষ্ঠানটি বিশেষ শিশুদের উন্নয়ন ও সহায়তা নিয়ে কাজ করে। শিশুদের বিশেষায়িত শিক্ষা, নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল পরীক্ষণ ও চিকিৎসা, বিনোদন, সহপাঠ্যক্রম সহ সামগ্রিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়াও প্রয়াস -শিক্ষক, শিশুদের বাবা-মা কেও প্রশিক্ষণ ও সমন্বিত সেবা প্রদান করে থাকে দেশকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অগ্রগতির পথে পরিচালনার জন্য একটি শিক্ষিত প্রজন্ম তৈরির উপর বিশেষভাবে জোর দিচ্ছেন সালমান এফ রহমান।

এলক্ষ্যে তিনি তার এলাকা দোহার ও নবাবগঞ্জের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে অনবরত অবদান রেখে চলছেন। এর মধ্যে তাসুল্লা উচ্চ বিদ্যালয়, পদ্মা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, দোহার-নবাবগঞ্জ কলেজের জন্য তার সহায়তা ও আর্থিক অনুদান উল্লেখযোগ্য। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আধুনিক কম্পিউটার শিক্ষাকে সকলের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে তিনি দোহারের সকল উচ্চ বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রদান করেন। এছাড়াও, তিনি সমাজের সুবিধা বঞ্চিতদের শিক্ষামূলক উন্নয়নের জন্য গণ সাহায্য সংস্থা (জিএসএস) এর মাধ্যমে দাতব্য কাজে অবদান রেখে চলেছেন। ছাত্রছাত্রীদের উন্নয়নের স্বার্থে ২০০৬ সাল থেকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে বার্ষিক অনুদান দিয়ে আসছেন।
সালমান এফ রহমান একজন বিশিষ্ট ক্রীড়া অনুরাগী। তিনি নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ক্রীড়া অনুষ্ঠান, খেলোয়াড়, এবং দলের পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে বাংলাদেশের খেলাধুলার উন্নয়নে উল্ল্যেখযোগ্য অবদান রাখছেন। বেক্সিমকো গ্রুপ ২০১১ সালের আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অফিসিয়াল পৃষ্ঠপোষক ছিল। এছাড়া তিনি ২০১১ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আর্জেন্টিনা ও নাইজেরিয়ার মধ্যকার আন্তর্জাতিক ফিফা প্রীতি ম্যাচের আয়োজন এবং পৃষ্ঠপোষকতা করেন ।

দেশের শীর্ষস্থানীয় স্পোর্টিং ক্লাব ‘আবাহনী লিঃ’–এর চেয়ারম্যান হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। এই ক্লাবটি তাঁর কাছে বিশেষ আবেগ অনুভূতির জায়গা। ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামাল। শেখ কামাল ছিলেন সালমান এফ রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

ফার্মাসিউটিক্যালস, টেক্সটাইল, সিরামিকস, সিনথেটিকস, জুট, রিয়েল অ্যাস্টেট, প্রোকৌশল, মেরিন ফুড, আইটি, অ্যাভিয়েশন, অ্যানার্জি, জ্বালানি, মিডিয়া, টিভি চ্যানেল, টেলিকমিউনিকেশন সহ বিভিন্ন খাতে ৩৯ টি পাবলিক এবং প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। কোম্পানিসমূহ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে ৭০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়।এসব কোম্পানির উৎপাদিত বিশ্বমানসম্পন্ন উচ্চমানের পন্য রপ্তানির মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে মর্যাদার অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং এর মধ্যে দিয়ে দেশের জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছেন।

বিনামূল্যে ঔষধ ও পোশাক বিতরণ তাঁর নিয়মিত দাতব্য কাজগুলির মধ্যে অন্যতম। দোহারের মানুষের সুস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য তিনি ২৪০টিরও বেশি আর্সেনিক মুক্ত টিউব ওয়েল স্থাপন করেন এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা সহায়তা কার্যক্রম শুরু করেন যার মাধ্যমে ১৬ জন ডাক্তার নিয়মিতভাবে চিকিৎসা এবং ঔষধ প্রদান করছেন।

টিআর/