ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্র থেকে মুছে যাচ্ছে বামেরা!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:৫৪ পিএম, ২৪ মে ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ০৩:০৩ পিএম, ২৪ মে ২০১৯ শুক্রবার

ভারতে বিশ্বের বৃহত্তম নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মত নিরঙ্কুশ সংখ্যাগষ্ঠিতা অর্জন করলো নরেন্দ্র মোদির বিজেপি। আর রাহুল গান্ধীর কংগ্রেসের জন্য এই ফল বিরাট এক ধাক্কা। অন্যদিকে, ভারতে সংসদীয় রাজনীতিকে আপন করে নিতে বামদের তাত্ত্বিক দ্বিধা ছিল। কিন্তু এই গণতন্ত্রে একবার পা রাখার পর সে দেশে কখনও যা হয়নি তাই এবার দেখেছে ভারত।

গোটা দেশের রাজনৈতিক মানচিত্র থেকে প্রায় মুছে যাচ্ছে বামেরা! বাংলায় সব সমীক্ষার ইঙ্গিত সত্য প্রমাণিত করে হাতে থাকা দুটি আসনও হারিয়েছে সিপিএম। গত বছর ত্রিপুরায় ক্ষমতা হারানোর পর সেখানে লড়াই যথেষ্ট কঠিন হয়ে গিয়েছিল। সেই ধারা বজায় রেখেই উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্যে জোড়া আসনই সিপিএমের হাতছাড়া।

আর এক খন্ড দ্বীপের মতো আশার বাতি জ্বলে ছিল কেরালায়। গোটা দেশ যখন নরেন্দ্র মোদির প্রত্যাবর্তনের পক্ষে রায় দিচ্ছে, মালাবার উপকূলই একমাত্র সম্পূর্ণ উল্টো দিকে গিয়ে বিজেপি বিরোধী অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু কেরালায় মোদিবিরোধী হাওয়ার ফায়দা বামেরা লুটতে পারেননি, ভোট গেছে কংগ্রেসের বাক্সে। ওই তিন রাজ্যের বাইরে বামদের দিকে আর যেখানে সবার নজর ছিল, তার নাম বিহারের বেগুসরাই। এখানে মোদি বিরোধিতার মুখ হয়ে সিপিআই প্রার্থী ছিলেন কানহাইয়া কুমার। কিন্তু গতকাল ভোট গণনার পর দেখা গেল বেগুসরাইবাসী তরুণ বাম নেতার প্রতি সদয় হননি। কিন্তু এমন পরিস্থিতি কেন?

আসলে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর আমলেও পার্লামেন্টে বামদের গ্রহণযোগ্যতা ছিল। তারা এভাবে অপ্রাসঙ্গিকতার অন্ধকারে তলিয়ে গেল কেন এমন প্রশ্নের জবাবে বাম নেতারা বলছেন, তীব্র মেরুকরণের ভোটে তারা এবার পায়ের তলায় মাটিই খুঁজে পাননি। সংখ্যাগুরু আর সংখ্যালঘুর ধর্মীয় বিভাজনে এবারের ভোট ভাগ হয়েছে বলে রাজনৈতিক শিবিরের প্রাথমিক ধারণা। বাম নেতাদের বিশ্লেষণ হচ্ছে-মোদিকে হটিয়ে তারা কেন্দ্রে সরকার গড়তে পারবেন না এমন ধারণা থেকেই মানুষ তাদের দিকে ফিরে তাকায়নি। বাংলা কিংবা কেরালা যেটাই হোক সংখ্যালঘু মানুষের সমর্থন তাদের দিকে আসেনি। দিল্লিতে মোদিকে ঠেকানোর আকাংখা থেকে কেরালা ক্ষমতাসীন বামের পক্ষে না গিয়ে প্রায় ৪৪ ভাগ সংখ্যালঘু ভোটই কংগ্রেসের বাক্সে পড়েছে। বাংলায় বামদের অবস্থা আরও খারাপ। নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক হিসাব বলছে, বিজেপির ভোট এবার বেড়ে হয়েছে ৩৮ দশমিক ৫ ভাগ। বামদের ভোট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ ভাগে। অনেকের ধারণা, বামদের ২০ ভাগ ভোটের পুরোটাই যোগ হয়েছে বিজেপির লাভের খাতায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় স্লোগান শুরু হয়েছে, ‘বামের ভোট রামে’।

পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতির সমীকরণে বামফ্রন্ট এবং বিজেপি দুই পক্ষেরই অবস্থান তৃণমূল বিরোধী। বাংলায় লোকসভা নির্বাচনে এই দুই পক্ষের ভোট কেন মিশে গেল তার তিনটি কারণ উঠেছে রাজনৈতিক শিবিরের প্রাথমিক আলোচনায়। প্রথমত, দেশে নরেন্দ্র মোদির সরকারের প্রত্যাবর্তনকে ঠেকানোর চেয়েও রাজ্যে তৃণমূলের হাত থেকে মুক্তি পাওয়াকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন বাম কর্মী সমর্থকরা। দ্বিতীয়ত, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট শেষ মুহূর্তে ভেস্তে যাওয়ায় হতাশা তৈরি হয়েছিল বাম শিবিরের বড় অংশে। কংগ্রেসের সঙ্গে থাকলে কেন্দ্রে বিকল্প সরকার গড়ার যে বার্তা দেওয়া যেতো তা সম্ভব হয়নি। এই হতাশাই বহু বাম সমর্থককে পদ্মমুখী করে তুলেছে। আর তৃতীয়ত, পরপর নির্বাচনে ব্যর্থ বাম নেতৃত্বের কোনও নিয়ন্ত্রণ কর্মী-সমর্থকদের ওপর কাজ করেনি।

সূত্র: আনন্দবাজার