ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

কতটা সঙ্কটে পড়েছে কংগ্রেস?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:০৪ এএম, ২৫ মে ২০১৯ শনিবার | আপডেট: ১১:৫৫ এএম, ২৫ মে ২০১৯ শনিবার

ভারতের  সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিপুল ভোটে জয়ের উল্টোদিকে রয়েছে কংগ্রেসের দ্বিতীয়বারের মতো ভরাডুবি। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এই প্রথমবার তারা একটানা দশ বছর বিরোধী আসনে বসতে চলেছে। এ নির্বাচনে তাদের আসন সংখ্যা এতটাই কম, যে আনুষ্ঠানিক বিরোধী দলের স্বীকৃতিও তারা পাবে না।

ভারতের রাজনীতিতে `দ্য গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি` বলা হয়ে থাকে যে দলটিকে, তারা মাত্রা ৫২টি আসন পেয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তারা পেয়েছিল ৪৪টি আসন। এরকম শোচনীয় ফলাফলের কারণ বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে দলের ভেতরে।

প্রবীণ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলছিলেন, ‘যে সব ইস্যুর ভিত্তিতে আমরা প্রচার চালিয়েছি, যেমন নোট বাতিল, জি এস টি, দুর্নীতি - এইসব ইস্যুগুলো আমরা সাধারণ মানুষের কাছে যে ঠিকমতো পৌঁছিয়ে দিতে পারি নি, সেটা তো বোঝাই যাচ্ছে।

আবার ব্যাপক ধর্মীয় মেরুকরণের প্রচার আর জাতীয়তাবাদের ভাবনা দিয়ে যে মোহজাল বিজেপি সম্প্রসারিত করতে পেরেছে, সেই মোহজালটা আমরা ছিন্ন করতে পারি নি। এটা আমাদেরই দায়।’

বৃহস্পতিবার ভোটের ফলাফল যখন স্পষ্ট, তখনই একটি সংবাদ সম্মেলনে এসে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী অভিনন্দন জানালেন নরেন্দ্র মোদীকে।

অথচ এই রাহুল গান্ধীই কয়েকদিন আগে পর্যন্তও মোদীকে উদ্দেশ্য করে একের পর এক জনসভায় স্লোগান তুলেছেন চৌকিদার চোর হ্যায়। বিজেপি আর প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগের সোচ্চার হয়েছে তার দল।

বিজেপি যখন উগ্র জাতীয়তাবাদ আর হিন্দুত্বের কথা বলেছে, তখন কংগ্রেস নিয়ে এসেছে বেকারত্ব, নোটবাতিল, কৃষকদের সমস্যার কথা -- যেগুলো ভারতের কোটি কোটি মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা। কিন্তু ভোটের ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে কংগ্রেসের কথা খুব বেশী মানুষ কানেই তোলেনি।

আনন্দবাজার পত্রিকার অবসরপ্রাপ্ত বার্তা সম্পাদক রজত রায় বলছিলেন, এই নির্বাচনে হেরে গিয়ে কংগ্রেস সঙ্কটে পড়েছে ঠিকই, কিন্তু দলটার সঙ্কট আরও অনেক গভীরে।

‘যখন থেকে কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে নানা রাজ্যে আঞ্চলিকদলগুলো তৈরী হতে শুরু করল, কংগ্রেসের সঙ্কটের শুরুটা তখন থেকেই। যে সর্বভারতীয় বৈশিষ্ট্য ছিল কংগ্রেসের সেটা ধীরে ধীরে খর্ব হতে থাকল।

পরে যদিও নানা আঞ্চলিক দলের সঙ্গে নির্বাচনী বোঝাপড়ায় গেছে তারা। একই সঙ্গে তারা অন্য আরেকটা বিপদেরও সম্মুখীন হয়েছে’ বলছিলেন রায়।

তার কথায়, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের উত্তরাধিকারী হিসাবে তাদের যে একটা সর্বভারতীয় আখ্যান বা ন্যারেটিভ ছিল, সেটাও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল যখন বিজেপি হিন্দুত্ববাদ, দেশ আর জাতীয়তাবাদের মিশ্রণে একটা নতুন আখ্যান নিয়ে হাজির হল।’

‘সেটাকে প্রতিহত করার প্রচেষ্টা যে কংগ্রেস খুব একটা করেছে, এমনটা চোখে পড়ে নি। তার ফলে বিজেপি-র নতুন আখ্যানটাই কিন্তু সংখ্যগরিষ্ঠ হিন্দুদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠল ধীরে ধীরে।’

কিন্তু বিজেপি-র বিরুদ্ধে তো কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী ব্যাপক সরব হয়েছিলেন বিগত লোকসভার বিতর্কগুলোতে আর নির্বাচনী জনসভাগুলোতে। তাহলে কি গান্ধী পরিবারের কথায় সাধারণ মানুষ আর বিশ্বাস করতে পারছেন না?

দিল্লিতে কর্মরত সংবাদ প্রতিদিন কাগজের সিনিয়ার সংবাদিক নন্দিতা রায়ের কথায়, শুধু গান্ধী পরিবার নয়, আজকাল আর কোনও পরিবারের নামেই মানুষ ভোট দেন না। পরিবারের রাজনৈতিক ইতিহাস ভোটারদের আর আকৃষ্ট করে না।

‘বৃহস্পতিবার যে ফল ঘোষণা হয়েছে, সেদিকে তাকালেই দেখবেন রাজনৈতিক পরিবারগুলোর উত্তরাধিকারীরা বেশীরভাগ জায়গাতেই কিন্তু হেরেছেন। মানুষের কাছে আসলে আর এই পারিবারিক ঐতিহ্যগুলো কোনও অর্থ বহন করে না।’

‘গান্ধী পরিবার নিশ্চই স্বাধীনতা আন্দোলনে বা স্বাধীন ভারতে বিরাট ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু যারা কম বয়সী ভোটার, তাদের কাছে তার কোনও মূল্যই তো নেই। তারা পারফরম্যান্স দেখে এখন ভোট দেয়,’ বলছিলেন নন্দিতা রায়।

রজত রায়েরও বক্তব্য, ‘গান্ধী পরিবারের ঐতিহ্য ভাঙ্গিয়ে আর কতদিন ভোট চাওয়া যেতে পারে! কিন্তু তার মানে এই নয় যে গান্ধী পরিবার শেষ হয়ে গেল এই একটা ভোটেই। রাহুল গান্ধীর বয়স কম। তাই নিজেকে উন্নীত করার এখনও অনেক সময় আছে তার হাতে।’

শোচনীয় ফলাফলের পরেই প্রশ্ন উঠেছে যে রাহুল গান্ধী কি পদত্যাগ করবেন কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে?

কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্যের কথায়, ‘তাকে সরিয়ে দিয়ে নেতৃত্বে আনা যেতে পারে, এমন একটি নামও তো আমি ভেবে পাই নি। কে নেতৃত্ব দেবে দলকে?’

সভাপতি পদ থেকে এখনই রাহুল গান্ধী যে সরছেন না, সেটা মোটামুটি স্পষ্ট। কিন্তু তার নেতৃত্বে কংগ্রেস আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কী না, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

এমএইচ/