ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

ইস্তফা দিতে পারেন রাহুল!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:০৪ পিএম, ২৫ মে ২০১৯ শনিবার

ভারতের  সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরেই হারের দায় নিজের ঘাড়ে নিয়েছেন রাহুল গান্ধী। কিছু সূত্রে তার ইস্তফার সম্ভাবনা নিয়ে খবর ছড়াতেই দলে আলোড়ন তৈরি হয়েছে।

কাল ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে কী করবেন কংগ্রেস সভাপতি তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। রাহুলের ইস্তফার কথা শুনেই দলের নবীন নেতারা দিল্লি আসতে শুরু করেছেন।

তারা চান, রাহুল যাতে কোনও ভাবেই ইস্তফা না দেন। কারণ, তারা মনে করছেন, রাহুল জেদ ধরে থাকলে ইস্তফা দিয়েই দেবেন। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে আগামিকাল রাহুল ইস্তফা দিতে চাইলে আদৌ কি তা গ্রহণ করা হবে?

এই প্রশ্নে মতিলাল ভোরার মতো  প্রবীণ নেতারা রাহুলেই আস্থা রাখছেন। ভোরার পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘রাহুল গান্ধীর বদলে দায়িত্ব নিতে পারেন, দলে এমন ব্যক্তি কে আছে?’’

দলে শীর্ষ পদের প্রত্যাশী যে নেই, তা নয়। রাহুল জমানায় ‘উপেক্ষিত’ নেতারা এখন সুযোগ বুঝে খড়গহস্ত তার উপরে। আজ দুপুরে এআইসিসি দফতরে এসে ঘুরে যান রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত।

তিনি ঘাঁটি গেড়েছেন দিল্লিতেই। ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের আগে গহলৌতও পদ পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। কংগ্রেসের এক নেতা বললেন, ‘‘যে গহলৌত নিজের রাজ্যেই গো-হারা হেরে বসে আছেন, তাকে কেন পুরস্কৃত করা হবে?’’

গহলৌত নিজে অবশ্য টুইটারে লিখেছেন, ‘‘...সভাপতির ইস্তফার প্রসঙ্গ ভিত্তিহীন ও অপ্রাসঙ্গিক। এটা আমরা কখনওই ভুলব না, রাহুল গান্ধীর অক্লান্ত পরিশ্রম ও লড়াকু মেজাজের কারণেই এনডিএ-কে শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছিল কংগ্রেস।’’ এর পরে দ্বিতীয় একটি টুইটে রাহুলের নেতৃত্বকে ‘দৃষ্টান্তমূলক’ আখ্যা দিয়েছেন তিনি।

শুধু গহলৌত নন, সুশীল কুমার শিণ্ডে, তরুণ গগৈ, মল্লিকার্জুন খড়্গের নাম নিয়েও জল্পনা তুঙ্গে। খড়্গে জেতেননি এ বার। ফলে লোকসভায় দলের নেতা কাকে করা হবে, সেটি নিয়েও ভাবতে হবে।

কেউ কেউ তো আবার এক জন সভাপতির সঙ্গে চার জন কার্যনির্বাহী সভাপতির প্রস্তাব নিয়েও হাজির। কংগ্রেসের ওই নেতার কথায়, ‘‘আসলে দলের প্রবীণ নেতাদের একাংশই এখন রাহুলের বিরুদ্ধে এখন সুযোগ পেয়ে খড়গহস্ত হতে চাইছেন। যারা রাহুল আসার পর নিজেদের উপেক্ষিত মনে করছেন।’’

হারের কারণ নিয়ে পর্যালোচনার  বৈঠকের আগে জনার্দন দ্বিবেদীর মতো নেতাও ক্ষোভ উগরে বলেছেন, ‘‘কংগ্রেসের এই ফল দেখে আমি একেবারেই আশ্চর্য হইনি। আমি আগেই দলকে সতর্ক করেছিলাম।’’

অনিল শাস্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘ভোট প্রচারে ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’-এর মতো স্লোগান আসলে বুমেরাং হয়েছে। রাফাল মানুষের মনে দাগ কাটেনি। ‘ন্যায়’ প্রকল্পও নিচু স্তর পর্যন্ত পৌঁছয়নি।’’

তবে শাস্ত্রীর মতে, ‘‘রাহুল গান্ধীর ইস্তফা দেওয়া কোনও কাজের কথা নয়। ইস্তফা দেওয়া মানে দায়িত্ব থেকে পালিয়ে যাওয়া। বরং এই পরিস্থিতির মুখোমুখি দাড়িয়ে লড়াই করে যেতে হবে।’’

প্রবীণ নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, নিজের আশপাশে রাহুল যাদের রেখেছেন, তারাই ভুল পরামর্শ দিয়েছেন। এই সব ফাঁক ভরাট করে নতুন চিন্তাভাবনা নিয়ে এগোতে হবে।

এক প্রবীণ নেতা মনে করিয়ে দেন, ‘‘ইন্দিরা গান্ধীও রায়বরেলী কেন্দ্র থেকে রাজ নারায়ণের কাছে হেরে গিয়েছিলেন ১৯৭৭ সালে। সে বারেও হারের ব্যবধান ছিল ৫৫ হাজারের।

এ বারেও অমেঠীতে রাহুলের হারের ব্যবধান এতটাই। কংগ্রেস অনেক ওঠাপড়া দেখেছে। আবার মাথা তুলে দাড়িয়েছে। এটা এমন নতুন কিছু ঘটনা নয়।’’

যদিও রাহুলের পদত্যাগের সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনার মধ্যেই আজ উত্তরপ্রদেশে দলের সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিতে চেয়েছেন রাজ বব্বর।

অমেঠীতে দলের হারের দায় নিয়ে সেই জেলা কমিটির সভাপতিও ইস্তফা দিয়েছেন। কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ নেতারা বলছেন, এ তো রাহুলকে আড়াল করার ‘ছল’।

তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার

এমএইচ/