জিহ্বার মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা
ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরী :
প্রকাশিত : ০২:০৩ পিএম, ২৬ মে ২০১৯ রবিবার
কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অন্যতম মাধ্যমগুলোর মধ্যে জিহ্বা হলো একটি। স্রষ্টার প্রশংসা করা, আল্লাহর অপছন্দনীয় কথাবার্তা থেকে বিরত রাখা এবং অন্যকে আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া ইত্যাদি হলো জিহ্বা দ্বারা কৃতজ্ঞতা।
স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য জিহ্বাকে যথাসম্ভব আল্লাহর স্মরণ ও প্রশংসা দ্বারা সিক্ত রাখতে হবে। যখনই সুযোগ পাওয়া যায় তখনই আল্লাহর প্রশংসা করতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন জিহ্বা দ্বারা উচ্চারিত বাক্য অন্তরের সঙ্গে যোগাযোগবিহীন যান্ত্রিক বুলিতে রূপান্তরিত না হয়। মুসা (আ.) আল্লাহর কাছে আরজ করলেন, হে আল্লাহ আপনার শোকর কীভাবে আদায় করব। আল্লাহ জানালেন, তোমার জবান যেন সর্বদা জিকিরের সঙ্গে তরতাজা থাকে। আসুন আমরা আল্লাহর প্রশংসাকে প্রাত্যহিক জীবনের অংশ করে নেই।
যখনই ঘুম থেকে ওঠেন বা ভালো খাবার খান, একটি কাজ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেন, যাতায়াতের জন্য রিকশা বা যানবাহন পেয়ে যান, জোরে আলহামদুলিল্লাহ বলুন।
ঘুমাতে যাওয়ার সময়, বিছানায় শোয়া অবস্থায় জাগ্রত হলে, ঘুম ভাঙ্গার পর, যানবাহনে উঠার সময়, খাবারের সময় আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করুন এবং তাঁর প্রশংসা করুন।
জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণে রাখাটাও কৃতজ্ঞতার অংশ। জিহ্বা থেকে নিঃসৃত প্রতিটি কথাই মেপে বলুন। কেননা মুখ নিঃসৃত প্রতিটি কথা বাতাসে হারিয়ে যায় না বরং তা লিপিবদ্ধ হয়ে যায় বাণী সংরক্ষক ফেরেশতার মাধ্যমে। আল কুরআনে বলা হয়েছে ‘কোন কথাই তার মুখে আসে না, তবে একজন পর্যবেক্ষক তার কাছে উপস্থিত থাকে।’ (সূরা ক্বাফ ৫০/১৮) যদি কল্যাণকর কথা বলার ব্যাপারে নিশ্চিত না হন, যদি বেহুদা কথা বলার ব্যাপারে শংকিত থাকেন তাহলে চুপ থাকুন।
আল্লাহর রাসূল (সা.) অকল্যাণকর কথা বলার চেয়ে মৌন থাকাকে উত্তম বলেছেন। তাই আমাদের যথাসম্ভব মৌন থাকার অভ্যাস করা উচিত। জিহ্বাকে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা, গীবত, চোগলখোরী, অপবাদ, অশ্লীলতা, অন্যকে মন্দ নামে ডাকা বা পরিহাস করা, চাটুকারিতা করা থেকে বিরত রাখা উচিত। কেননা অতিরিক্ত কথা বলা এত মারাত্মক যে বেঁফাস কথা বলার মাধ্যমে মানুষ হঠাৎ করে জাহান্নামের দ্বারপ্রান্তে চলে যায়।
যদি লেখনী, বক্তৃতা, সভা-সমাবেশের মাধ্যমে, গান গজলের মজলিশে বা বন্ধু-বান্ধবের মহলে সুকৌশলে সুন্দরভাবে আল্লাহর জ্ঞান, পরিকল্পনা, মহিমা বা করুণাকে প্রকাশ বা প্রচার করা হয় তাও জিহ্বার মাধ্যমে কৃতজ্ঞতার মধ্যে গণ্য হবে।
জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে অন্তরে স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা সঞ্চারিত করতে হবে এবং সম্ভব হলে তা জিহ্বার মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে। যখন কথার মাধ্যমে শোকরিয়াকে প্রকাশ করা হয় তা হয় হামদ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিবিধ পরিস্থিতিতে হামদ বা সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা করা ও প্রার্থনাকে একই বৃত্তে বেঁধে ফেলতে হবে, যাতে সব সময় শোকর গোজার ও বিনয়ী থাকা যায়।
মোটকথা শুধু অন্তর দিয়ে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা পোষণ করলেই চলবে না, জিহ্বার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা করতে হবে। এ জন্য সারাদিন বিবিধ কর্মকাণ্ডের অছিলায় স্রষ্টার প্রশংসা করার সুযোগ নিতে হবে।
(শোকরিয়া, প্রশান্তি ও প্রাচুর্যের রাজপথ গ্রন্থ)
এএইচ/