ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পদত্যাগে অনড় রাহুল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:৪৮ পিএম, ২৬ মে ২০১৯ রবিবার

লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর পদত্যাগ নাটক এখন কংগ্রেস শিবির জুড়ে আলোচনার শীর্ষে। ফল ঘোষণার পরপরই পদত্যাগের ধোয়া ওঠে কংগ্রেস দলপতির।

শুক্রবার কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে সরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন রাহুল। শনিবার দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে নির্বাচনে ভরাডুবির কারণ খোঁজার চেয়ে রাহুলের পদত্যাগের ঘোষণায় তাকে ফেরানোর ‍আলোচনাই বেশি গুরুত্ব পায়।

সে বৈঠকে রাহুলের পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে খারিজ করে দেন ওয়ার্কিং কমিটি। কিন্তু, নিজের পদত্যাগের সিদ্ধান্তে অনড় রাহুল। এমনকি তিনি তো বটেই, নতুন দলপতি নির্বাচনে গান্ধী পরিবারের বাহিরে কাউকে ভাবার পরামর্শ দিয়েছেন দলের প্রথম সারির নেতাদের।

আজ রোববার সকালে ওয়ার্কিং কমিটিতে যোগ দেওয়ার আগে সবাই ভেবেছিলেন রাহুল ওয়ার্কিং কমিটিরি সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে সভাপতি পদে থাকবেন।

কিন্তু নিজের ইস্তফা নিয়ে রাহুল যে এমন জেদ ধরে থাকবেন, সেটি ভাবতেই পারেননি কেউ।

দলের এক নেতা জানান, কমিটির সব নেতা সমস্বরে তাকেই দায়িত্বে থাকতে বলেছেন। পি চিদম্বরম তো কেঁদেই ফেলেছেন।

আগেভাগে প্রস্তাব পেশ করে রাহুলের হাতেই সংগঠনের আমূল পরিবর্তনের ভার তুলে দিয়েছে কমিটি। তা সত্ত্বেও ইস্তফায় অনড় রাহুল।

রাহুল বলেন, গান্ধী পরিবারের বাইরের কারও হাতে এই দায়িত্ব তুলে দেওয়া হোক। এই নিয়ে কোনও আপস হবে না। এর পরেই রাহুল-প্রিয়ঙ্কা বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান। অন্য সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললেও, আজ তাও বলেননি। প্রিয়াঙ্কাও চলে গেছেন আলাদাভাবে। 

ক্ষমাতাসীন বিজেপি দীর্ঘদিন থেকেই অভিযোগ করে আসছেন, ‘‘পরিবারতন্ত্র থেকে ভিন্নকিছু কংগ্রেস ভাবতে পারে না।

তবে এটা সত্য যে রাহুলের পরেও কংগ্রেসের হাল গান্ধী পরিবারেই থাকবে। প্রিয়াঙ্কার সন্তানরা ভবিষ্যতে কংগ্রেসের হাল ধরবেন এটাই দিবালোকের ন্যায় সত্য।

লোকসভায় বিপর্যয়ের পর রাহুল আর কোনও আঙুল তোলার সুযোগ দিতে চাইছেন না।

বৈঠকের গোটা সময়জুড়ে, সোনিয়া গান্ধী একটিও কথা বলেননি। অনেকটা যেন দর্শকের ভূমিকায় তিনি।

তবে মুখ খুলেছেন রাহুল। বলেন, তিনি দলের জন্য অন্য যে কোনও কাজ করবেন। লড়াই জারি রাখবেন। সংসদের নেতাও হতে পারেন। আরও তিনটি বিকল্প দিয়েছেন। কিন্তু সভাপতি থাকবেন না।

প্রিয়াঙ্কাও বলেন, বিজেপি এটাই চায়, রাহুল গান্ধী সভাপতি পদ থেকে সরে যান। রাহুল ইস্তফা দিলে বিজেপিরই ফাদে পা দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

চিদম্বরম কেঁদে ফেলে বলেন, সবে দক্ষিণ ভারত থেকে রাহুল জিতে এসেছেন। রাহুল ইস্তফা দিলে দক্ষিণের সমর্থকরা আত্মহত্যাও করতে পারেন।

পরে সাংবাদিকদের গুলাম নবি আজাদ জানান, ‘‘সভাপতি হওয়ার আগে থেকেই গত পাঁচ বছর ধরে রাহুল গান্ধী প্রচার করেছেন। নানা বিষয়ে সরকারকে চেপে ধরেছেন। তাঁর নেতৃত্ব জনতাও চোখে দেখেছেন। তাই আজ তিনি যখন ইস্তফার কথা বলেন, তখন গোটা কমিটি ঐকমত্য হয়ে বলেছে, আপনি অনেক ভালো কাজ করেছেন। সবাই আপনার নেতৃত্বেই কাজ করবেন। সংগঠনের আমূল বদলের জন্য যা যা করার করুন।

দলের প্রথম সারির নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘দলের সভাপতির পাশাপাশি কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির সিদ্ধান্তই সর্বোচ্চ। আর ওয়ার্কিং কমিটি আজ যে প্রস্তাব সর্বসম্মতিতে পাশ করেছে, তাতে স্পষ্ট লেখা আছে— রাহুল গান্ধী ইস্তফা দিতে চেয়েছেন, কিন্তু ওয়ার্কিং কমিটি খারিজ করেছে।

কমিটির আবেদন, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তারই নেতৃত্ব দরকার। সে কারণে কমিটি রাহুল গান্ধীকেই সময় বেঁধে সংগঠনের দ্রুত আমূল পরিবর্তন ও প্রসারের অধিকার তুলে দিয়েছে।’’

কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা বলেন, বিজেপি যাই বলুক, গান্ধী পরিবার বরাবরই গোটা দলকে ধরে রাখে। অতীতে দলের নেতৃত্ব থেকে যখন গান্ধী পরিবারকে দূরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে, তখন দল ভেঙে টুকরো টুকরো হয়েছে।

এখন আর সেই ঝুঁকি নেওয়ার কোনও অবস্থা নেই। তার উপর রাহুল লড়াকু। তিনি যদি সরে যান, তা হলে কেই বা দলকে নেতৃত্ব দিতে পারেন?

বড়জোর সনিয়া গান্ধীকে সাময়িকভাবে কার্যনির্বাহী সভাপতি করা যায়। রাহুলের নেতৃত্বেই হালে গোবলয়ের তিনটি রাজ্য কংগ্রেস দখল করেছে। মোদী-শাহের গড় গুজরাতেও বিজেপিকে ধরাশায়ী করা গেছে। ভোটে হার-জিত থাকেই। দলে অনেক ত্রুটি, ঘাটতি আছে। সেটি রাহুলই সবার সঙ্গে বসে ঠিক করবেন।

তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার।

 

আই// এসএইচ/