সব কর্মকাণ্ডই রেকর্ড হয় আমলনামায়
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৭:৫৪ পিএম, ২৭ মে ২০১৯ সোমবার
কর্মের স্বাধীনতা দেওয়া হলেও মানুষ জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নয়। তার কর্মের যথাযথ ফল সে পাবে। আমলনামায় সব কার্যকলাপ, ছোট-বড় সবকিছু রেকর্ড হয়েছে সুরক্ষিত প্রক্রিয়ায়। এই আমলনামার ভিত্তিতে শেষ বিচারের দিন কর্মফল পাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আল্লাহ।
আমলনামা সম্পর্কে কুরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন : ‘আল্লাহর সঙ্গে যারা শরিক করে, এ শিরকের মাধ্যমে তারা নিজেরাই সত্য অস্বীকার করছে। অতএব শরিককারীরা কখনোই মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণকারী হতে পারে না। শিরক ওদের সব আমল বরবাদ করে দিয়েছে। জাহান্নামেই থাকবে ওরা চিরকাল।’ (সূরা তওবা ১৭)
‘আমি প্রত্যেক মানুষের আমলনামাকে (কর্মবিবরণের রেকর্ড) তার গলার সঙ্গে যুক্ত করেছি। মহাবিচার দিবসে এ রেকর্ড তার সামনে দৃশ্যমান করে বলব, ‘পড়ো তোমার আমলনামা। আজ তুমি নিজেই নিজের হিসাব-নিকাশের জন্যে যথেষ্ট।’ (সূরা বনি ইসরাইল ১৩-১৪)
‘এরপর হাজির করা হবে আমলনামা। পাপীরা এতে ওদের কার্যকলাপের বিবরণ দেখামাত্র আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে উঠবে। আর ওরা বলবে, হায়! দুর্ভাগ্য আমাদের! এ কেমন কিতাব! ছোট-বড় কিছুই বাদ দেয়নি। এতে সবকিছুরই রেকর্ড রয়েছে। ওরা যা যা করেছে সব এখন ওদের চোখের সামনে। (তখন ওরা বুঝবে) তোমাদের প্রতিপালক কারো প্রতিই অন্যায় করেন না।’ (সূরা কাহাফ ৪৯)
‘পৃথিবী তার প্রতিপালকের নূরে উদ্ভাসিত হবে। আমলনামা উন্মুক্ত করে পেশ করা হবে। নবী-রাসূল ও সব সাক্ষীকে হাজির করা হবে। সবার প্রতি ন্যায়বিচার করা হবে, কারো ওপরই অন্যায় করা হবে না।’ (সূরা জুমার ৬৯)
‘মহাকাশ ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহর। যেদিন কেয়ামত হবে সেদিন মিথ্যাপন্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, প্রত্যেক দলই হবে ভয়ে নতজানু। প্রত্যেক দলকেই তাদের রেকর্ড (আমলনামা) দেখতে ডাকা হবে। তাদের বলা হবে, ‘তোমরা যা করতে তার প্রতিফলই আজ তোমাদের দেওয়া হবে।’ এ হচ্ছে তোমাদের কাজের রেকর্ড, যা তোমাদের ব্যাপারে সত্য সাক্ষ্য দেবে। তোমাদের সব কর্মকাণ্ডই রেকর্ড করা আছে এখানে।’ (সূরা জাসিয়া ২৭-২৯)
‘ওদের সমস্ত কার্যকলাপ, ছোট-বড় সবকিছু রেকর্ড হয়েছে সুরক্ষিত প্রক্রিয়ায়-ওদের আমলনামায়।’ (সূরা কামার ৫২-৫৩)
‘যখন তারকারাজি নিজেদের আলো হারাবে, যখন পর্বতমালা মরীচিকার ন্যায় উধাও হবে, যখন পূর্ণ গর্ভবতী উটনী পরিত্যক্ত হবে, যখন সব বন্যপশুকে একত্র করা হবে, যখন সমুদ্রের জলরাশি স্ফীত হবে, যখন দেহে আবার আত্মা সংযুক্ত হবে, যখন জীবন্ত কবর দেওয়া শিশুকন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল? যখন প্রত্যেকের আমলনামা দেখানো হবে, যখন আকাশের আবরণ সরানো হবে, যখন জাহান্নামের আগুন গনগনে লাল করা হবে, যখন জান্নাতকে দৃশ্যমান করা হবে, সেদিন প্রত্যেকেই জানতে পারবে, কী পরিণতির জন্যে সে নিজেকে প্রস্তুত করেছে (বুঝতে পারবে কী করা উচিৎ ছিল, আর কী করা উচিৎ হয়নি)। (সূরা তাকভির ২-১৪)
আমলনামা ডান হাতে : ‘ভাবো সেই দিনের কথা, যেদিন সব মানুষকে সমবেত করবো। জীবনে যা-কিছু করেছে তার বিচার করে (আমলনামা তৈরি করা হবে)। যাদের আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে, তারা (তৃপ্তির সঙ্গে) তাদের আমলনামা পড়বে। তাদের ওপর সামান্য পরিমাণও অবিচার করা হবে না।’ (সূরা বনি ইসরাইল ৭১)
‘সেদিন যার আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে, তার হিসাব-নিকাশ হবে খুবই সহজ। সে তার প্রিয়জনদের কাছে আনন্দিত চিত্তে ফিরে যাবে।’ (সূরা ইনশিকাক ৭-৯)
আমলনামা বাম হাতে: ‘মহাবিচার দিবসে যার আমলনামা বাম হাতে দেওয়া হবে, সে আর্তনাদ করে বলবে, ‘হায়! আমাকে যদি আমার আমলনামা দেওয়া না হতো আর আমি যদি আমার রেকর্ড না দেখতাম! হায়! আমার দুনিয়ার মৃত্যুই যদি চূড়ান্ত হতো! আমার ধন-সম্পত্তি তো কোনো কাজে এলো না। আর আমার ক্ষমতাও তো হাতছাড়া হয়ে গেছে।’ (সূরা হাক্কা ২৫-২৯)
আমলনামা পেছন থেকে দেওয়া হবে : ‘সেদিন যার আমলনামা পেছন দিক থেকে দেওয়া হবে, সে তখন মৃত্যু কামনা করবে। আর সে ঝলসাতে থাকবে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে। দুনিয়ায় সে তার স্বজনদের সঙ্গে আনন্দেই ছিল। তখন সে ভাবত, কোনদিনই তাকে আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে না। নিশ্চয়ই সে আল্লাহর কাছে ফিরে যাবে, তার প্রতিপালক তার সব কাজকর্মই পর্যবেক্ষণ করছেন।’ (সূরা ইনশিকাক ১০-১৫)
এসএইচ/