ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

ময়মনসিংহে পুতুল নাট্য কর্মশালা শেষ হচ্ছে মঙ্গলবার

জাককানইবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৯:১৬ পিএম, ২৭ মে ২০১৯ সোমবার

বাংলার হাজার বছরের নাট্যকলার ইতিহাস অনুসন্ধানের ধারায় ‘পুতুল নাট্য’ আদি ও ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে। বলা হয়ে থাকে যে, সকল অভিনয় কলায় আদিতে ছিল পুতুল নাট্য। খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতকে প্লবক, কুহক প্রভৃতি ভ্রাম্যমান আনন্দ বিনোদনকারী সম্প্রদায় পুতুল নাচিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো বলে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

নাটক জীবনবোধ জাগিয়ে তুলে, নাটক অন্তর্নিহিত সত্তাকে জাগিয়ে তুলে। পুতুল নাট্য নাটকের নানান দিকের একটি বিশেষ শাখা। কালের আবর্তে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে আবহমান বাংলার এই চমৎকার শিল্প বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে। আর সেই সময় ময়মনসিংহের অন্যতম সাংস্কৃতিক প্লাটফর্ম অনসাম্বল থিয়েটারের আয়োজনে চলছে পুতুল নাট্য বিষয়ক চমৎকার একটি কর্মশালা।

ময়মনসিংহের কাচারীঘাটে অনসাম্বল থিয়েটারের আয়োজনে পুতুল নাট্য কর্মশালাটি চলবে ২৮মে পর্যন্ত। ৭ দিনের এই কর্মশালাটির মাধ্যমে অনসাম্বল চেষ্টা করছে নতুন প্রজন্মের কাছে সংস্কৃতির এই বিশেষ শাখাটির পুনঃজাগরণ ঘটাতে। অনসাম্বল থিয়েটার মূলত সুস্থ নাট্যচর্চার পাশাপাশি সংস্কৃতির নানান ধারায় বিচরণ করে থাকে।

এছাড়াও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনরোধ করতে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মানসূচক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা নিশ্চিত করতে, মানবিক সমাজ বিনির্মানে সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটাতে, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ জাগানোর মাধ্যমে সুস্থ সমাজ প্রতিষ্ঠায় অনসাম্বল থিয়েটার ময়মনসিংহের অপ্রতিদ্বন্দ্বী সাংস্কৃতিক প্লাটফর্ম।

কর্মশালাটিতে প্রশিক্ষকের ভূমিকায় আছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী পুতুল নাট্য পরিচালক মায়িশা ফাহমিদা নিধি। মায়িশা একাধারে একজন পুতুল নাট্য পরিচালক, উপস্থাপিকা, আবৃত্তিশিল্পী, মঞ্চ অভিনেত্রী এবং চিত্রশিল্পী।

পুতুল নাট্য কর্মশালার ব্যাপারে নিধির প্রত্যাশা তাঁর মাধ্যমে যদি কেউ এ শিল্পটিকে রপ্ত করে চর্চা করতে পারে আর এই শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখতে ভূমিকা রাখে তবে এটুকু তার বিশেষ প্রাপ্তি।

এবিষয়ে অনসাম্বল থিয়েটারের সভাপতি ও নাট্য ব্যক্তিত্ব আবুল মনসুর বলেন,‘পুতুল নাচের ইতিহাস অতিপ্রাচীন। পুতুল নাচ লোকনাট্যের একটি প্রাচীন মাধ্যম। বাংলাদেশে পুতুল নাচের হাজার বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। বলাবাহুল্য একসময় উপমহাদেশে এর বহুমাত্রিক প্রচলন ছিলো এবং বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থী শিবিরে পুতুল নাচের মাধ্যমে সেই সময়কার পাক-হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কাহিনী তুলে ধরা হতো। পুতুল নাচের মাধ্যমে শরণার্থী শিবিরের অসহায় মানুষ নতুন দেশের স্বপ্ন দেখতো। তাই পুতুল নাচ নিছক কোন বিনোদন নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলনও বলা চলে। এটি আমাদের সাংস্কৃতিক সম্পদ।

এই সম্পদকে বর্তমানে যান্ত্রিক সভ্যতা ও স্যাটেলাইটের যুগে যুগোপযোগী ও একবিংশ শতাব্দীর প্রাসঙ্গিক করে তোলাই আমাদের উদ্দেশ্য।

অনসাম্বল থিয়েটারের সকল কর্মীরাই কর্মশালাটি সফল করতে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও এতে ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সঙ্গে জড়িত অনেক সংস্কৃতিজন অংশগ্রহণ করেছেন।

কেআই/