সমর্পণের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা
ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরী :
প্রকাশিত : ১১:৫৬ এএম, ২৮ মে ২০১৯ মঙ্গলবার
আকাশ-পৃথিবীর সবকিছু যেভাবে প্রশ্নাতীতভাবে স্রষ্টায় সমর্পিত, সেভাবে সমর্পিত না হওয়া পর্যন্ত সঠিক মানের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। গাছ, পাখি, সূর্য, চন্দ্র বা সমুদ্র যেমন স্রষ্টার উপর প্রশ্ন না তুলে স্রষ্টা নির্ধারিত প্রোগ্রাম অনুযায়ী চলে তেমনি মানুষের উচিত স্বেচ্ছায় স্রষ্টার বিধানের কাছে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে সমর্পিত করে দেওয়া।
আল্লাহতায়ালা তাকে সেই কাজ করারই তৌফিক বা সক্ষমতা দান করেন যা ইহকাল ও পরকালে কল্যাণকর। এভাবে তার প্রশান্তি খ্যাতির প্রাচুর্য হাত ধরাধরি করে চলা শুরু করে। স্রষ্টায় সমর্পণের স্বর্ণপথ ধরে মানুষের আত্মা নশ্বর জীবনের শেকল ভেঙ্গে অনন্ত প্রশান্তির জগতে প্রবেশ করে।
একজন মানুষ যখন স্রষ্টার কাছে সমর্পিত হয়ে যায় তখন স্রষ্টা যে উদ্দেশ্যে তাকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তার বাস্তবায়ন শুরু হয় ও স্রষ্টার কল্যাণময়তা ওই মানুষের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হতে থাকে।
যে সমর্পিত সে স্রষ্টার বিধানের উপর প্রশ্ন তোলা থেকে বিরত থাকে। এভাবে যে সমর্পিত হয় তাকে শয়তান অকৃতজ্ঞতার সুঁড়সুঁড়ি দিতে পারে না। আসলে সমর্পণের পথ ধরেই শয়তানের আক্রমণ থেকে বাঁচা যায়। এ জন্যই আল্লাহতায়ালা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ না করা এবং সমর্পিত হওয়ার নির্দেশ একসঙ্গে দিয়েছেন।
‘হে বিশ্বাসীগণ। তোমরা পুরোপুরি সমর্পিত হও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না।’ (সূরা বাকারা ০২/২০৮)
আল্লাহতায়ালা শুধু সমর্পণের নির্দেশ দিয়েই ক্ষান্ত হননি বরং সমর্পিত না হয়ে মৃত্যুবরণ না করার নির্দেশ দিয়েছেন। মৃত্যু কখন আসে কেউ জানে না। তাই যে সবসময় সমর্পিত থাকে শুধু তারই পক্ষে মৃত্যুর সময় সমর্পিত থাকা সম্ভব। অন্য কথায় আল্লাহতায়ালা সর্বাবস্থায় সমর্পিত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
‘হে বিশ্বাসীগণ তোমরা পুরোপুরি সমর্পিত না হয়ে মারা যেও না।’ (আল ইমরান ০৩/১০২)
আমাদের প্রত্যেকের উচিত সর্বাবস্থায় স্রষ্টার প্রতি সমর্পিত থাকা, যাতে আমরা সমর্পিত অবস্থায় মৃত্যুর দুয়ার পার হয়ে অনন্ত প্রশান্তির বলয়ে প্রবেশ করতে পারি।
যখনই একজন মানুষ তার সমগ্র সত্তাকে স্রষ্টার কাছে সমর্পিত করে দেয় তখন স্রষ্টার ইচ্ছাই তার ইচ্ছায় রূপান্তরিত হয় এবং তার জীবনে স্রষ্টার পক্ষ থেকে আরোপিত দুঃখ বা সুখ, ব্যর্থতা বা সাফল্য, অসুস্থতা বা সুস্থতা, অপ্রান্তি বা প্রাপ্তি, দারিদ্র্য বা প্রাচুর্য সবই স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতায় রূপান্তরিত হয়।
আসুন আমাদের সমস্ত কর্মকাণ্ডকে শুধু তাঁর উদ্দেশে নিবেদিত করি। হে প্রভু আমাদের সমস্ত সত্তাকে তোমার কাছে সমর্পিত করে দিলাম। আমাদের সমস্ত অর্জন, সমস্ত মেধা, সৃজনশীলতা এবং দক্ষতাকে তোমার সন্তুষ্টির উদ্দেশে নিবেদন করলাম।
(শোকরিয়া। প্রশান্তি ও প্রাচুর্যের রাজপথ গ্রন্থ)
এএইচ/