রমজানে নাক, কান, গলার সমস্যায় করণীয় (ভিডিও)
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:৩৩ পিএম, ২৮ মে ২০১৯ মঙ্গলবার
রমজানে আমরা সারাদিন সবধরণের খাবার থেকে বিরত থাকি। তার উপর এখন আমরা প্রচুর তাপদাহে ভুগছি। ফলে আমরা ইফতারিতে প্রচুর ঠান্ডা পানি, শরবত খেয়ে থাকি। একই সঙ্গে বাহিরে থেকে এসেই আমরা এসি বা ফ্যানের বাতাসে শরীর ঠান্ডা রাখতে অভ্যস্ত। কিন্তু আমরা হয়তো জানি না যে- এতে করে ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। এরমধ্যে নাক, কান ও গলার সমস্যা অন্যতম।
এসব সমস্যায় করণীয় সম্পর্কে একুশে টিভির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন ইমপালস হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট- ডা. জাহীর আল-আমিন।
একুশে টিভি : সারাদিন অভুক্ত থেকে আমরা রোজা পালন করছি। পানিসহ সবধরণের খাবার থেকে বিরত থাকছি। সেই সঙ্গে ইফতারিতে প্রচুর ঠাণ্ডা পানি কিংবা শরবত খাচ্ছি। এতে গলার কি সমস্যা হতে পারে?
ডা. জাহীর আল-আমিন : একজন অ্যাথলেট যখন দৌঁড় দেয়, তখন সে ধীরে ধীরে তার দৌঁড়ের গতি বাড়ায়। তেমনিভাবে সবকিছুর একটা নিয়ম আছে।
সারাদিন প্রচুর গরমের মধ্যদিয়ে সবধরণের পানাহার থেকে বিরত থেকে আমরা রোজা রাখছি। এক্ষেত্রেও, একই অবস্থা।
ইফতারিতে কোনভাবেই একেবারে ঠান্ডা পানি বা শরবত পান করা উচিত নয়। আর যাদের এলার্জি আছে তাদের একেবারেই উচিত না।
আবার যাদের কোন সমস্যা নেই, তাদের উচিত নরমাল পানি খাওয়ার কমপক্ষে ১০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি পান করা। শুধু পানি নয়, অন্যান্য খাবারও ইফতারের সময় অধিক পরিমাণ খাওয়া ঠিক নয়। আস্তে আস্তে খাওয়া উচিত। তাহলে সেটা আমাদের স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর কোন প্রভাব ফেলবে না।
একুশে টিভি : রমজানের এ সময়টাতে নাক, কান ও গলার কি ধরণের সমস্যা নিয়ে রোগীরা আপনাদের নিকট আসেন?
ডা. জাহীর আল-আমিন : প্রকৃত কথা হলো, রমজানে এই ধরণের কোন সমস্যা হওয়ার কথা না। তারপরও যেটা হয়, তার জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। সারাদিন পানাহার থেকে হঠাৎ ঠান্ডা খেলেই কেবল শ্বাসকষ্ট, সর্দি, হাপানি, টনসিলসহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। তাই, বাহির থেকে এসে ঠান্ডা বাতাস, ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল কিংবা ঠান্ডা জাতীয় খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা দরকার।
আমাদের কাছে যারা নাক, কান কিংবা গলার সমস্যা নিয়ে আসেন তাদের অধিকাংশ রোগী এমনটা করার কারণেই হয়েছে।
একুশে টিভি : অনেক লোক একসঙ্গে নামাজ পড়ায় অনেকেই কাশি দিচ্ছে, এতে জীবাণু ছড়াচ্ছে। ঠাণ্ডার রোগ থাকার পরেও এসি চলছে এমন স্থানে নামাজ আদায় করছেন অনেকে। এটা স্বাস্থ্যের কোন ক্ষতি করছে কিনা?
ডা. জাহীর আল-আমিন : আপনাকে অবশ্যই চিন্তা করতে হবে, আপনি যখন একটা পাবলিক প্লেসে যাচ্ছেন, তখন সেটা থেকে অন্যকে সুরক্ষা দিতে কি ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
আপনার সন্তানের যদি হাম বা জলবসন্তে আক্রান্ত হয়, তাহলে আপনি তাকে কি স্কুলে যেতে দিবেন? অবশ্যই দিবেন না। এখানেও বিষয়টি তেমন। যখন আপনি জীবাণু ছড়ায় এমন রোগে আক্রান্ত হবেন তখন- নিজের ও পার্শ্ববর্তীদের সুরক্ষায় ব্যবস্থা নিবেন।
সেক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। সেই সঙ্গে এসি থেকে দূরে থেকে নামাজ পড়া উচিত। মনে রাখতে হবে- যাতে অন্যরা আপনার থেকে অসুস্থতার শিকার না হন।
একুশে টিভি : দীর্ঘদিন সর্দির কারণে সাইনোসাইটিস বা অন্যকোন রোগ হতে পারে কিনা?
ডা. জাহীর আল-আমিন : অনেক সময় এটা হয়ে থাকে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, অনেকে মনেকরে নাকে ড্রোপ দিলে রোজা ভেঙে যায়। আসলে তা ঠিক নয়।
ওযু করার সময় আমরা নাকে পানি দেই, এতে করে কি আমাদের রোজা ভেঙে যায়? নিশ্চই না। সুতরাং, নাকে ড্রোপ দিলেও রোজা নষ্ট হবে না। তাই, প্রয়োজনে অবশ্যই ড্রোপ, ইনহেলার ব্যবহার করা যাবে।
যদি কারো জ্বর হয়ে থাকে, তাহলে ঔষধ খাওয়ার পরিবর্তে সাপোজিটর ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে রোজার কোন ক্ষতি হবে না।
একুশে টিভি : ইফতারের তালিকায় কি ধরণের খাবার থাকা উত্তম?
ডা. জাহীর আল-আমিন : পরিমিত কিছু পানি, খেজুর, হালিম খাওয়া যেতে পারে। তবে, চেষ্টা করতে হবে ভাজা-পোড়া, তৈলক্ত খাবার পরিহার করা।
আবার রাতে ও সেহরিতে ভরাপেটে খেয়ে ঘুমানো যাবে না। এতে রিফ্লেক্স করতে পারে। এক্ষেত্রে, অধিক খাওয়ার চেয়ে অল্প করে কয়েকবারে খাওয়া যেতে পারে।
আবার যাদের ফুড এলার্জি আছে, তাদের সচেতনতার সঙ্গে খেতে হবে। যেগুলো খেলে চুলকানি, এলার্জি, শরীরে বিভিন্ন দাগ দেখা দেয়, সেগুলো শুধু রমজান নয় সবসময় পরিহার করতে হবে।
আই//