আখেরাত সম্পর্কে কুরআন কি বলে?
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:৪৬ পিএম, ২৯ মে ২০১৯ বুধবার
কুরআন শতাব্দীর পর শতাব্দী জীবন ও জগৎ সম্পর্কে কোটি কোটি মানুষের অন্তর্দৃষ্টি খুলে দিয়েছে আর দিয়েছে প্রশান্ত ও পরিতৃপ্ত জীবন। কুরআন অনুসারীদের মতো আপনিও দুনিয়ায় সফল ও সম্মানিত হবেন। তেমনি আখেরাতের সম্মান তো শুধু স্রষ্টায় সমর্পিত সৎকর্মশীল মানুষদের জন্যেই। যারা আল্লাহর কালামে বিশ্বাসী, আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানেই সুপ্রতিষ্ঠিত ও সম্মানিত করবেন।
আখেরাত সম্পর্কে কুরআনে মহান রাব্বুল আলামীন বলেন : ‘কেউ দুনিয়ায় সাফল্য চাইলে তার মনে রাখা উচিত যে, আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখেরাত-দু’জায়গারই সাফল্য ও পুরস্কার রয়েছে। আল্লাহ সব দেখেন, সব শোনেন।’ (সূরা নিসা ১৩৪)
‘যারা আমার আয়াত এবং আখেরাতকে অস্বীকার করে, তাদের সকল কর্ম নিষ্ফল হবে। নিস্ফলতা ছাড়া পরকালে ওরা আর কী প্রতিফল পেতে পারে (কারণ ওরা তো পরকালই বিশ্বাস করেনি)?’ (সূরা আরাফ ১৪৭)
‘ওদের জন্যে দুনিয়াতেও রয়েছে শাস্তি। আর আখেরাতের শাস্তি তো আরো কঠিন। আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করার জন্যে ওরা কাউকেই পাবে না।’ (সূরা রাদ ৩৪)
‘যারা আল্লাহর কালামে বিশ্বাসী, আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানেই সুপ্রতিষ্ঠিত ও সম্মানিত করবেন। আর জালেমদের তিনি বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত হতে দেন। আল্লাহ তা-ই করেন, যা তিনি ইচ্ছা করেন।’ (সূরা ইব্রাহিম ২৭)
‘তারপর পার্থিব জীবনের আজাব হিসেবে ওদের ওপর কয়েকদিনে পর পর আপতিত হলো বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়। আর আখেরাতের শাস্তি তো হবে আরো কঠিন, সেদিন ওদের সাহায্য করার কেউ থাকবে না।’ (সূরা হা-মিম-সেজদা)
‘আল্লাহর ডাকে কেউ যদি সাড়া না দেয়, তবে সে দুনিয়াতেও আল্লাহকে ফাঁকি দিতে পারবে না, আখেরাতেও কোন অভিভাবক পাবে না। সে সুস্পষ্ট বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত থাকবে।’ (সূরা আহকাফ ৩২)
আখেরাতের পুরস্কারই উত্তম : ‘তুমি কি তাদের দেখনি, তাদের বলা হয়েছিল, (অন্যায় ও সহিংসতা থেকে) তোমরা অস্ত্র সংবরণ করে রাখো, নামাজ কায়েম করো, যাকাত আদায় করো? এরপর যখন আল্লাহর পথে যুদ্ধের নির্দেশ দেয়া হলো তখন তাদের একটি দল আল্লাহর (বিরাগভাজন হওয়ার) ভয়ের মতো ভয় বা তার চেয়েও বেশি ভয় করতে লাগল প্রতিপক্ষের মানুষদের। তারা বলল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! কেন আমাদের ওপর অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ফরজ করলে? আমাদের আর কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন?’ (হে নবী!) তাদের বলো, পার্থিব ভোগ-বিলাস খুবই সামান্য ব্যাপার। আখেরাতই আল্লাহ-সচেতন মানুষের জন্যে অতি-উত্তম। সেখানে তোমাদের ওপর চুল পরিমাণও অবিচার করা হবে না।’ (সূরা নিসা ৭৭)
‘এভাবেই আমি ইউসুফকে সেই দেশে (মিশরে) প্রতিষ্ঠিত করলাম। দেশ পরিচালনায়ও তাকে ক্ষমতাবান করে দেয়া হলো। আসলে যাকেই চাই তাকে আমি আমার রহমতের ছায়ায় ধন্য করি। সৎকর্মশীলদের কর্মফল আমি কখনো নষ্ট করি না। আর যারা বিশ্বাসী ও আল্লাহ-সচেতন, তাদের জন্যে আখেরাতের পুরস্কারই উত্তম।’ (সূরা ইউসুফ ৫৬-৫৭)
‘আর যারা আল্লাহ-সচেতন ছিল, তাদের যখন জিজ্ঞেস করা হবে, ‘তোমাদের প্রতিপালক কী নাজিল করেছিলেন?’ তারা জবাবে বলবে, ‘মহাকল্যাণ’। যারা সৎকর্মে লেগে থাকে, দুনিয়ায় তাদের জন্যে রয়েছে কল্যাণ আর আখেরাতের আবাস তাদের জন্যে আরো উত্তম। আল্লাহ-সচেতনদের আবাস কতই না উত্তম! তারা প্রবেশ করবে জান্নাতে, যার পাদদেশে থাকবে প্রবহমান ঝর্ণাধারা, তারা যা-ই চাইবে, তা-ই সেখানে তাদের জন্যে থাকবে। আল্লাহ-সচেতনদের তিনি এভাবেই পুরস্কৃত করেন। পবিত্র থাকা অবস্থায়ই ফেরেশতারা তাদের বলবে, ‘তোমাদের ওপর শান্তি। তোমরা তোমাদের সৎকর্মের পুরস্কার হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (সূরা আন-নহল ৩০-৩২)
‘নিশ্চয়ই পরকালের সাফল্যই মহাসাফল্য। আর এ সাফল্য অর্জনের জন্যেই সৎকর্মশীলদের আল্লাহর পথে প্রাণান্ত পরিশ্রম করা উচিত!’ (সূরা সাফফাত ৬০-৬১)
যারা আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্ত : ‘(হে নবী! ওদের বলো) তোমাদের আচরণ তো তোমাদের পূর্বসূরি মুনাফেকদের মতোই। অবশ্য ওরা ক্ষমতা ও ধনসম্পত্তিতে ছিল তোমাদের চেয়েও প্রবল। আর ওদের সন্তান-সন্তুতিও ছিল তোমাদের চেয়ে অনেক বেশি। ওরা যেমন পার্থিব জৌলুস উপভোগ করেছিল, তোমরাও ভোগ করেছ তোমাদের পার্থিব জৌলুস। ওরা যেমন (সত্য নিয়ে) অনর্থক তর্কবিতর্ক, আলাপ-আলোচনায় মত্ত থাকত, তোমরাও তেমনি অহেতুক তর্ক-বিতর্ক ও আলাপ-আলোচনায় নিমগ্ন রয়েছ। ওদের সকল কাজ দুনিয়াতে নিষ্ফল হয়েছে, আখেরাতেও ওরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। চূড়ান্ত বিচারে ওরাই ব্যর্থ (আর অনুশোচনা না করলে তোমাদের পরিণতিও হবে চূড়ান্ত ব্যর্থতা)।’ (সূরা তওবা ৬৯)
‘যে এই উপদেশ (কুরআন) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে মহাবিচার দিবসে পাপের দুর্বহ বোঝা বহন করবে। আসলে সারাজীবনই এই বোঝা বইবে তারা। আর মহাবিচার দিবসে এ বোঝা কতই না পীড়াদায়ক হবে! (সূরা তাহা ১০০-১০১)
‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, (মহাবিচার দিবসে) তারা হবে সবচেয়ে লাঞ্ছিত।’ (সূরা মুজাদালা ২০)
‘মহাবিচার দিবসে দুর্ভোগ তাদের জন্যে, যারা সত্য অমান্য করে!’ (সূরা মুরসালাত ৪৯)
এএইচ/