ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৯ ১৪৩১

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নতুন করে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:৫০ পিএম, ৩০ মে ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৪:১৭ পিএম, ৩০ মে ২০১৯ বৃহস্পতিবার

রোহিঙ্গা গণহত্যায় অভিযুক্ত মিয়ানমারের সেনাবাহীনির বিরুদ্ধে নতুন করে নির্যাতন ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠেছে। লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এমন অভিযোগ এনেছে।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিন্ন জাতির বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী গেরিলা বাহিনীর সদস্যরা সেনাবাহিনীর হাতে ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার হওয়ার পাশাপাশি বিচার বহির্ভূত হত্যা এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

তবে, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে দেশটির সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বিভাগ।

২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। এ বছর ঐ এলাকায় নতুন করে অভিযান শুরু করে সে দেশের সেনাবাহিনী।

আরাকান আর্মি বিদ্রোহীদের ‘নিশ্চিহ্ন’ করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা আসার পর ঐ অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্যটিতে বেশ কয়েকটি ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করে, যাদের মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইনরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।

বুধবার প্রকাশ হওয়া অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয় যে, সেনাবাহিনীর ‘ঢালাওভাবে চালানো হামলায়’ বেসামরিক নাগরিকরাও নিহত হয়েছে।

পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অ্যামনেস্টির আঞ্চলিক পরিচালক নিকোলাস বেকেলিন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সঙ্গে হওয়া সহিংসতায় পুরো পৃথিবীর মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করলেও, ঐ ঘটনার দুই বছর না পেরোতেই নতুন করে ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ওপর রাখাইন রাজ্যে আবারো ভয়াবহ অত্যাচার চালাচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।’

সেনাবাহিনী এবং বিদ্রোহকারীদের মধ্যে হওয়া সাম্প্রতিক সংঘাতে ৩০ হাজারেরও বেশি বেসামরিক বৌদ্ধ নাগরিক গৃহহীন হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হামলার শিকার হওয়া এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এবং নানারকম ছবি, ভিডিও এবং স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি যাচাই করে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে অ্যামনেস্টি।

এ বছর রাখাইন এলাকায় নতুন করে সেনা অভিযান শুরু করে মিয়ানমার আর্মি।

রিপোর্টে অন্তত ৭টি আক্রমণের তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরা হয়, যেগুলোতে অন্তত ১৪ জন বেসামরিক ব্যক্তি মারা গেছে এবং অন্তত ২৯ জন আহত হয়েছে। এছাড়া নির্যাতন, গুম এবং গণগ্রেপ্তারের বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরা হয় ঐ প্রতিবেদনে।

গতমাসে সমালোচনার মুখে মিয়ানমারের সেনারা ৬ জন বেসামরিক ব্যক্তিকে হত্যার কথা স্বীকার করেছিল।

তাদের দাবি ছিল, ঐ বেসামরিক নাগরিকরা তাদের বন্দুক ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিল। সেজন্য তারা তাদের হত্যা করতে বাধ্য হয়।

তবে তাদের বিরুদ্ধে অ্যামনেস্টির আনা সাম্প্রতিক অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মিয়ানমার আর্মির মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাও মিন তুন।

সংবাদ সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেছেন, সেনাবাহিনী আইন অনুযায়ী অভিযান চালিয়েছে এবং ‘বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি করা থেকে বিরত থেকেছে।’

তিনি বলেন, ‘এই অভিযানটি ছিল সন্ত্রাসবাদীদের নির্মূল করা। কোনো ধরণের যুদ্ধাপরাধ যেন না সংঘটিত হয় সেবিষয়ে আমরা সতর্ক ছিলাম।’

শুধু বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি করাই নয়, সেনাবাহিনী তাদের নির্যাতন করেছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে - এমন অভিযোগও এনেছে অ্যামনেস্টি।

সেনাবাহিনী এবং বিদ্রোহকারীদের মধ্যে হওয়া সাম্প্রতিক সংঘাতে ৩০ হাজারেরও বেশি বেসামরিক বৌদ্ধ নাগরিক গৃহহীন হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্র: বিবিসি

আই//