আড়ংকে জরিমানা করা সেই ম্যাজিস্ট্রেট বদলি, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:০৫ এএম, ৪ জুন ২০১৯ মঙ্গলবার
বদলি করা হলো আড়ংকে জরিমানা করা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মনজুর মো. শাহরিয়ারকে। ওই কর্মকর্তাকে বদলির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে।
মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ দামে কাপড় বিক্রি করায় সোমবার আড়ংয়ের উত্তরা আউটলেটকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা জরিমানা ও ২৪ ঘণ্টা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের এই কর্মকর্তা। যদিও, নিজেদের ভুল স্বীকার করায় পরে প্রতিষ্ঠানটি খুলে দেয়া হয়।
জরিমানা করার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তাকে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর খুলনা জোনে বদলির প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
আগামী ১৩ জুনের মধ্যে তাকে নতুন কর্মস্থল সড়ক ও জনপথ অধিদফতর খুলনা জোনের এস্টেট ও আইন কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিতে বলা হয়েছে।
সোমবার (৩ জুন) সন্ধ্যায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে বদলির আদেশটির প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আগামী ১৩ জুনের মধ্যে এই কর্মকর্তাকে তার বদলি কর্মস্থলে যোগদান করতে হবে, অন্যথায় ১৩ জুন দুপুরে তার বর্তমান কর্মস্থল হতে তাৎক্ষণিকভাবে অবমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) মর্মে গণ্য হবেন।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্তব্যরত কর্মকর্তা ও মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারকে একাধিকবার ফোন দিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি।
এর আগে সোমবার (৩ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উত্তরা জসিমউদ্দিন সড়কে আড়ংয়ের একটি আউটলেটে একই পাঞ্জাবি পাঁচদিনের ব্যবধানে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে সাড়ে চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি আউটলেটটি একদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
জরিমানা করে তিনি অফিসে ফিরে বিকাল পর্যন্ত ছিলেন। তখন তার বদলির আদেশ হয়নি। তবে সন্ধ্যার পর ওয়েবসাইটে এই আদেশটি দেখা যায়।
সেই ম্যাজিস্ট্রেটকে বদলির বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের প্রশাসন ও অর্থ বিভাগের পরিচালক (উপসচিব) মনজুর মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। কি কারণে বদলি করা হয়েছে, তা জানা নেই।’
এদিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের প্রশাসন ও অর্থ বিভাগের পরিচালক (উপসচিব) মনজুর মোর্শেদ চৌধুরীকেও বদলি করা হয়েছে। তাকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ট্যারিফ কমিশনে যুগ্মপ্রধান হিসেবে বদলি করা হয়েছে। সোমবার (৩ জুন) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা আরেকটি আদেশে তাকে বদলি করা হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এই আদেশটি ওয়েব সাইটে আসার পর তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। মুহূর্তেই ফেসবুক ব্যবহারকারীদের প্রোফাইল ও নিউজফিডে ছড়িয়ে পড়ে।
উই আর বাংলাদেশ বা ওয়াব নামের একটি গ্রুপের এডমিন নাহিদ ইসলাম এক গ্রুপ পোস্টে লেখেন, দুদকের চেয়ারম্যান মুনীর চৌধুরী গেলো। বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যানও গেলো। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ও গেলো। এয়ারপোর্ট মেজিস্ট্রেট বানসুরী ইউসুফ ভাই ও গেলো। এবার গেলো শাহরিয়ার ভাই.... অথচ ওয়াসার শরবতের পানি খাওয়ানো অফিসারেরা ঠিকই স্বপদে বহাল আছে!!!
খালিস সাইফুল্লাহ নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নিজ টাইমলাইনে লেখেন, এদেশ অসৎ আর প্রতারক ব্যবসায়ীদের। এয়ারপোর্ট ম্যাজিস্ট্রেট ইউসুফের পর এবার বদলি করা হল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর মঞ্জর মোহাম্মদ শাহরিয়ারকে। আমরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলস্বে তার বদলি প্রত্যাহার করা হোক। আড়ং বয়কট করুন।
আড়ং এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আড়ং ও সবধরনের পণ্য ‘বয়কট’ এর ডাক দিয়েছেন অনেকেই। ইতোমধ্যে হ্যাশ ট্যাগ দিয়ে চালু হয়েছে ‘বয়কট আড়ং ক্যাম্পেইন’ (#boycot_aarong)। আড়ং বয়কটের লোগোযুক্ত ছবি নিজেদের টাইমলাইনে প্রোফাইল পিকচার হিসেবেও দিচ্ছেন অনেকে। এছাড়াও আড়ংয়ের অফিসিয়াল পেইজে ‘লাইক’ এর বদলে ‘আনলাইক’ দিতেও নেটিজেনেরা একে অপরকে আহ্বান জানাচ্ছেন এর ফলাফল দেখা যায় দ্রুততম সময়েই।
এদিকে মঙ্গলবার (৪ জুন) রাত দেড়টার দিকে আড়ংয়ের অফিসিয়াল পেইজে মোট লাইক ছিল ২৪ লাখ ৪৬ হাজার ৪২৫টি। ভোর ছয়টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পেইজটিতে বর্তমান লাইক সংখ্যা ২৪ লাখ ৪০ হাজার ২৩২টি।
আই//