ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

যুক্তরাজ্য সফরে বেফাঁস মন্তব্যে বিতর্কিত ট্রাম্প

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:৪৯ পিএম, ৪ জুন ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৪:৫০ পিএম, ৪ জুন ২০১৯ মঙ্গলবার

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তিনদিনের এক রাষ্ট্রীয় সফরে আজ সোমবার যুক্তরাজ্যে গেছেন।

ট্রাম্পের বিতর্কিত ও বেফাঁস মন্তব্যের কথা সবারই জানা। কিন্তু এভাবে অতিথি হিসেবে এসে ট্রাম্প যে ভাঁড়ামি করবে সেটা চিন্তা করাই কঠিন। যা একমাত্র ট্রাম্পের দ্বারাই সম্ভব।

সফরে আসতে না আসতেই যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বেফাঁস কথাবার্তা বলে ইতিমধ্যে খবরের শিরোনাম হয়েছেন ট্রাম্প।

লন্ডনে পৌঁছানোর আগেই মেয়র সাদিক খানের সাথে নতুন করে শুরু হয়েছে তার বাকযুদ্ধ। অবশ্য এই বাকযুদ্ধ পুরোটা অনলাইনে, কারণ ট্রাম্পের এই সফরের সময় তার সাথে সাদিক খানের কোথাও সামনাসামনি দেখা হবে না।

কয়েকদিন আগেই লন্ডনের মেয়র সাদিক খান ‘নারী ও ইসলাম সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভুল ধারণার’ তীব্র সমালোচনা করে তাকে ‘বিংশ শতাব্দীর ফ্যাসিস্টদের’ সাথে তুলনা করেন।

তাছাড়া ট্রাম্পের লন্ডনে অবতরণের দিনেই ব্রিটিশ পত্রিকায় সাদিক খানের একটি নিবন্ধ বের হয় সেখানে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের তীব্র সমালোচনা করেন।

এর জবাবে ট্রাম্প এক টুইটে বলেন, সাদিক খান একজন ‘স্টোন-কোল্ড লুজার’ অর্থাৎ এমন একজন লোক যিনি সব সময়ই পরাজিত হন। তিনি বলেন, খানের উচিত লন্ডনে অপরাধ কমানোর দিকে নজর দেওয়া।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার টুইটে সাদিক খানের পদবী ‘খান’ শব্দটি লেখেন ভুল বানানে। তাতে তিনি বলেন, খান আমাকে আমাদের নিউইয়র্ক শহরের ‘নির্বোধ এবং অযোগ্য’ মেয়র দা ব্লাসিও-র কথা মনে করিয়ে দেয় - যে তার কাজে মোটেও ভালো করছে না এবং তার উচ্চতা ব্লাসিওর অর্ধেক।

রাজপরিবারের আমন্ত্রণে যুক্তরাজ্য সফরে এলেও সেই পরিবারের বধূকেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি ট্রাম্প। সফরের আগে ব্রিটিশ রাজবধূ মেগান মার্কেলকে ‘নোংর’ বলে মন্তব্য করেন। গত রোববার সেই মন্তব্যের কথা অস্বীকার করতে গিয়ে ধরা পড়ে যান ট্রাম্প। সংবাদমাধ্যম তার ওই মন্তব্যের রেকর্ড ছেড়ে দেয়।

এছাড়া যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী কে হওয়া উচিত, তা নিয়ে মন্তব্য করেন এবং বরিস জনসনের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেন। ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ, লেবার নেতা জেরেমি করবিন এবং চীনের কোম্পানি হুয়াওয়েকে যুক্তরাজ্যে কাজ দেওয়া নিয়ে বেফাঁস কথাবার্তা বলেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পকে রাষ্ট্রীয় সফরের আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে তুমুল বিরোধ আছে। সাদিক খান ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘ফ্যাসিবাদী’ আখ্যা দিয়েছিলেন। তাকে রাষ্ট্রীয় সফরের আমন্ত্রণ জানানো ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেন।

লেবার নেতা জেরেমি করবিন এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টির নেতা ভিন্স ক্যাবল ট্রাম্পের সম্মানে আয়োজিত রানির ভোজ অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন।

বিবিসির উত্তর আমেরিকা সংবাদদাতা জন সোফেল বলেন, ট্রাম্প রাজনীতি কিংবা শিষ্টাচারের তোয়াক্কা করছেন না। রাজকীয় সম্মাননার দিকেই তার নজর, যা যুক্তরাষ্ট্রে তার অনুসারীদের উজ্জীবিত করবে।

বিবিসির সহকারী রাজনীতি-বিষয়ক সম্পাদক নরমান স্মিথ বলেন, সরকার চাইছে যতটা সম্ভব শান্তিপূর্ণভাবে ট্রাম্পকে বিদায় করতে।

ট্রাম্পের এই সফর ঘিরে লন্ডন, ম্যানচেস্টার, বেলফাস্ট এবং বার্মিংহামসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার লন্ডনে সবচেয়ে বড় জমায়েতের ঘোষণা দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। যে কারণে এই সফর ঘিরে কেবল নিরাপত্তার জন্যই ব্যয় হচ্ছে ২৫ মিলিয়ন পাউন্ড। 

এরআগে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ব্রিটিশ রানির আমন্ত্রণে বিদেশি সরকারপ্রধানের যুক্তরাজ্যে এমন সফর বিরল সম্মানের ব্যাপার। ১৯৫২ সালের পর যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফরে আসা তৃতীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর বর্তমান রানীর মেয়াদে এটি ১১৩তম রাষ্ট্রীয় সফরের আমন্ত্রণ।

নিতান্ত সম্মান প্রদর্শনের এমন সফরে রাজকীয় আনুষ্ঠানিকতাই মুখ্য। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ঝালাই করে নিতে এমন সফরকে কাজে লাগানো হয়। বিরল সম্মানের এই সফরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর পাঁচ সন্তান এবং তাদের পরিবারকেও সঙ্গী করেছেন। সোমবারই তাদের বাকিংহাম প্রাসাদে রাজকীয় সংবর্ধনা এবং ভোজসভায় যোগ দেওয়ার কথা। আজ মঙ্গলবার সেন্ট জেমস প্রাসাদে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক। এরপর সাক্ষাৎ করবেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের সঙ্গেও।