ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

বিশেষজ্ঞদের মতামত

‘ভোক্তা অধিকার নিশ্চিতে আরও কঠোর হতে হবে’

মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ

প্রকাশিত : ০৮:১৫ পিএম, ৪ জুন ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৬:০৮ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার

ভোক্তারা যেন কোনোভাবেই প্রতারিত না হন, সেজন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে আরও কঠোরভাবে অভিযান পরিচালনা করতে হবে বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর কাজ করলেও সময়ের প্রয়োজনীয়তার আলোকে অধিদপ্তরটিকে আরও কঠোর হতে হবে। খাদ্যে ভেজাল, অধিক দাম ও নিম্নমানের পণ্য দিয়ে ভোক্তাকে প্রতারিত করার বিপরীতে অপরাধীদের নামকাওয়াস্তে শাস্তি দিলে হবে না। আরও কঠোর হতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সময়ের পরিবর্তনশীলতায় সকল পণ্যের মান ও গুণ নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। ভোক্তা তার জীবন ও কাজের নিরাপত্তার জন্য যথোপযুক্ত ও নিরাপদ পণ্য বা সেবা প্রাপ্তির অধিকার চায়। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, সঠিক পণ্য সঠিক দামে ও গুণগত মানে ভোক্তা পেলেন কিনা তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ভোক্তা কোনো পণ্য বা সেবা নিয়ে প্রতারিত হলে অভিযোগ করার অধিকার রয়েছে। এ অভিযোগগুলো নিষ্পত্তি করার কাজও করবে এই অধিদপ্তর। এ রমজানের পুরো মাস জুড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও ভোক্তার অধিকার সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় দেখভাল করে এবং ভেজাল বিরোধী অভিযানও পরিচালনা করে।

দ্বিগুণ দামে কাপড় বিক্রির অপরাধে সম্প্রতি আড়ংয়ের ঢাকাস্থ উত্তরা আউটলেটকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা জরিমানা ও ২৪ ঘণ্টা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা। এরপরই ঐ কর্মকর্তাকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় থেকে বদলি করা হয়। এতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে দেশজুড়ে সমালোচনা হলে ৪ জুন তার বদলির আদেশ স্থগিত করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘ভোক্তা অধিকারের কাজ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। তারা বেশ ভালোই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ভোক্তদের অভিযোগ তাৎক্ষণিক আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি থাকা দরকার।’

ভেজাল ও অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রয় বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর হতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘খাদ্যে ভেজাল বেশ ক্ষতিকর। এতে মানুষের প্রাণহানি হয়। ভেজাল পণ্য বিক্রয় বা বেশি দামে পণ্য বিক্রয় করার অপরাধে শুধু মাত্র কিছু জরিমান করলেই হবে না, কারদণ্ড দিতে হবে।’

শুধুমাত্র জরিমানা দিয়ে আড়ং এর মত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জরিমানা দামি ব্যান্ডেড কোম্পানির জন্য খুবই নগণ্য। প্রয়োজনে অপরাধীদের ব্যবসায়িক লাইসেন্স বাতিল করতে হবে।’

মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ভোক্তা অধিকারের কার্যক্রম নিয়ে এই মুহূর্তেই মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তাদের কার্যক্রম ভালোই চলছে। তবে এখনই তাদের কার্যক্রম নিয়ে মন্তব্য করা যাবে না। তাদেরকে আরও সময় দিতে হবে। তাদের সময় অনুযায়ী আরও কঠোর হতে হবে।

ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের কাজে জনসাধারণ সচেতন হচ্ছে বলে মনে করেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (ক্যাব) সভাপতি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান। তিনি বলেন, ‘ভোক্তা অধিকারের কাজ প্রশংসনীয় হলেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আরও কঠোর ও গতিশীল হতে হবে প্রতিষ্ঠানকে।’

বিএসটিআই ঘোষিত ৫২টি ভেজাল পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার এবং মান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ রাখার দাবিতে হাইকোর্টে রিটকারী বেসরকারি ভোক্তা অধিকার সংস্থা কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি (সিসিএস) নির্বাহী সম্পাদক পলাশ মাহমুদ একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, ‘২০০৯ সালে ভোক্ত অধিকার সংরক্ষণের আইন হয়। গত এক থেকে দেড় বছর ধরে বিভিন্নস্থানে অভিযান পরিচালনা করলেও জনসচেতনা না থাকায় তাতে তেমন একটা সাড়া পড়েনি। তবে এখন ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে।’ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জরিমানা করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। সম্প্রতি দামে অনিয়ম করার জন্য একটি নামি দামি ব্যান্ডেড কোম্পানিকে ৪ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এটা খুবই কম। আইনে কৌশলে মুনাফাখোরদের সহজেই বাঁচিয়ে দেওয়ার জন্য এ সীমাবদ্ধতা রাখা হয়েছে।’

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের কার্যক্রম জনমনে আস্থা তৈরী করতে পারছে বলে দাবি করেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের সমন্বয়ক মাসুম আরেফিন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কার্যক্রমে নাগরিকদের সম্পৃক্ত করতে পেরেছি। জনগণকে ভোক্তা অধিকার সম্পর্কে সচেতন করছি।’

অভিযানের ফলে কোন পরিবর্তন আসছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবর্তন আসছে। কিছুটা কম আবার কিছুটা বেশি। তবে দিন দিন অপরাধের ধরণও পরিবর্তন হচ্ছে। আমাদের অনেক সীমবদ্ধতা রয়েছে। আমরা সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ভালো কিছু করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

এমএস/