ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৯ মে ২০২৪,   বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

বিশ্ব ক্রিকেটের দৃষ্টিতে বাংলাদেশ

সোহাগ আশরাফ :

প্রকাশিত : ০২:৫৭ পিএম, ৬ জুন ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০১:৩০ পিএম, ৮ জুন ২০১৯ শনিবার

বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে দারুণ সূচনা করেছে বাংলাদেশ। সবার আশা ছিল ধারাবাহিকতা রাখবে টিম টাইগার। যদিও দ্বিতীয় ম্যাচটি প্রথম ম্যাচের মত সহজ হবে না, তবে হেরে যাবার চিন্তা কারও ছিল না। বরং বাংলাদেশ এবার যে শক্তি ও মনোবল নিয়ে বিশ্বকাপ মিশনে প্রবেশ করেছে- এক কথায় অসাধারণ। কারণ ত্রিদেশিয় সিরিজ জয় বিশ্বকাপে ভালো কিছু করার বার্তা দিয়েছিলো টিম টাইগার। বিশ্ব ক্রিকেটে সবার দৃষ্টিতে এখন বাংলাদেশ। তবে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে খুব একটা ভালো করতে পারলো না তারা, বরং সামান্য কিছু সর্তকতাই দলকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতো। হয়তো প্রথম ম্যাচের মত জয় নিয়েই মাঠ ছাড়তো টিম টাইগার।

এবার বিশ্বকাপের আসরে জয় পেতে হলে ৩০০ এর উর্দ্ধে রান করতে হবে যেকোন দলকে। এর নিচে হলে ম্যাচটি হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে। গতকালের ম্যাচে বাংলাদেশ করেছে মাত্র ২৪৪ রান। স্বাভাবিক কারণেই হিসেবটা বাংলাদেশের বিপক্ষেই যায়। তবে মাত্র ২৪৪ রানের ম্যাচকে উত্তেজনার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া টাইগারদের পক্ষেই সম্ভব হয়েছে। তাইতো নিউজিল্যান্ডকে খুব কষ্ট করেই জিততে হয়েছে।

তুবও প্রশ্ন থেকে যায়। কি কি কারণে বাংলাদেশকে হারতে হলো? কোন দিকটা ভালো করলে দল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারতো?

এ প্রশ্নের জবাবে ম্যাচ শেষে অনেকেই অনেক কথা বলছেন। কেউ বলছেন, ‘ইশ! যদি তখন রানআউট হয়ে যেতেন উইলিয়ামসন। যদি মুশফিক সে ভুলটা না করতেন!’

আবার কেউ বলছেন, ‘মুশফিকই গত ম্যাচটাকে ধ্বংস করেছে!’

সবার কথায় যুক্তি আছে, কারণ একটি ম্যাচ হাত ছাড়া হয়ে যায় টুকরো টুকরো কিছু ভুলের কারণে। নিজের ইনিংসের শুরুতেই মুশফিকুর রহীমের বাচ্চাসুলভ ভুলে নিশ্চিত রানআউটের হাত থেকে বেঁচে যান কিউই অধিনায়ক। পরে রস টেলরের সঙ্গে গড়েন ম্যাচ জেতানো ১০৫ রানের জুটি, অথচ তিনি সাজঘরে ফিরতে পারতেন জুটির মাত্র ৬ রানের মাথায়।

ইনিংসের দশম ওভারের শেষ বলে সাকিবের বোলিংয়ে মিরাজের দারুণ ক্যাচে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফেরেন ৩৪ বলে ২৪ রান করা মুনরো। এরপরই হাল ধরেন টেলর এবং উইলিয়ামসন, গড়েন ১০৫ রানের জুটি। অথচ তাদের জুটিটা ভাঙতে পারতো মাত্র ৬ রানের মাথায়।

ইনিংসের দ্বাদশ ওভারের দ্বিতীয় বলের ঘটনা। সদ্যই উইকেটে আসা রস টেলরের ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে বিপদে পড়ে যান অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। মিড অফ থেকে তামিম ইকবালের থ্রো ধরে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহীম যখন উইকেট ভেঙে দেন, তখনো পপিং ক্রিজের অনেক বাইরে উইলিয়ামসন। ঘটনাটা হতে পারতো এমন। কিন্তু টাইগার উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহীম করে বসেন বাচ্চাসুলভ ভুল। তামিমের করা থ্রোটি সরাসরি ছিলো উইকেট বরাবরই। কিন্তু বাড়তি সতর্কতা নিতে গিয়ে স্ট্যাম্পের সামনে এসে বল ধরে উইকেট ভাঙতে যান মুশফিক। ঠিক তখন তার হাতে লেগে আগেই পড়ে যায় বেলস। যে কারণে পরে তিনি বল গ্লাভসে জমিয়ে উইকেট ভাঙলেও এবং কেন উইলিয়ামসন নিজের ক্রিকের অনেক বাইরে থাকলেও, বেঁচে যান রানআউট থেকে। আর এ জীবন কাজে লাগিয়ে নিজের দলকে জয়ের দিকে পরিচালিত করে নিয়ে যান কিউই অধিনায়ক।

তবুও উইলিয়ামসনের এ ঘটনার পরেও সাকিব, মিরাজ, মোসাদ্দেকদের বোলিংয়ে ম্যাচ জমিয়ে তুলেছিল বাংলাদেশ। মাত্র ২৪৪ রানের পুঁজি নিয়ে দুর্দান্ত লড়াই করে কিউইদের ৮ উইকেট তুলে নিয়েছিল দামাল ছেলেরা। তবে নিউজিল্যান্ডের নিচের সারির ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় ১৭ বল হাতে রেখেই ২ উইকেটে ম্যাচ জিতে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড।

গতকালের ম্যাচে আরও একটি ভুল বোঝাবুঝি বাংলাদেশের রানের চাকাকে থমকে দেয়। সেটি হচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে তৃতীয় উইকেটে সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহীমের ভুল বোঝাবুঝি। শর্ট কভারে ঠেলে দিয়ে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে কাঁটা পড়ে রানআউট হন মুশফিক। তিনি থামেন মাত্র ১৯ রানে। কিন্তু এই আউটটি যে কত বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের পরাজয়ের জন্য তা বিবেচনায় আনতে হবে!

সে যাই হোক; শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচগুলোতে ‘ক্লোজ কল’ সবসময় গড়ে দেয় ম্যাচের ভাগ্য। যেমনটি হয়েছে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচে। যদিও জয়টা খুব একটা সহজে হয়নি। নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশকে হারিয়েছে মাত্র ২ উইকেটের ব্যবধানে।

অনেকেই মুশফিকের দুটি ভুলকে বড় করে দেখছেন। কিন্তু বিষয়টি এমন হওয়া ঠিক নয়। সব ম্যাচই যে জিততে হবে তা আশা করা যাবে না। আর ভুল না হলে জয় পরাজয় হবে কি করে? আমাদের চেষ্টা করতে হবে পূর্বের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে ভালো করার।

সেদিক থেকে মাশরাফি তার সতীর্থদের পাশেই আছেন। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘মুশির (মুশফিকুর রহীম) পেছনে লাগার কোনো কারণ নেই। থ্রোটি সোজা ছিল। তবে একজন কিপারের জন্য বোঝা কষ্টকর যে বলটি সোজা আসছে নাকি না! সে বলটি ধরতে চেয়েছিল, এসময় স্ট্যাম্প ভেঙে যায়।’

অধিনায়ক আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, এরকম ভুল সচারাচরই হয়ে থাকে। সুতরাং, আমার মনে হয় না তার পেছনে পড়ার কোনো কারণ আছে। এটা খেলারই একটি অংশ। এরকম হবেই। কেউ তো আর ইচ্ছে করে ভুল করতে চায় না।’

একই ভাবে বাংলাদেশের লড়াকু পারফরম্যান্সের ভূয়সী প্রশংসা করছেন খোদ ভারতের বর্তমান অধিনায়ক বিরাট কোহলি। এক টুইটবার্তায় তিনি জানিয়েছেন, মাশরাফি-সাকিবরা অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলছে। যদি তারা সেমিফাইনালে যায়, (শেষ চারে খেলার ছাড়পত্র পায় বা টিকিট কাটে) আমি মোটেও অবাক হবো না।

সত্যিই তাই! মাশরাফির কথাই ঠিক। এধরণের ভুল ম্যাচেরই অংশ। দ্বিতীয় ম্যাচ হেরে গেলেও প্রাপ্তির দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে। কারণ বিশ্বকাপের আসরে মাত্র ২৪৪ রান করে এমন একটি ফাইটিং ম্যাচ দর্শকদের উপহার দেওয়া টিম টাইগারের পক্ষেই সম্ভব। বাংলাদেশের দর্শকদেরও উচিৎ দলকে অনুপ্রেরণা দেওয়া। যাতে সামনের ম্যাচগুলোতে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

এসএ/