ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পাইলটের পাসপোর্টবিহীন বিমানযাত্রায় লঙ্কাকাণ্ড

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:৩৮ পিএম, ৭ জুন ২০১৯ শুক্রবার

পাসপোর্ট ছাড়া বিদেশে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন বিমান বাংলাদেশের বৈমানিক ফজল মাহমুদ। এর মধ্যে ঐ বৈমানিককে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

বিভিন্ন মাধ্যমে বলা হচ্ছে তিনি বিদেশে আটক বা গ্রেফতার হয়েছেন। এমন আরও গুজব দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হতে দেখা যায়। তবে গ্রেফতার বা আটক না হওয়ার কথা বলে বৈমানিক নিজেই গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন। তাহলে কারা এমন গুজব ছড়াচ্ছে এ প্রশ্নটি বেশ বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, ফিনল্যান্ডে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে আনতে গত বুধবার রাতে বিমান বাংলাদেশের ড্রিমলাইনার বোয়িং ৭৮৭ উড়োজাহাজ ঢাকা ছেড়ে কাতারের উদ্দেশে রওনা দেয়। কিন্তু পাসপোর্ট ছাড়াই বিমানটি চালিয়ে কাতারের দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়ে যান বৈমানিক ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ। আর পাসপোর্ট না থাকায় তাঁকে আটকে দিয়েছে কাতার বহিরগমন কর্তৃপক্ষ। এরপর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রিজেন্ট এয়ারওয়েজের একটি উড়োজাহাজে করে বৈমানিকের পাসপোর্ট কাতারে পাঠানো হয়।

প্রধানমন্ত্রীকে আনতে যাওয়া বিমানের বৈমানিকের পাসপোর্ট থাকবে না এমনটি নিয়ে দেশের বিভিন্ন মহলে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। ভিভিআইপি উড়োজাহাজের বৈমানিকের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজের জন্য সমালোচনায় পড়েছে খোদ বহিরগমন কর্তৃপক্ষ। পাসপোর্ট ছাড়া দেশের কোন নাগরিকই বহিরগমন বিভাগ পার হতে পারেন না সেখানে পাসপোর্ট না নিয়ে কোনো বাধা না পেয়ে কিভাবে এ বৈমানিক বহিরগমন বিভাগ পার হলেন। বৈমানিক ফজল মাহমুদের এমন কাণ্ড ও বহিরগমন বিভাগের দায়িত্ব অবহেলার বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে চার সদস্য নিয়ে গঠিত এ কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদের সচিবের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব গাজী তারিক সালমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানা যায়।

অন্যদিকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মহীবুল হকের নির্দেশে বৈমানিক ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদকে ভিভিআইপি ফ্লাইট থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। তার পরিবর্তে বৈমানিক ক্যাপ্টেন আমিনুলকে পাঠানো হচ্ছে। শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় বিমানের দোহাগামী নিয়মিত ফ্লাইট বিজি-০২৫ এ করে তার ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে।

এদিকে বৈমানিক ফজল মাহমুদকে কাতারে আটক করা হয়েছে এমন খবর দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখা যায়। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৈমানিক ফজল মাহমুদকে কাতারে আটক করা হয়নি। বিমান বাংলাদেশের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে জানান, পাইলটকে গ্রেফতার বা আটক করা হয়নি। তাকে প্রত্যাহার করে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।

পাসপোর্ট ছাড়া কোন বৈমানিকের বিদেশ যাত্রা আইনত সিদ্ধ কি না, সেই বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

শুক্রবার সকালে দেশের একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন বৈমানিক ফজল মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘সঙ্গে পাসপোর্ট নেই বিষয়টি দেখার পর আমি ইমিগ্রেশনে না গিয়ে ট্রানজিট পয়েন্টের অরিস এয়ারপোর্ট হোটেলে গিয়ে উঠি। বৃহস্পতিবার রাত সোয়া এগারোটার দিকে বিমানের স্টেশন ম্যানেজার ইলিয়াসের কাছ থেকে পাসপোর্ট গ্রহণের পর ক্রাউন প্লাজা হোটেলে চলে আসি। ঘটনা এইটুকুই। অথচ প্রকৃত ঘটনা না জেনে দেশের মিডিয়া কাল্পনিক কথাবার্তা প্রচার করে যাচ্ছে। আমি স্বাভাবিক আছি।’ ভুলবশত পাসপোর্ট সঙ্গে না থাকলে বহিরগমন বিভাগ কোনো ক্রুকে আটক করে না শুধু মাত্র ট্রাভেল ডকুমেন্টস নিয়ে আসার জন্য বলা হয় বলে জানান বৈমানিক ফজল মাহমুদ।

বৈমানিক আটক বা গ্রেফতার হওয়ার সংবাদের প্রতিবাদ করেছে বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার বিমান বাংলাদেশের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানা যায়। জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার লক্ষ্যে এমন খবর প্রচার করা হচ্ছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়। বিমানের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১০ জুন রাতে বৈমানিক ফজল মাহমুদকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা যায়।

প্রধানমন্ত্রীকে আনতে যাওয়া বৈমানিক ফজল মাহমুদকে রাতেই দেশে ফিরিয়ে আনা হতে পারে বলে জানা যায়। তবে পাসপোর্ট ছাড়া তিনি কেন যাচ্ছিলেন, তা নিয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, পাসপোর্ট ছাড়া কারও দেশত্যাগ কিংবা অন্যদেশে প্রবেশের সুযোগ নেই। ৮ জুন দোহা বিমানবন্দর হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তাকে বহন করতে বোয়িং ৭৮৭ মডেলের ড্রিমলাইনার বর্তমানে কাতার অবস্থান করছে।

এমএস/