ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

মুহুরী নদীতে বিষাক্ত ওষুধ দিয়ে মাছ শিকার

আউয়াল চৌধুরী

প্রকাশিত : ০৯:০৩ পিএম, ৯ জুন ২০১৯ রবিবার | আপডেট: ০৯:৪০ পিএম, ৯ জুন ২০১৯ রবিবার

ফেনীর অন্যতম একটি নদী মুহুরী। বছরের পর বছর এই নদীর মাছ খেয়ে এই অঞ্চলের মানুষ তৃপ্ত। এই নদীর আশ-পাশের মানুষেরা জাল বা বরশি ফেলে মাছ ধরে থাকে। তবে গত কয়েক বছর ধরে নদীতে আগের মতো আর মাছ পাওয়া যায় না। এর মধ্যে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী রাতের আঁধারে পানিতে বিষাক্ত ওষুধ দিয়ে মাছ শিকার করছে। ফলে মাছ শুন্য হয়ে পড়েছে মুহুরী নদী। নষ্ট হচ্ছে এর জীব বৈচিত্র।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে নদীর পানি অনেকটা কমে গেছে। ফলে মাছ শিকারিরা এই সময়টাকে বেছে নিয়েছে। নদীর স্রোত না থাকায় তারা বিষাক্ত ওষুধ দিয়ে সব প্রজাতির মাছ যেমন-রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিঘনি, বোয়াল, চিংড়ি, সরপুঁটিসহ কয়েকশ’ প্রজাতির মাছ নিধন করছে। ফলে এ অঞ্চলে এখন মাছ বিলিন হওয়ার পথে।

শনিবার (৮ ই জুন) অসংখ্য মানুষকে নদীতে জাল নিয়ে মাছ ধরতে যেতে দেখা যায়। তাদের কাছে জানতে চাইলে জানান, রাতে নদীতে ওষুধ দেয়া হয়েছে, মাছ ভেসে উঠছে। তাই দ্রুত তারা মাছ ধরতে যাচ্ছে। কারা ওষুধ দিয়েছে জানতে চাইলে, তারা কারো নাম বলতে পারেনি।

শহীদুল্লা নামের একজন এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন থেকে আমাদের নদীর মাছ গুলো একটা চক্র বিষাক্ত ওষুধ দিয়ে মেরে বাজারে বিক্রি করছে। আমরা এর বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারছি না। ঈদের দুই দিন আগেও তারা একই কাজ করেছে। প্রতি মাসেই তারা মাছ নিধন করছে। এখন আর নদীতে আগের মত মাছ পাওয়া যায় না। বলা যায়, আমাদের অত্র অঞ্চল এখন মাছ শূন্য।

কাশিপুর এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আহমেদ বাচ্চু বলেন, মুহুরী নদীতে একটি চক্র ওষুধ প্রয়োগ করে প্রতিনিয়ত মাছ শিকার করছে। আমরা বিষয়টা জানি। এই অপরাধি চক্রকে ধরার জন্য প্রশাসনসহ আমরা ব্যবস্থা নেব। এই চক্রের কারণে মাছ বিলিন হয়ে যাচ্ছে। নদীতে এখন ছোট ছোট পোনা মাছও আর দেখা যায় না। বিষাক্ত ওষুধে সব মরে গেছে।

এ বিষয়ে ছাগলনাইয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ এর কাছে জানতে চাইলে একুশে টেলিভিশনকে তিনি বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি কে বা কারা ওষুধ দিয়ে মাছ শিকার করছে বা মাছ নিধন করছে এটা আমরা খতিয়ে দেখছি। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মাছ নিধন চক্রের বিষয়ে এলাকার সাংসদ শিরীন আখতার এর কাছে এর প্রতিকারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয়ে আমার খুব একটা জানা নেই। তবে যারাই এ কাজ করুক এটা বড় ধরনের অপরাধ। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মাছ নিধন চক্রটি দীর্ঘ দিন থেকে ওষুধ প্রয়োগে মাছ শিকার করছে। তারা পরশুরাম হয়ে মুহুরী নদীর রেজুমিয়া থেকে পানুয়াঘাট বাজার হয়ে ভূঞার হাট পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় একেক সময় একেক জায়গায় ওষুধ প্রয়োগ করে। যেটুকু মাছ তারা পারে রাতের আঁধারে তুলে নিয়ে যায় বাকি মাছগুলো মরে পঁচে পড়ে থাকে। ছোট-বড় মিলিয়ে কয়েক মণ মাছ তারা প্রতি ক্ষেপে শিকার করে বলে এলাকা সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে এক সময়ের ভরাযৌবনা মুহুরী নদীটি এখন হারিয়ে ফেলেছে তার শ্রী। ৬২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর ও ৭১ মিটার প্রস্থের নদীটি এখন পরিণত হয়েছে একটি সরু খালে। এক দিকে মাছ নিধন যেমন চলছে অন্যদিকে চলছে নদী ভরাট। ফলে আগামী দিনে এই নদী থাকবে কি না সংশয় দেখা দিয়েছে। তাই এলাকাবাসির দাবি মাছ এবং নদী রক্ষা জরুরি হয়ে পড়েছে। অন্যথায় এ অঞ্চলে ফসল উৎপাদনও আর সম্ভব হবে না।

এসি