ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের আগে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন সেই সাইফুল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:১০ এএম, ১০ জুন ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ০১:৩৯ পিএম, ১০ জুন ২০১৯ সোমবার

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক চোরাকারবারী  ইয়াবা ডন সাইফুল করিম ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের আগে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু তথ্য দিয়েছেন। 

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ৩৩ জন ইয়াবা ও হুন্ডি ব্যবসায়ীর তথ্য ফাঁস করেছেন সাইফুল। তাদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানও।

গত ৩০ মে রাতে নাফ নদীর পাড়ে পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সাইফুল নিহত হয়। সে টেকনাফের শীলবুনিয়াপাড়ার ডা. মোহাম্মদ হানিফের ছেলে। বন্দুকযুদ্ধের পর ঘটনাস্থল থেকে ৯টি এলজি, ৪২ রাউন্ড শর্টগানের তাজা কার্তুজ, ৩৩ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও এক লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাইফুল নিহতের পরদিন ৩১ মে টেকনাফ মডেল থানার এসআই রাসেল আহমদ বাদী হয়ে ৩৩ জন ইয়াবা ও হুন্ডি ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে ১৮ আসামির পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা উল্লেখ করা হয়। মামলার এজাহারে বাকিদের নাম উল্লেখ করা হয় নিহত সাইফুলের বরাত দিয়ে।

মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, মৃত্যুর আগে সাইফুল পুলিশের পৃথক জিজ্ঞাসাবাদে টেকনাফ সীমান্তের ইয়াবা ও হুন্ডি চক্রের ৩৩ জনের তথ্য ফাঁস করে গেছেন।

এজাহারে মাদক সিন্ডিকেট পরিচালনার বিষয়ে সাইফুলের স্বীকারোক্তি তুলে ধরা হয়েছে। এজাহারে বলা হয়, সাইফুল করিম পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে, মিয়ানমার থেকে আমদানি পণ্যের ভেতরে লুকিয়ে বাংলাদেশে প্রথম ইয়াবা ট্যাবলেট নিয়ে আসে সে। তখন থেকে সে টেকনাফসহ সারাদেশে ইয়াবার একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতো। তার অন্যতম সহযোগী ছিল টেকনাফের হুন্ডির ডন টিটি জাফর। টিটি জাফরের মাধ্যমে হুন্ডির টাকায় বাংলাদেশে ইয়াবার চালান আনা হতো। সিন্ডিকেট সদস্যদের মাধ্যমে সেই ইয়াবা সারাদেশে পাচার করা হতো।

এজাহারে যে ১৮ জনের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা রয়েছে, তারা হলো— টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ার মৃত মো. হোসেনের ছেলে জাফর আহমদ ওরফে টিটি জাফর (৩৮), অলিয়াবাদ গ্রামের আবু ছিদ্দিকের ছেলে ছৈয়দ আলম প্রকাশ সোনা মিয়া (৩৫), পুরান পল্লনপাড়ার হাফেজ আবু বক্করের ছেলে (বদির বোনের জামাই) মোহাম্মদ ফারুক (৩০), ডেইলপাড়ার কালা মোহাম্মদ আলীর ছেলে মো. আমিন (৩৭), শীলবুনিয়াপাড়ার মৃত লাল মোহাম্মদের ছেলে নুর হাছন (২৮), দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার মৃত খুইল্যা মিয়ার ছেলে আমির আলী প্রকাশ বর্মাইয়া আলী (৪৮), টেকনাফ সদর ইউনিয়নের বড় হাবিরপাড়ার মৃত আমির হামজার ছেলে মো. আলী আহম্মদ (৪৫), শীলবুনিয়াপাড়ার মো. রশিদের ছেলে মো. আয়াছ ওরফে বর্মাইয়া আয়াছ (৩৮), তার ছোট ভাই মো. ইয়াছের প্রকাশ বার্মাইয়া ইয়াছের (২৮), শীলবুনিয়াপাড়ার জুবায়েরের ছেলে মো. দেলোয়ার (৩০), কেরুণতলী এলাকার রশিদ আহমদের ছেলে মো. মিজান (২৮), লেঙ্গুবিলের জাফর চেয়ারম্যানের বাড়ির পাশে মো. হোসেনের ছেলে মো. কাদের (২৮), অলিয়াবাদ গ্রামের সিদ্দিক আহমদের ছেলে রবিউল আলম (২৫), শীলবুনিয়াপাড়ার সোলাইমানের ছেলে মো. শফিক (৪৮), শীলবুনিয়াপাড়ার আবুল হোসেনের ছেলে মো. শামসু (২৮), উত্তর লম্বরীর মাহবুব শর্দারের ছেলে মো. শামসু (৩৫), মধ্য জালিয়াপাড়ার মো. হোসেনের ছেলে মো. মনিরুজ্জামান ওরফে আমির সাব ( ৪৮) ও নিহত সাইফুল করিমের ভাগ্নে মো. মিজান (২৭)।

এজাহারে আরও বলা হয়, সাইফুল উল্লিখিত আসামিদের মাধ্যমে ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা করতো। আসামিরা যৌথভাবে মূলধন বিনিয়োগ করে ইয়াবা পাচারের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলির ব্যবসাও নিয়ন্ত্রণ করত।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ যে ৭৩ জন ইয়াবাকারবারীর তালিকা তৈরি করেছে, সাইফুল করিম সে তালিকার ২ নম্বরে ছিলেন, আর সবার শীর্ষে সাবেক এমপি বদির নাম। এছাড়া, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাদকসংক্রান্ত একাধিক তালিকায় নামও ছিল সাইফুলের।

এছাড়া নিহতের আগে সাইফুল করিম জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে দেশে ইয়াবা ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তার সহযোগী হিসেবে জড়িত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বেশ কয়েকজন সদস্য, রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করেছেন বলেও জানা যায়।

গত মাসে পুলিশ অভিযান চালিয়ে সাইফুলের দুই ভাইকে অস্ত্র ও ইয়াবাসহ আটক করে কারাগারে প্রেরণ করেন। এ ছাড়া তার পাঁচ ভাইয়ের নাম মাদকের তালিকায় রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে, সাইফুল করিম বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর সিন্ডিকেটের প্রভাবশালী ও মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা আত্মগোপনে চলে গেছে। বদির ভাই মৌলভি মুজিব এতদিন টেকনাফে প্রকাশ্যে চলাফেরা করলেও কিছুদিন ধরে মিয়ানমারের মংডুতে অবস্থান করছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ ও তার ছেলে শাহজাহান চেয়ারম্যান ঢাকায় আছে বলে জানা গেছে। সেখান থেকে তারা দুবাই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। নুরুল হক ভুট্টু কক্সবাজারের একটি আস্তানায় অবস্থান করছে। তার বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় ১৮টি মামলা রয়েছে। সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে টেকনাফ থানা পুলিশ নুরুল হক ভুট্টু, তার এক ভাই ও বাবার ৩১ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করেছে।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, ‘মৃত্যুর আগে সাইফুল পুলিশের পৃথক জিজ্ঞাসাবাদে কয়েকটি সিন্ডিকেটের ৩৩ জন ইয়াবা ও হুন্ডি ডনের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তাদের মধ্যে সাবেক এমপির দুই ভাইও রয়েছেন। সাইফুল  হত্যা মামলার এজাহারে ৩৩ জনের নাম রয়েছে। আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে পুলিশের এই কর্মকর্তা।

আই//