ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

এবার গো-মূত্র থেকে তৈরী হবে জৈব সার ও বালাইনাশক

নিলয় মামুন

প্রকাশিত : ০৮:২৭ পিএম, ১০ জুন ২০১৯ সোমবার

গরুর মূত্রের কারণে যেখানে পরিবেশ দূষিত হয়। সেখানে এবার গরুর মূত্রকে কাজে লাগিয়ে তৈরী করা হচ্ছে জৈব সার ও বালাইনাশক। আর এর মাধ্যমেই বাড়বে জমির উর্বরতা। উৎপাদিত হবে ফসল। অন্য রাসায়নিক সার ও বালাইনাশক যেখানে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, সেখানে এই গোমূত্র থেকে উৎপাদিত সার ও বালাইনাশক পরিবেশ বান্ধব।

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ)-এর অর্থায়নে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ড. এ.কে.এম আহসান কবির-এর তত্ত্বাবধানে শুষ্ক দানাদার গোমূত্র থেকে এই সার তৈরি হচ্ছে। আর শুষ্ক গোমূত্র থেকে উৎপাদিত এই সার প্রয়োগের ফলে সবজি ও ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।

যেখানে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে প্রতি হেক্টর জমিতে ৫.৪২ টন ধান উৎপাদন করা সম্ভব হয়। সেখানে গোমূত্র থেকে উৎপাদিত সার ও বালাইনাশক হিসেবে ব্যবহার করে প্রতি হেক্টর জমিতে ৫.৮৫ টন ধান উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। পিকেএসএফ সম্প্রতি সাতক্ষীরা জেলার তালাস্থ জিওলা দুগ্ধ খামার এলাকায় একটি বিশেষায়িত প্রকল্পের আওতায় এ গোমূত্র জৈব সার ও বালাই নাশক হিসেবে ব্যবহারের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করেছে।

এলাকাটি একসময় গোবর ও গোমূত্রের দুর্বিসহ গন্ধে একাকার ছিল। এখন সেখানে মাসে প্রায় ৬০ টন কেঁচো সার উৎপাদিত হচ্ছে। এই কাজের উপযোগী করতে জিওলা এলাকার গোয়ালঘরগুলো পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গোমূত্র ৪ দিন রেখে গাঁজন করলে সার হিসেবে ব্যবহার করা যায় এবং ১০-১৪ দিনের গাঁজন প্রক্রিয়া শেষে এর মধ্যে নিমের পাতা ও তামাকপাতাসহ অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে বিভিন্ন ধরণের বালাইনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

পিকেএসএফ উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের বলেন, দেশে বর্তমানে প্রায় ২.৫ কোটি গরু রয়েছে। আর এ থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫ কোটি লিটার গোমূত্র উৎপাদন হচ্ছে। গোমূত্রে ৯৫ শতাংশ পানি ও বাকি ৫ শতাংশ মিনারেল ও নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ ইউরিয়া রয়েছে। আর এই বিপুল পরিমাণ গোমূত্রের একটি অংশও যদি জৈব সার ও বালাই নাশক ব্যবহার করা যায় তবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে। আশা করছি শীঘ্রই গোমূত্র থেকে উৎপাদিত জৈব সার এবং বালাইনাশকও মুল্যবান সম্পদ হিসেবে আবির্ভূত হবে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে জমির কাঙ্ক্ষিত উর্বরতা বজায় থাকার জন্যে ৩ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশ জৈব উপাদান থাকা জরুরী। বাংলাদেশে ৭০ শতাংশের বেশী জমিতে এ জৈব উপাদান ২ শতাংশের কম। এর ফলে জমির উর্বরতা শক্তি অত্যন্ত কমে গেছে। নির্বিচারে রাসায়নিক সার ও বালাই নাশক ব্যবহারের ফলে এই জৈব উপাদান আরো কমে যায়। যার জন্য আমাদের জমির উর্বরতা শক্তি ক্রমশ হ্রাসমান হচ্ছে। তাই এই জৈব উপাদান বাড়াতে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) সারা দেশে জৈব সার বা কেঁচো সার ব্যবহারে প্রণোদনা যোগাচ্ছে।

আরকে//