ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

রাজপথে সক্রিয় হবে ঐক্যফ্রন্ট

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:০১ পিএম, ১০ জুন ২০১৯ সোমবার

সরকারবিরোধী কর্মসূচি নিয়ে ফের রাজপথে নামার উদ্যোগ নিয়েছে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সে লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পরিসর আরও বড় করতে চান তারা। এর আগে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব নিরসনের উদ্যোগ নেবেন নেতারা। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তারা এ বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলবেন বলে জানিয়েছেন জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব।

আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় আ স ম আবদুর রবের বাসভবনে দেড় মাস পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে রব সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তবে ওই বৈঠকে নির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ফলে সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া বৈঠকে কাদের সিদ্দিকীর আল্টিমেটামের বিষয়টি এজেন্ডায় থাকলেও তার কোনো সুরাহা হয়নি। বৈঠকে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না উপস্থিত ছিলেন না।

নিজেদের মধ্যে ঐক্য অটুট রাখা, আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণের পাশাপাশি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর আল্টিমেটামের বিষয়টির সুরাহা হওয়ার কথা ছিল বৈঠকে।

বৈঠক শেষে ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র আ স ম আবদুর রব ব্রিফিংয়ে বলেন, আজকের বৈঠকে ড. কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন না। তার অবর্তমানে আমরা কোনো সিদ্ধান্তে নিতে পারেনি। তাই বৈঠকটি আজকের মতো স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আবার বৈঠকে বসা হবে।

আ স ম রব আরও বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত না করা পর্যন্ত ঐক্যফ্রন্টের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশা নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছি। ভবিষ্যতে বৃহৎ ঐক্য গড়ে তোলা হবে।

এদিকে সংসদ সদস্য হিসেবে ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত সাতজন শপথ নেওয়ায় ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার আল্টিমেটাম দেন ‘ক্ষুব্ধ’ কাদের সিদ্দিকী। ৮ জুন আল্টিমেটামের সময়সীমা শেষ হওয়ার পরও আরও দুইদিন সময় দেন কাদের সিদ্দিকী। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বৈঠকে বসেন। বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৈঠক হলেও নিজেদের মধ্যে কেবল আলোচনা ছাড়া কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি ঐক্যফ্রন্ট।

এ বিষয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমি আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। এরইমধ্যে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে আমার। আশা করি খুব শিগগিরই আবারও বৈঠকে বসব। ড. কামালের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার পরই আমি আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাব। আমি যে আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম সে বিষয়ে অটল আছি।

ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য ইকবাল সিদ্দিকী, বিকল্পধারার একাংশের সভাপতি নূরুল আমিন ব্যাপারী, মহাসচিব শাহ আহমদ বাদল, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইদ, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া। এছাড়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না না এলেও তিনি দুইজন প্রতিনিধি পাঠান। এরা হলেন নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মো. জাহিদ ও মমিনুল হক।

গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে নিজেদের এমপিদের শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথমে গণফোরামের দুজন এমপি শপথ নেন। তখন এ দুইজনের কড়া সমালোচনা করেন বিএনপি নেতারা। পরে শপথ নেওয়ার সময়সীমা শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে বিএনপি থেকে নির্বাচিত পাঁচজন সংসদ সদস্য শপথ নেন।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ মে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী জানিয়ে দেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে সাতজনের শপথ গ্রহণের সঠিক ব্যাখ্যা দিতে না পারলে ৮ জুন ফ্রন্ট ছেড়ে দেবে তার দল।

সেদিনের সংবাদ সম্মেলনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আগামী একমাসের মধ্যে যে যে অসঙ্গতি আছে, তা সঠিকভাবে নিরসন না হলে ৮ জুন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেবে।

আরকে//