ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতন হোন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:০৪ এএম, ১১ জুন ২০১৯ মঙ্গলবার
বিশ্বব্যাপী ক্যান্সার বাড়ছে আর আগের তুলনায় এখন আরো বেশি মানুষ এই রোগে মারা যাচ্ছে। ২০১৮ সালে সারা পৃথিবীতে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৯৬ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে বছরে এক কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ মারা যাবে। আমাদের দেশেও ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। কিন্তু আধুনিকতার এই যুগে এর কি কোন প্রতিকার নেই? ক্যান্সার প্রতিরোধের কোন ব্যবস্থা এখনও কি হয়নি?
একটা সময় ছিল যখন ‘ক্যান্সার’ শব্দটি শুনলেই মানুষ হাল ছেড়ে দিতেন। কিন্তু সময় বদলেছে, নানা গবেষণা আর একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে- ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় আছে। সহজ কিছু জীবনাচার অনুসরণ করলেই ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
এবার জেনে নেই কিভাবে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায় :
ধূমপান ছাড়ুন :
ধূমপান শুধু যে ফুসফুসের ক্যান্সারের অন্যতম কারণ তা কিন্তু নয়, এটি খাদ্যনালী, মুখ-গহ্বর, গলা, কিডনি, মূত্রথলি, অগ্ন্যাশয়, পাকস্থলী এমনকি জরায়ুমুখের ক্যান্সার-ঝুঁকিও বাড়ায়। আমেরিকান ক্যান্সার-বিশেষজ্ঞ রিচার্ড ডেল ও রিচার্ড পেটোর মতে, মানবদেহে যত ধরনের ক্যান্সার হতে পারে তার ৩০ শতাংশের ক্ষেত্রেই ধূমপান ও তামাকের সরাসরি ভূমিকা রয়েছে।
তাই আর দেরি নয়, ক্যান্সার প্রতিরোধের প্রথম ধাপ হিসেবে আজই ধূমপান ছাড়ুন। কোনো ধরনের তামাকের প্রতি আসক্তি থাকলে আজই বেরিয়ে আসুন এ প্রাণঘাতী অভ্যাস থেকে। কারণ, ধূমপানের মাধ্যমে নিজের শরীরটাকেই শুধু যে বিষময় করে তুলছেন শুধু তাই নয় বরং আপনার সিগারেটের ধোঁয়া আপনার প্রিয়জন ও পরিবারের সদস্যদের ক্যান্সার-ঝুঁকিও একই হারে বাড়াচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, পরোক্ষ ধূমপান সারাবিশ্বে প্রতিবছর অসংখ্য ক্যান্সারজনিত অকালমৃত্যুর কারণ।
ওজন রাখুন নিয়ন্ত্রণে :
মেদবহুল স্থূল আছেন যারা, সচেতন হোন এখনই। অতিরিক্ত ওজন নীরবে আপনার খাদ্যনালী, গলব্লাডার, লিভার, অন্ত্র, লসিকাগ্রন্থি ও ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে চলেছে। এছাড়াও মেনোপজের পর বাড়তি ও অতিরিক্ত ওজন জরায়ু ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে মেদস্থূলতা প্রায়ই দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা পরবর্তীতে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ুন :
কোন ধরনের খাবার ক্যান্সার প্রতিরোধ করে? স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা সেই চিরাচরিত সহজ উত্তরটিই দিয়েছেন। তাহলো ফলমূল ও শাক-সব্জির সমন্বয়ে একটি প্রাকৃতিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রচুর পরিমাণ আঁশ-জাতীয় খাবার থাকুক আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়। প্রক্রিয়াজাত শস্যদানার বদলে পূর্ণ শস্যদানা খান।
লাল মাংস এড়িয়ে চলুন :
গরু, মহিষ, খাসি, ভেড়া এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস এড়িয়ে চলুন। আর অতিরিক্ত লবণ ও চিনিযুক্ত খাবার দূরে রাখুন। এমন খাদ্যাভ্যাস ক্যান্সার প্রতিরোধে রাখবে নিশ্চিত ভূমিকা।
রান্না করুন অল্প আঁচে :
সবসময় কম আঁচে খাবার রান্না করুন। কারণ উচ্চ আমিষযুক্ত খাবার যেমন মাছ মাংস ইত্যাদি অতিরিক্ত তাপে রান্না করলে খাবারে দুটি রাসায়নিক উপাদান (এইচসিএ ও পিএএইচ) সৃষ্টি হয় এবং মনে করা হচ্ছে এগুলো ক্যান্সারের কারণ।
গবেষকরা বলেন, যারা অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া ও বার-বি-কিউ করা মাংস এবং এ জাতীয় খাবারে অভ্যস্ত তারা অগ্ন্যাশয়, কোলোরেক্টাল ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকেন।
অ্যালকোহল ত্যাগ করুন :
পরিমিত অ্যালকোহল হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়-এ অজুহাতে অনেকেই দিব্যি অ্যালকোহল পান চালিয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন সঠিক জীবনযাপন পদ্ধতি ও সুস্থ খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করেই যখন আপনি হৃদরোগের ঝুঁকিমুক্ত থাকতে পারেন, তখন অ্যালকোহলের কোনো প্রয়োজন নেই। অ্যালকোহল খাদ্যনালী, মুখগহ্বর, গলা, স্বরযন্ত্র, লিভার ও স্তন ক্যান্সার এবং উচ্চ কোলেস্টেরলের ঝুঁকি বাড়ায়।
ব্যায়াম হোক নিত্যদিনের সঙ্গী :
ব্যায়াম ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। কারণ যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, দেখা গেছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা সুস্থ জীবনাচারী। এছাড়াও নিয়মিত ব্যায়ামে শরীরের হরমোন প্রবাহ, কোষবৃদ্ধির হার, ইনসুলিন সংবেদনশীলতা থাকে স্বাভাবিক। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে সংহত ও অটুট।
ক্যান্সার রোগীদের বিশেষত অন্ত্রের ক্যান্সারে ভুগছেন যারা, নিয়মিত ব্যায়ামে তাদের নিরাময় প্রক্রিয়া ও ভালো থাকার হারও তুলনামূলক সন্তোষজনক বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। এছাড়াও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ব্যায়ামের ভূমিকা নিয়ে যতগুলো গবেষণা পরিচালিত হয়েছে তার প্রায় সবকটিতেই ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। ফুসফুস, প্রোস্টেট ও জরায়ুর ক্যান্সার প্রতিরোধের বেলায়ও এটি সত্য।
তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবমুক্ত থাকুন :
দেহাভ্যন্তরে কোনো টিউমার সন্দেহে কিংবা অন্যান্য রোগের বেলায়ও এখন ব্যাপকভাবে করা হচ্ছে সিটি স্ক্যান। কিন্তু চিকিৎসক ও রোগী সবারই জানা জরুরি যে, একবার সিটি স্ক্যান করতে গিয়েই আপনাকে বেশ ভালোরকম তেজস্ক্রিয়তার সম্মুখীন হতে হয়, যা আপনার ক্যান্সার-ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষকরা বলেন, রোগ নির্ণয়ের জন্যে সম্ভব হলে তেজস্ক্রিয়তামুক্ত পদ্ধতি যেমন- আল্ট্রাসনোগ্রাম, এমআরআই এসব পদ্ধতি বেছে নেয়াই নিরাপদ। পারতপক্ষে এড়িয়ে চলুন সিটি স্ক্যানের মতো পদ্ধতিগুলো। আর যদি তা করতেই হয়, তবে এর সম্ভাব্য ক্ষতির চেয়ে লাভের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে তারপর করুন।
আপনার সেলফোনটিও কিন্তু শরীরের মধ্যে তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব বাড়ায়। এক্ষেত্রে আপনার নিজস্ব সচেতনতা জরুরি।
তথ্যসূত্র : হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন।
এএইচ/