ফল পরিচিতি
পুষ্টি ও ভেষজ গুণে গুণান্বিত পেঁপে
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:৪৩ পিএম, ১১ জুন ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ০১:৪৮ পিএম, ১১ জুন ২০১৯ মঙ্গলবার
বিশ্বের অন্যতম প্রধান ফল পেঁপে। পেঁপে পরিচিত ও সহজলভ্য ফল। দেশের আনাচে-কানাচে সর্বত্র পাওয়া যায়। দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি লোভনীয়। অতি পুষ্টিকর ও ভেষজ গুণসম্পন্ন হলো পেঁপে। প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, প্রোটিন, পুষ্টি ও মিনারেল সমৃদ্ধ এই ফল। পেঁপে পাকা খেতে যেমন সুস্বাধু তেমনি তরকারি হিসেবেও বেশ কদর রয়েছে। এ ছাড়া সালাদ, জেলী, হালুয়া, মোরব্বা ও জুস সহ উপাদেয় খাদ্য তৈরি হয় এই পেঁপে দিয়ে।
পরিচিতি : ইংরেজ নাম Papaya। ইউনানী নাম পাপিতা এবং আয়ুর্বেদিক নাম অমৃততুম্বী। এই ফলের উৎপত্তি স্থান মেক্সিকোর দক্ষিণাঞ্চল ও কোস্টারিকা। বাংলাদেশসহ ভারত, আমেরিকা, ব্রাজিল ইত্যাদি দেশে হয়ে থাকে। এটি একটি ছোট আকৃতির অশাখ বৃক্ষবিশেষ। লম্বা বোটাঁযুক্ত ছত্রাকার পাতা বেশ বড় হয় এবং সর্পিল আকারে কান্ডের উপরি অংশে সজ্জিত থাকে। প্রায় সারা বছরেই ফুল ও ফল হয়। কাঁচা ফল সবুজ, পাকা ফল হলুদ বা পীত বর্ণের। কাঁচা ফল বাইরের দিক গাঢ় কালচে সবুজ ভেতরে সাদা এবং পাকলে খোসাসহ কমলা রং ধারণ করে। গাছ দ্বিবীজপত্রী চিরহরিৎ ভঙ্গুর। কাণ্ড ঈষৎ ফাঁপা ও নরম। স্ত্রী এবং পুরুষ গাছ আলাদা আলাদা হয়। বিভিন্ন জাতের পেঁপে দেখা যায়। যেমন- হানিডিউ, রাঁচি, আর্লিবাউন্টি, পূষা, সোলা, সিমলা, শাহী রেডলেডী ইত্যাদি। কাণ্ডের খুব নিচ হতে ফল ধরে।
আরও পড়ুন : হলদে-ধূসর পাখি ফুটফুটি (ভিডিও)
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস : জগৎ- Plantae, বর্গ- Brassicales, পরিবার- Caricaceae, গণ- Carica, প্রজাতি- C. papaya, দ্বিপদী নাম- Carica papaya.
রাসায়নিক উপাদান : পাতা ও অপক্ক ফল তরুক্ষীর সমৃদ্ধ। এই তরুক্ষীরে প্রচুর পরিমাণে হজমকারী এনজাইম পেপেন বিদ্যমান। পাতায় অ্যালকালয়েড, গ্লুকোসাইড এবং ফলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন আছে।
প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা পেঁপেতে যা পাওয়া যায় :
আমিষ ০.৬ গ্রাম, স্নেহ ০.১ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৫ গ্রাম, ফাইবার ০.৮ গ্রাম, শর্করা ৭.২ গ্রাম, ভিটামিন সি ৫৭ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৬.০ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৬৯ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৫ মিলিগ্রাম, খাদ্যশক্তি ৩২ কিলোক্যালরি।
এবার দেখে নেই পেঁপের গুণাগুণ :
ফলটিতে অনেক অনেক ভেষজ, প্রাকৃতিক ও খোদায়ী গুণ রয়েছে। বিভিন্ন রকম অসুখ সারাতে পেঁপে খুবই উপকারি বলেও মত দিয়েছেন ভেষজবিদগণ।
১. প্রতিদিন দুপুরে ভাত খাওয়ার পর এবং রাতে ভাত বা রুটি খাওয়ার পর এক টুকরা কাঁচা পেঁপে ভালো করে চিবিয়ে এক গ্লাস পানি পান করলে হজম সম্পর্কিত যে কোনো অসুখ দ্রুত নিরাময় হয়।
২. আমাশা থেকে মুক্তি পাওয়ার অদ্ভুত শক্তি আছে পেঁপেতে। তাই নিয়মিত পেঁপের তরকারি খেলে উদরাময়ে উপকার পাওয়া যায়। প্রতিদিন সকালে কাঁচা পেঁপের আঠা ৫/৭ ফোঁটা ৫/৬ টি বাতাসার সঙ্গে মিশিয়ে খেলে রক্ত আমাশা সেরে যায়।
৩. পেঁপের আঠা ১৫ ফোঁটা ও মধু ১চা চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার আধা ঘন্টা পরে আধ কাপ উঞ্চ পানি খেতে হবে। এভাবে টানা ২ দিন খেলে যেকোনো ক্রিমির উপদ্রব কমে যাবে।
৪. দেড় চামচ পেঁপে পাতার রস এক কাপ পানিতে মিশিয়ে খেলে জ্বরের বেগ, বমি, মাথার যন্ত্রণা, শরীর ব্যথা কমে যাবে।
৬. কাঁচা পেঁপে বা গাছের আঠা যেকোনো দাদে ৩/৪ দিন লাগালে দাদ মিলিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে এক দিন পর পর লাগাতে হবে। যে অ্যাকজিমা শুকনা অথবা রস গড়ায় না, সেখানে ১ দিন অথবা ২ দিন অন্তর পেঁপের আঠা লাগালে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কাঁচা পেঁপের কষ যে কোন ঘা শুকাতে সাহায্য করে।
৭. ১ চামচ পেঁপের আঠা, তার সঙ্গে ৭/৮ চামচ পানি মিশিয়ে ফেটিয়ে, ওই পানি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে কিছুক্ষণ রাখার পর মাথা ধুয়ে নিলে উকুন চলে যায়। এটা টানা ২/৩ দিন করতে হবে।
৮. কাঁচা পেপে রুচি বর্ধক হিসেবেও কার্যকরী। নিয়মিত কাঁচা পেঁপের তরকারি সদ্য বাচ্চা সন্তান জন্ম দেয়া নারীদের স্তনের দুধ বাড়ায়।
৯. পেঁপের রস খেলে জন্ডিস হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এই ফল খেলে শরীর থেকে দূষিত বায়ু সহজেই বেরিয়ে যায়।
১০. পাকা পেঁপে অজীর্ণ কৃমি, আলসার, ডিপথেরিয়া ও ত্বকের ঘায়ে বিশেষভাবে কার্যকরী। চটকে মুখে লাগালে ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি পায়।
পেঁপে গাছের আঠা পেটের অসুখ, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রভৃতি রোগের জন্যও বিশেষ উপকারী। টুথপেস্ট, ক্রীম তৈরিতে পেঁপে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
তবে বিশেষভাবে গর্ভবতী মহিলাদের বেশি পেঁপে খাওয়া উচিত নয়। এছাড়া পেঁপের ক্ষতিকর কিছু নেই।
তথ্যসূত্র : নিউট্রিশন জার্নাল ও ইন্টারনেট।
এএইচ/