ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

এটিএম বুথ থেকে কিভাবে টাকা হাতিয়ে নেয় জালিয়াত চক্র!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:০২ এএম, ১২ জুন ২০১৯ বুধবার

এটিএম বুথ থেকে প্রায় ১৬ লাখ টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে গত সপ্তাহে ছয় জন ইউক্রেনীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঈদের সময় দীর্ঘ ছুটির মধ্যে জালিয়াতির এ ঘটনা ঘটানো হয়েছিল বলে জানায় পুলিশ। তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক কার্ড জালিয়াত চক্রের সংযোগ পাওয়া গেছে। এরপর অনেক জায়গাতেই বেশ কয়েকদিন ধরে এটিএম বুথ বন্ধ ছিল, না হয় অপ্রতুল অর্থ সরবারহের কারণে গ্রাহককে সেবা দিতে পারেনি ব্যাংকগুলো।

কিভাবে জালিয়াতি করেছিল হ্যাকাররা?

জুন মাসের প্রথমদিনে ডাচ বাংলা ব্যাংকের কয়েকটি এটিএম বুথ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে পুলিশ ছয় জন ইউক্রেনীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করে। এরপর পুলিশ কয়েক দফা অভিযান চালিয়েও ঐ চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। শুরুতে ছয় লাখ টাকা লোপাটের কথা জানা গিয়েছিল, পরে পুলিশ জানিয়েছে, কার্যত প্রায় ১৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জালিয়াতরা। সেসময় ডাচ বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মোহাম্মদ শিরিন জানান, জালিয়াত চক্রের সদস্যরা খুবই আধুনিক কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে টাকা তুলে নিচ্ছিলো। "এরকম প্রযুক্তি আমরা কখনো দেখিনি বা শুনিনি। প্রথম যখন এটিএম বুথে এই জালিয়াতি হয়, আমাদের কর্মীরা চেক করে দেখেছে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন হয়নি। এমনকি কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা বেরিয়ে যায়নি।"

সরাসরি এটিএম মেশিনের ভল্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে জালিয়াত চক্র, বলছে পুলিশ "যেটা হয়েছে, সেটা হলো এটিএমের ভল্টে যে টাকা ছিল, সেখান থেকেই ক্যাশ বা নগদ টাকা বের করে নিয়ে গেছে তারা।

ওরা এমন একটা কার্ড ব্যবহার করেছে, যার সঙ্গে কোন গ্রাহকের অ্যাকাউন্টের সঙ্গে সম্পর্ক নেই, এটা সরাসরি `মানি ডিসপেন্সার` থেকে টাকা বের করে নেয়া যায়। এটা সম্ভবত এ সংক্রান্ত সর্বাধুনিক প্রযুক্তি।" এখন ডাচ বাংলা ব্যাংকের প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা এবং এটিএম বুথের নিরাপত্তা দুটোই বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

কত ভাবে হ্যাক হতে পারে এটিএম বুথ বা কার্ড?

১৯৯২ সালে দেশে প্রথম অটোমেটেড টেলার মেশিন যা সংক্ষেপে এটিএম মেশিন নামে পরিচিত তা চালু করা হয়েছিল। এরপর দুই হাজার সালের পর দ্রুত সেই সংখ্যা বাড়তে থাকে। এই মূহুর্তে সারা দেশে দশ হাজারের বেশি এটিএম বুথ রয়েছে, যার অর্ধেকের বেশি বুথ ডাচ-বাংলা ব্যাংকের। বাংলাদেশে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার প্রতি বছর বাড়ছে। কিন্তু এটিএম বুথ বা কার্ড হ্যাক হলে একজন ব্যবহারকারী কিভাবে বুঝবেন? কতভাবে হ্যাক হতে পারে একটি এটিএম বুথ? প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর জোহা জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটি উপায়ে একটি এটিএম বুথ হ্যাক হতে পারে।

১. `জ্যাকপট` ম্যালওয়্যার দিয়ে চুরি

তানভীর জোহা জানিয়েছেন, যে পদ্ধতিতে এটিএম বুধে সর্বশেষ হ্যাকিং এর ঘটনা ঘটেছে, সেটা একেবারেই নতুন একটি ব্যবস্থা। "এ পদ্ধতিতে যে কার্ড দিয়ে জালিয়াতরা টাকা তুলে নেয়, সেটার মধ্যে জ্যাকপট নামে একটি বিশেষায়িত ম্যালওয়্যার স্থাপন করে একটি নির্দিষ্ট এটিএম বুথকে তার ব্যাংকের নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা যায়। এরপর ঐ মেশিন থেকে `অগণিত পরিমাণ` অর্থ তুলে নেয়া সম্ভব।"

২. কার্ড স্কিমিং

দেশে গত কয়েক বছর ধরে ক্যাশ মেশিনের সাথে স্কিমিং যন্ত্র বসিয়ে কার্ড জালিয়াতি, পিন ও পাসওয়ার্ড জালিয়াতির অভিযোগ শোনা গেছে। এ ব্যবস্থায় এটিএম মেশিনের সঙ্গে ছোট্ট একটি যন্ত্র জুড়ে দেয়া থাকে, যার মাধ্যমে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের সব তথ্য কপি হয়ে যায়, পরে যা ব্যবহার করে নির্দিষ্ট কোন অ্যাকাউন্টের অর্থ হাতিয়ে নেয়া যায়।
এ ধরণের কয়েকটি ঘটনা পরপর ঘটার পর ২০১৬ সালে গ্রাহকের কার্ডের সুরক্ষা দিতে প্রতিটি এটিএম বুথে এন্টি স্কিমিং ও পিন শিল্ড ডিভাইস বসানো বাধ্যতামূলক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ জোহা বলছেন, ঐ ঘটনার পর সব ব্যাংক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলেও জালিয়াত চক্রও বসে নেই। "সর্বশেষ ঘটনাটাই এর প্রমাণ।"

৩. কার্ড ক্লোনিং

এ ব্যবস্থায় কোন ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের যাবতীয় তথ্য কপি করে নেবার পর নতুন একটি কার্ডে মোবাইল ফোনের সিমের মত একটি চিপ স্থাপন করে ক্লোনিং করা সম্ভব। মানে হুবহু আরেকটি কার্ড তৈরি করা যাবে এবং এ ব্যবস্থাতেও নির্দিষ্ট একটি অ্যাকাউন্টের পুরো নিয়ন্ত্রণ চলে যায় আরেকজনের কাছে।

৪. শপিং মলের মেশিনে কার্ড রিডার থাকতে পারে

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ জোহা বলছেন, অনেক সময় শপিং মলের মেশিনে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিল দেন অনেকে। কিন্তু সেখানে থাকতে পারে কার্ডে তথ্য হাতিয়ে নেয়ার শংকা। "যে মেশিনে কার্ড সুইপ করে আমরা বিল দেই, সেখানে থাকতে পারে কার্ড রিডার যার মাধ্যমে ঐ কার্ডের তথ্য কপি হয়ে যাবে, যার মাধ্যমে একটি ক্লোন কার্ড বানানো সম্ভব।

"কার্ড রিডার নানা আকারের হতে পারে, অত্যাধুনিক কার্ড হতে পারে এমনকি পাতলা পলিথিনের মত একটি পরত দেয়া। মানে বিল দেয়ার যে মেশিন, তাতে একটা পলিথিনের মত পাতলা স্তরও হাতিয়ে নিতে পারে আপনার কার্ডের সব তথ্য।" এজন্য গ্রাহককে খেয়াল রাখতে হবে বিল দেয়ার যে মেশিন যেন স্বাভাবিক থাকে, কোন আলগা কিছু না থাকে।

সুত্র: বিবিসি

এনএম/ টিআই