ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

পাখি পরিচিতি

সাত রংয়ের সমাহারে বর্ণিল ‘সুমচা’

এরশাদুল হক :

প্রকাশিত : ১০:৫১ এএম, ১২ জুন ২০১৯ বুধবার

সাত রংয়ের সমাহারে বর্ণিল এক পাখির নাম ‘সুমচা’। অতি সুন্দর এ পাখির সৌন্দর্য্য নয়ন জুড়িয়ে দেয়। কোথাও কোথাও এদেরকে নীলপাখি বা বনসুন্দরী নামেও ডাকা হয়। এরা গানেও বেশ পারদর্শী। সুমচা মাথা ঝাঁকিয়ে ঠোঁট ঊর্ধ্বমুখী করে শিস দেয়।

পরিচিতি : ইংরেজি নাম : Indian Pitta। এই পাখি ১৮-২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে এবং এর লেজ বেঁটে প্রকৃতির। চোখের উপর থেকে ঘাড় পর্যন্ত চওড়া করে কাজল টানা। মাথা বাদামি ও চোখের চারদিকে চকলেট রংয়ের বৃত্ত আছে। পিঠ সবুজ, বুক ও পেট হলদে বাদামি রঙের। লেজের তলা ও তলপেট টুকটুকে লাল। লেজের ওপরটা নীল ও ডগা কালো। লম্বা ও মজবুত পা দুটো গোলাপি রংয়ের।

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস : বৈজ্ঞানিক নাম-Pitta brachyura, জগৎ-Animalia, পর্ব- কর্ডাটা, শ্রেণী- পক্ষী, বর্গ Passeriformes, পরিবার-Pittidae, গণ- Pitta, প্রজাতি- P. brachyura.  বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, লাওস ও ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশে এই পাখি দেখা যায়।

আরও পড়ুন : পুষ্টি ও ভেষজ গুণে গুণান্বিত পেঁপে

স্ত্রী এবং পুরুষ পাখি একই রকমের। এরা সহজে উড়তে চায় না। উড়লেও বেশি দূর যায় না। তবে উড়ার গতি খুব দ্রুত। মাটি এদের প্রিয় বিচরণ ক্ষেত্র। সাধারণত ঝোঁপঝাড়ের নিচে স্যাঁতস্যাঁতে মাটিতে চলাফেরা করে থাকে। পচা পাতা উল্টিয়ে ছোট কেঁচো এবং পোকামাকড় খেয়ে থাকে। চিকন সুরে মিষ্টি গলায় হুইট-টিউ-পিয়া-ট-ইউ-হুইট-টিউ স্বরে ডাকে। সকাল, সন্ধ্যা এবং মধ্য রাতে অথবা বৃষ্টির দিনে দুপুরে এদের গান শোনা যায়।

স্ত্রী পাখি গানে বেশি পারদর্শী। গান গাওয়ার ভঙ্গিমাটা অত্যন্ত চমৎকার। আকাশমুখো হয়ে সারা দেহ দুলিয়ে দুলিয়ে লেজ ও পা নাচিয়ে গান করে। একটানা দীর্ঘ সময় গান করতে পারে।

আরও পড়ুন : হলদে-ধূসর পাখি ফুটফুটি (ভিডিও)

রাতেও খাবার খোঁজে। অথচ রাতে খুব বেশি চোখে দেখে না। মানুষকে এড়িয়ে চলে। মাঠ-প্রান্তরের চেয়ে জঙ্গলের ভেতর ফাঁকা স্থানে বিচরণ বেশি করে। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে গলা ছেড়ে কর্কশ কণ্ঠে শিসও দেয়। শিস অনেকটাই বাঁশির সুরের মতো শোনায়।

সুমচা পাখি মার্চ-সেপ্টেম্বর এবং নভেম্বর-জানুয়ারি মাসে মাটি থেকে স্বল্প উচ্চতায় ঝোঁপালো গাছের ডালে বা ঝোঁপের নিচে মাটিতে লতাপাতা, ঘাস দিয়ে বাসা তৈরি করে। এরা ডিম পাড়ে ৪ থেকে ৬টি।  ১৫-১৬ দিনে বাচ্চা ফোটে এবং এই বাচ্চা ১৫ থেকে ২০ দিনে উড়তে শিখে।

তথ্যসূত্র : এটিএম নাছিমুজ্জামানের গ্রাম বাংলার পাখি গ্রন্থ এবং ইন্টারনেট।

এএইচ/