ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

দেশে সাড়ে ৪ কোটি মানুষ ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:০৬ পিএম, ১২ জুন ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ০৬:১০ পিএম, ১২ জুন ২০১৯ বুধবার

বাংলাদেশে নন-অ্যালকোহলিক স্টিয়াটো হেপাটাইটিস(ন্যাশ) বা ফ্যাটি লিভার রোগে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষ আক্রান্ত। এর মধ্যে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত ১৮ লাখ মানুষ। সচেতনতা না বাড়ালে অদূর ভবিষ্যতে দেশের মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে।

দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ন্যাশ দিবস উপলক্ষে বুধবার (১২ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ফোরাম ফর দ্য স্টাডি অব দ্য ইয়ার আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)।

এতে সভাপতিত্ব করেন ফোরাম ফর দ্যা স্টাডি অব দ্যা লিভার, বাংলাদেশের-এর চেয়ারম্যান শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডাঃ শেখ মোহাম্মদ নুর-ই-আলম (ডিউ), সহকারী অধ্যাপক, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, খাদ্যে ভেজালে আমাদের দেশে শাস্তি হয় না। এটা নিশ্চিত করতে হবে। ন্যাশ একটা নীরব ঘাতক। এ রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক বলেন, একটা কথা প্রচলিত আছে, উকিল চায় দেশে অপরাধ বাড়ুক, তাহলে আয় বাড়বে। তেমনি ডাক্তার চায়, অসুখ বাড়লে আয় বাড়বে। কিন্তু কিছু চিকিৎসা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। এ রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ালে কমানো সম্ভব। এ রোগের সম্পূর্ণ চিকিৎসা নেই। ভেজাল ও তেলমুক্ত খাবার খেতে হবে।

মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, পশ্চিমা বিশ্বে খাদ্যের কোয়ালিটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়, ফলে মানুষ ফাস্ট ফুড খেয়েও অসুস্থ কম হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে উঠতি পুঁজিবাদী ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো ভেজাল মিশিয়ে পুঁজি করছে। রাষ্ট্র যদি শক্তভাবে মোকাবিলা না করে, তা হলে ভেজাল দূর হবে না। জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়বে। কোয়ালিটি নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রকে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে।

বক্তারা বলেন, ন্যাশ প্রধানত খাদ্যাভাস বা শারীরিক শ্রম না করলে হয়। এ রোগে মানবদেহের অন্যতম অঙ্গ লিভারের চর্বি জমে এর কার্যক্ষমতা নষ্ট করে। সঠিক সময়ে প্রতিরোধ না করলে ধীরে ধীরে লিভারের কার্যক্ষমতা লোপ পায় যা লিভার সিরোসিস এমনকি লিভার ক্যান্সারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো বাহ্যিক লক্ষণ না থাকায় মানুষ এ রোগের প্রতিকার সম্পর্কে সচেতন নয়। এজন্য সচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই।

গোল টেবিল আলোচনা সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কনক কান্তি বড়ুয়া, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এর আহবায়ক, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, ভু-রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অবঃ) মোহাম্মদ আলী শিকদার, সাবেক সচিব মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, জি-টিভি ও সারাবাংলার প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগের সাবেক ডীন অধ্যাপক আ ব ম ফারুক, এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে লিভার বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন যে এখনই এ রোগ সম্পর্কে জাতীয় পর্যায়ে পর্যাপ্ত সচেতনত তৈরী করা সম্ভব না হলে অদূর ভবিষ্যতে এদেশের মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুকির মধ্যে পড়বে, তার মধ্যে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সার অন্যতম। ২০১৮ সালের ৫ জুন পৃথিবীর ১৫০ জন বিশিষ্ট লিভার বিশেষজ্ঞ লিভারের নীরব ঘাতক ন্যাশ সম্পর্কে বিশ্বব্যাপি সচেতনতা তৈরী ও এর নিরাময়ের লক্ষ্যে একটি আন্তর্জাতিক ঘোষণা পত্রে সই করেন যার মধ্যে ফোরাম ফর দ্যা স্টাডি অব দ্যা লিভার-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) এবং সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর অন্যতম। এই ঘোষণা পত্রেই ১২ জুনকে ‘আন্তর্জাতিক ন্যাশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ফোরাম ফর দ্যা স্টাডি অব দ্যা লিভার ২০১৮ সালের ১২ জুন প্রথম আন্তর্জাতিক ন্যাশ দিবস অত্যন্ত গুরুত্বের সহিত পালন করেছিল।

কেআই/