ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

ভাইয়ের বদলে ভাই গ্রেফতার মুক্তির নির্দেশ আদালতের

রাজশাহী প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৭:৪০ পিএম, ১২ জুন ২০১৯ বুধবার

রাজশাহীতে বড় ভাইয়ের বদলে গ্রেপ্তার হওয়া ছোট ভাই ডাব বিক্রেতা সজল মিয়াকে দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আসামি না হয়েও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া আসামি হিসেবে সজলকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার জবাব দিতে রাজশাহীর শাহ মখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ পারভেজকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সজলের আইনজীবী মোহন কুমার সাহা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আইনজীবী মোহন কুমার বলেন, ‘বুধবার বিকেলে রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের (১ম) বিচার মো. মনসুর আলম এ আদেশ দেন। আদেশ অনুযায়ী ওসি মাসুদ পারভেজকে সাত দিনের মধ্যে আদালতে হাজির হয়ে গ্রেফতারের জবাব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

জানা যায়, নগরীর ছোটবনগ্রাম পশ্চিমপাড়া মহল্লায় বাসিন্দা তোফাজ উদ্দিন ছেলে সজলকে (৩৪) গত ৩০ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার বড় ভাইয়ের নাম সেলিম ওরফে ফজল। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলায় ২০০৯ সালে ফজলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ ঘোষণার সময় ফজল পলাতক ছিলেন। গত ৩০ এপ্রিল শাহ মখদুম থানা পুলিশ এ আসামী হিসেবে সজলকে গ্রেপ্তার করে ফজল হিসেবে তাকে কারাগারে পাঠায়। অপরাধী না হয়েও সজল সাজা ভোগ করেছেন। তার জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করে আদালতে আবেদন করা হবে বলে জানান আইনজীবী মোহন কুমার।

মোহন কুমার বলেন, ‘আদালতের আদেশের পর সজলকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আদালত থেকে আদেশের অনুলিপি সেখানে পাঠানো হবে। এরপর কারা কর্তৃপক্ষ যাচাই করে দেখবে তার বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে কি না। তা না থাকলে সজলকে মুক্তি দেয়া হবে।’

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোজাফফর হোসেন বলেন, নির্দোষ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর জন্য ওসির শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু এখানে দুজন সাক্ষী ওসিকে এফিডেফিট করে দিয়ে বলেছিলেন, এটাই আসামি। তাই ওসির জবাবের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তারপর আদালতই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন।

শাহ মখদুম থানার ওসি এসএম মাসুদ পারভেজেরে শাস্তি দাবি করেছেন সজলের ভাই মো. বাবু। সজলকে গ্রেপ্তারের পর ওসিকে অনেক প্রমাণ দেখিয়ে বলার পরও ওসি কারও কথায় কর্ণপাত করেননি বলে অভিযোগ সজলের পরিবারের।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, সজলকে যখন আদালতে উপস্থাপন করা হয় তখন তার নাম ফজল বলেই পুলিশের গ্রেপ্তারি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল। দুইজন সাক্ষী এ ব্যাপারে এফিডেফিট করে দেয়ায় তাকে সেদিন কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু গত ২৬ মে সজল আসামি নন দাবি করে আইনজীবীর মাধ্যমে নিজের মুক্তির জন্য আবেদন করেন। প্রায় দেড় মাস কারাভোগের পর এ দিন অব্যাহতি পেলেন সজল।

আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০১ সালে আসামি ফজলের বয়স ছিল ২৭ বছর। বর্তমানে তার বয়স হবে ৪৫ বছর। কিন্তু সজলের জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী তার বর্তমান বয়স ৩৫ বছর। এছাড়া আসামি ফজল মামলার রায়ের আগে একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তখন তার শারিরীক গঠন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে সংরক্ষণ করা হয়। এখন আবার পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, গ্রেপ্তার সজলের সঙ্গে সে বর্ণনার উল্লেখযোগ্য তারতম্য রয়েছে।

এমএস/এসি