ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

দান করলে কি পাবেন জেনেনিন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৫৮ এএম, ১৩ জুন ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০২:১৮ পিএম, ১৩ জুন ২০১৯ বৃহস্পতিবার

দান যেমন সমৃদ্ধি আনে তেমনি মর্যাদাও বৃদ্ধি করে। নিঃস্বার্থ ও নীরব দানের মাধ্যমে মানুষ তার মর্যাদার সর্বোচ্চ শিখরে যত তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে পারে তা অন্য কোন পন্থায় সম্ভব হয় না। এর মর্যাদা এতই যে দানকারি কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়ায় স্থান পাবেন।

দান করার জন্য কাউকে ধনী হবার প্রয়োজন নেই। সামর্থ্য অনুযায়ী একটি খেজুর দান করলেও আল্লাহ তা বৃদ্ধি করে পাহাড় পরিমাণ করে দিতে পারেন। যে দানে আন্তরিকতা যত বেশি আল্লাহর কাছে তার ওজন তত বেশি।

হযরত আবু হুরায়রা কর্তৃক বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, হাশরের দিন যখন আরশের ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া অবশিষ্ট থাকবে না তখন আল্লাহতায়ালা যে সাত ধরনের ব্যক্তিকে আরশের ছায়াতলে স্থান দেবেন তাদের মধ্যে একজন হলো সেই ব্যক্তি যে গোপনে দান করে। তার দান ডান হাত কি দান করে তা বাম হাত টের পায় না।’ (মুসলিম)

দানের মর্যাদা এতো বেশি যে অভাবপ্রস্ত অবস্থায়ও দান বন্ধ রাখা উচিত নয়। আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নবী করীম (সা.) এর নিকট আগমন করে জিজ্ঞেস করলো হে আল্লাহর রাসূল (সা.) কোন প্রকার দান সর্বাদিক সওয়াবের। তিনি বললেন, তুমি সুস্থ ও তোমার অর্থের প্রয়োজন থাকা অবস্থায় এবং তুমি অভাবগ্রস্ততার আশঙ্কা করছ ও ধনী হওয়ার আশা পোষণ করছো এমন অবস্থায় যে দান করবে। আর ওই সময় পর্যন্ত বিলম্ব করবে না যখন তোমার প্রাণ ওষ্ঠাগত হবে তার তুমি বলবে, অমুককে অত আর অমুককে এত পরিমাণ দিলাম। বস্তুত তা তো অপরের হয়ে গেছে। (বুখারী)

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে গেলো যে সর্বাবস্থায় মানুষের সহযোগিতায় নিজের হস্তকে প্রসারিত রাখতে হবে তা সচ্ছল অবস্থায় হোক আর অসচ্ছল অবস্থায় হোক।

হযরত সালেম (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূল (সা.) বলেন, শুধুমাত্র দু’জন লোকের ওপর ঈর্ষা করা যায়। একজন হলো যাকে আল্লাহ তায়ালা কুরআনের জ্ঞান দিয়েছেন আর সে রাত দিন তা চর্চা করে। অপরজন হলো যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন আর রাতদিন সে মানব কল্যাণে খরচ করে। (বুখারী)

দান দুশ্চিন্তা ও সমস্যা থেকে দাতাকে মুক্তি দেয়। তবে এই দান হতে হবে আন্তরিক। দান করে প্রচার করা যাবে না অথবা কাউকে খোটা দেয়া যাবে না।

আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘যারা আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে এবং যা ব্যয় করে তা চর্চা করে বেড়ায় না এবং কষ্টও দেয় না, তাদের জন্যই সংরক্ষিত রয়েছে পুরস্কার তাদের পালন কর্তার কাছে। তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখ-কষ্টে নিপতিত হবে না।’ (সূরা বাকারাহ ২৬২)

আল্লাহ নিজেই নিশ্চয়তা দিয়েছেন, শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা নিঃস্বার্থ প্রচারবিমুখ দান সব ভয়-শংকা, দুশ্চিন্তা থেকে মানুষকে মুক্তি দান করবেন পৃথিবীর জীবনে ও পরকালে।

দানের ফলাফল পুরোপুরি নির্ভর করে দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। প্রতিটি বুদ্ধিমান ব্যক্তির উচিত দান করার আগে নিজের দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বচ্ছ করে নেয়া। শুধু স্রষ্টার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দান করা, তা যত সামান্য হোক না কেন।
এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন : যারা প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য সবর করে, সালাত আদায় করে, আমি যা  দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং যারা ভাল দিয়ে মন্দ দূর করে, তাদের জন্য রয়েছে পরকালের শুভ পরিণাম। (সূরা রাদ ২২)

দান পরকালের কঠিন সময়ে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করে, ইহকালে প্রাচুর্যময় ও দুশ্চিন্তাহীন মর্যাদাপূর্ণ জীবন উপহার দেয়।

তথ্যসূত্র : ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরীর প্রশান্তি ও প্রাচুর্যের সোপান গ্রন্থ।

এএইচ/