সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:০৭ পিএম, ১৩ জুন ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১০:১৫ পিএম, ১৩ জুন ২০১৯ বৃহস্পতিবার
সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের এই স্লোগানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘোষণা করেছেন।
২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের মোট আকার দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। অনুদানসহ বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে আসবে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এনবিআর বহিভূত কর খাত থেকে আসবে ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কর ব্যতিত প্রাপ্তি হবে ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান থেকে আসবে ৪ হাজার ১শ’ ৬৮ কোটি টাকা।
মোট ব্যয়ের মধ্যে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ দিতে হবে ৫২ হাজার ৭শ’ ১৭ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। বাজেটে ঘাটতি থাকছে জিডিপির ৪.৮ শতাংশ। এ হিসেবে বাজেট সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়বে ১ লাখ ৪১ হাজার ২১২ কোটি টাকা। অনুদান ব্যতিত সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়াবে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা।
ঘাটতি পূরণে সরকার প্রথমত বিদেশ থেকে ঋণ নিবে ৭৫ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। বাকি ঘাটতি পূরণ হবে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নিয়ে। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়া হবে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। আর ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে নেয়া হবে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা আসবে সঞ্চয়পত্র থেকে।
এর আগে মন্ত্রিসভা ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের অনুমোদন দেয়। বাজেট ঘোষণার আগে দুপুর ১টার একটু পর জাতীয় সংসদ ভবনে বিশেষ বৈঠকে মন্ত্রিসভা এ অনুমোদন দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার এ বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
অসুস্থ থাকার কারণে আসতে দেরি হওয়ায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে ছাড়াই মন্ত্রিসভার বৈঠক শুরু হয়। পরে অর্থমন্ত্রী অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে সরাসরি বৈঠকে যোগ দেন। এর আগে দুপুর পৌনে ১টার দিকে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে যোগদান জন্য গুলশানে তার নিজ বাসা থেকে রওনা দেন।
অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের এটি প্রথম বাজেট। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা একাদশ বাজেট। আগামী ৩০ জুন এই বাজেট পাস হবে। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে নতুন অর্থবছর।
অর্থমন্ত্রীর ভাষায় এটি হচ্ছে ‘স্মার্ট’বাজেট। অর্থমন্ত্রী তার জীবনের প্রথম বাজেটের শিরোনাম করেছেন ‘সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের’।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন আগামী অর্থবছরের বাজেট দেশের সকল মানুষের জন্য। এতে পার্বত্য অঞ্চল যেমনি বাদ যায়নি, তেমনি বাদ যায়নি সমতল ও চরাঞ্চল, উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিমের কেউই বাদ পড়েনি।
অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করতে হবে, তবে সেটা করের হার বাড়িয়ে নয়। বরং সেটা করতে হবে করের আওতা বিস্তৃত করে। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন আগামী বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় কোন জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে পারে তেমন কোন উপকরণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
অর্থমন্ত্রীর অসুস্থতার কারণে পরে বাজেট বক্তৃতা পাঠ করেন প্রধানমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী আজ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকার সংশোধিত বাজেট পেশ করেন। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর এটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের এ মেয়াদের প্রথম বাজেট। এবারও সংসদে বিরোধীদলের উপস্থিতিতে এ বাজেট পেশ করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বিকেল ৩ টা ০৮ মিনিটে বাজেট বক্তৃতার শুরুতে তিনি বলেন, জাতি স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে, জাতীয় জীবনে একটি ঐতিহাসিক দুর্লভ মুহূর্ত। সুখী, সমৃদ্ধ কল্যাণমুখী ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে দিন বদলের সনদ রূপকল্প ২০২১ সফলভাবে বাস্তবায়ন এবং এরই ধারাবাহিকতায় ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার আজীবন লালিত স্বপ্ন ‘ সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, জাতির কাছে বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের অন্যান্য শহীদ, চার জাতীয় নেতা, মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা, নির্যাতিতা ২ লাখ মা বোন এবং অন্যান্য শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মুস্তফা কামালকে সাথে নিয়ে অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সংসদে রাষ্ট্রপতির গ্যালারিতে বসে বাজেট বক্তৃতা শোনেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ বিভিন্ন বিদেশী কূটনীতিক, উন্নয়ন সহযোগী ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধি, বিশিষ্ট আমন্ত্রিত ব্যক্তি এবং ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারাও সংসদ ভবনে উপস্থিত থেকে বাজেট বক্তৃতা শোনেন।