পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে একগুচ্ছ প্রণোদনা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৭:৫১ পিএম, ১৩ জুন ২০১৯ বৃহস্পতিবার
প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজার চাঙা করতে থাকছে একগুচ্ছ প্রণোদনা। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়েছে বাজেট বক্তৃতায়।
বাজেটে জানানো হয়, তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহের জন্য ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ আয় করমুক্ত থাকবে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার হতে প্রাপ্ত লভ্যাংশের উপর দ্বৈত কর পরিহার করা হবে।
বাজেটে ক্ষুদ্র বিনোয়াগকারীদের জন্যও রয়েছে করমুক্ত সুবিধা। প্রস্তাবিত বাজেটে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীগণকে প্রণোদনা প্রদান এবং পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করার জন্য ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতাদের হাতে পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি হতে প্রাপ্ত ডিভেডেন্ড আয়ের করমুক্ত সীমা ২৫ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৫০ হাজার টাকায় নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, একটি শক্তিশালী অর্থনীতির জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার। অর্থনীতি যত শক্তিশালী সেই দেশের পুঁজিবাজারটিও স্বাভাবিক নিয়মেই শক্তিশালী থাকবে। আমরা যেমন চাই আমাদের দেশের জন্য একটি শক্তিশালী অর্থনীতি। ঠিক তেমনিভাবেই আমরা দেখতে চাই একটি বিকশিত পুঁজিবার। শিল্প বিনিয়োগে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সংগ্রহের আদর্শ মাধ্যম হচ্ছে পুঁজিবাজার। তবে বাংলাদেশে ব্যাংক খাত হতে স্বল্পমেয়াদি আমানতের বিপরীতে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদানের প্রবণতা লক্ষ্যণীয়, যা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে দেখা যায় না। এতে ভারসাম্যহীন অবস্থা তৈরি হয়। আর তাতে চূড়ান্তভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এবং ঋণ গ্রহীতারা। আমরা পুঁজিবাজার হতে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সংগ্রহে ঋণগ্রহীতাদের উৎসাহ প্রদানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, পুঁজিবাজারের পরিপালন নিশ্চিত করার জন্য নজরদারি জোরদার করা হবে।
অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, পুঁজিবাজারে কোন রুগ্ন কোম্পানিকে যদি কোন আর্থিক দিক থেকে সবল কোম্পানি আত্মীয়করণ করতে চায় সেটা বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রয়োজনে দরকষাকষির মাধ্যমে কিছুটা বিনিয়োগ সুবিধা দিয়ে হলেও এ কাজটা করা গেলে পুঁজিবাজার অনেক শক্তিশালী অবস্থানে আসবে বলে আমরা মনে করি। এই প্রক্রিয়ায় পুঁজিবাজারের গভীরতা বাড়বে এবং স্থিতিশীলও থাকবে।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীগণ কোম্পানি থেকে ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রাপ্তির প্রত্যাশা করেন। সে বিবেচনায় ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান পুঁজিবাজারে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি ও পুঁজিবাজার শক্তিশালীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু ক্যাশ ডিভিডেন্ডের পরিবর্তে স্টক ডিভিডেন্ড তথা বোনাস শেয়ার বিতরণের প্রবণতা কোম্পানিসমূহের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। এতে বিনিয়োগকারীগণ তাদের প্রত্যাশিত প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। স্টক ডিভিডেন্ডের পরিবর্তে ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদানকে উৎসাহিত করার জন্য কোন কোম্পানি স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে উক্ত স্টক ডিভিডেন্ড এর উপর ১৫ শতাংশ কর প্রদানের বিধান প্রস্তাব করছি।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, কোম্পানির অর্জিত মুনাফা থেকে শেয়ার হোল্ডারগণ তথা বিনিয়োগকারীদেরকে ডিভিডেন্ড দেয়ার পরিবর্তে রিটেইনড আর্নিস বা বিভিন্ন ধরনের রিজার্ভ হিসাবে রেখে দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এতে প্রত্যাশিত ডিভিডেন্ড প্রাপ্তি থেকে বিনিয়োগকারীগণ বঞ্চিত হচ্ছেন এবং পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ ধরনের প্রবণতা রোধ করা প্রয়োজন। এ জন্য কোন কোম্পানির কোন আয় বছরে রিটেইনড আর্নিস, রিজার্ভ ইত্যাদির সমষ্টি যদি পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি হয় তাহলে যতটুকু বেশি হবে তার উপর সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে ১৫ শতাংশ কর প্রদানের বিধান প্রস্তাব করছি।
প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহী করার জন্য এ বছর নিবাসী ও অনিবাসী সকল কোম্পানির ক্ষেত্রে একাধিকার করারোপ বিধান কার্যকর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে, নিবাসী কোম্পানির পাশাপাশি অনিবাসী কোম্পানির ডিভিডেন্ট আয়ের উপরও একাধিকবার করারোপণ হবে না।