ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৮ ১৪৩১

ফল পরিচিতি

রসালো ফল ‘লিচু’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:০৫ এএম, ১৪ জুন ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ১২:৪৬ পিএম, ১৪ জুন ২০১৯ শুক্রবার

আকারে ছোট কিন্তু দৃষ্টিনন্দন, তেমনি প্রাণ জুড়ানো ফল লিচু। মুখে দিলে রসে মুখ ভরে যায়। এ জন্যে রসালো ফল লিচু। স্বাদে গুণে অনন্য এই ফল। শক্তিবর্ধকও বটে। তিন/চারটি লিচু খেলে শরীরে গতি আসে। স্বল্প সময়ের ফল লিচু। ২০ থেকে ২২ দিন বাজারে পাওয়া যায়। বিশ্বের সবচেয়ে রোমান্টিক ফল হিসেবে লিচুকে গণ্য করা হয়। যুগে যুগে রাজা-বাদশারা তাদের রানী-বেগমদের মন জয় করার জন্য লিচু উপহার দিতেন।

ভিটামিন ও খাদ্যশক্তির অন্যতম উৎস লিচু। এতে রয়েছে মানব শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান। এছাড়া শ্বেতসার এবং ভিটামিন সি-ও রয়েছে। ছোট বড় সব বয়সের মানুষই এই সুস্বাদু ফল খেতে পারে।

পরিচিতি : লাই চীন নামের এক চীনা বিজ্ঞানীর গবেষণার ফল লিচু। তার নামানুসারে এই ফলের নাম হয় লিচু। এর ইংরেজি নাম Litchi. বৈজ্ঞানিক নাম Litchi chinensis. লিচু গাছ বহুবর্ষী এবং বহু শাখা-প্রশাখা যুক্ত চির সবুজ। পাতার উপরিভাগ গাঢ় সবুজ ও চকচকে হয়ে থাকে। গাছ ১০-৩৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট হয়ে থাকে। ডালের মাথায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফুল ধরে। ফলের মধ্যে একটি মাত্র খয়েরী রঙের বীজ থাকে। বীজের বাইরের অংশ সাদা অস্বচ্ছ শাঁস। ফলটি পাকলে হলদে ও লাল রঙ ধারণ করে। লিচুর ব্যাস সাধারণত ১-১.৫ ইঞ্চি।

আমাদের দেশে এটি গ্রীষ্মকালীন ফল এবং এখানে ফেব্রুয়ারিতে এর মুকুল আসে ও ফল সাধারণত মে মাসের শেষের দিকে পাকে। বাংলাদেশের সব স্থানেই লিচু হয়, তবে উত্তরবঙ্গের রাজশাহী ও দিনাজপুর অঞ্চলে এর ভাল ফলন হয়। বিভিন্ন জাতের মধ্যে বেদানা, বোম্বাই, চায়না, মঙ্গলবাড়ী, কদমি, মোজাফফর, মাদ্রাজী ইত্যাদি দেখা যায়। মঙ্গলবাড়িয়া লিচু বড় আকারের ও স্বাদের জন্য বিশেষভাবে জনপ্রিয়।

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস : জগৎ- উদ্ভিদ, শ্রেণীবিহীন- সপুষ্পক উদ্ভিদ, বর্গ- সেপিন্ডালেস, পরিবার- সেপিন্ডাসিয়া, উপপরিবার- সেপিন্ডোইডা, গণ- লিচি, প্রজাতি- এল. কিনেন্সিস।

বিস্তৃতি : লিচু হলো সেপিন্ডাসিয়া পরিবারের লিচি গণের একমাত্র সদস্য। এটি নিরক্ষীয় ও উপ-নিরক্ষীয় অঞ্চলে জন্মে থাকে। এর আদি নিবাস চীনে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মায়ানমার, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল সহ বিশ্বের কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তিয় বহু দেশে লিচু চাষ করা হয়।

১০০ গ্রাম লিচুতে রয়েছে : প্রোটিন ১.১ গ্রাম, ফ্যাট ০.২ গ্রাম, শ্বেতসার ১৩.৬ গ্রাম, ভিটামিন বি-১ ০.০২ গ্রাম, ভিটামিন বি-২ ০.০৬ গ্রাম, খনিজ লবণ ০.৫ গ্রাম, ভিটামিন-সি ৩১ মি.গ্রা, ক্যালসিয়াম ১০ মি.গ্রা, লৌহ ০.৭ মি.গ্রাম এবং ক্যালরি ৬১ কিলোগ্রাম।

লিচুর উপকারিতা : লিচুতে রয়েছে সামান্য পরিমাণে প্রোটিন ও ফ্যাট যা মানব দেহের জন্য প্রয়োজন। রয়েছে ভিটামিন সি যা চর্মরোগ ও স্কার্ভি দূর করে। লিচু শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।

লিচুতে আছে ক্যালসিয়াম। দেহের হাড় গঠন ও হাড়ের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে এই ক্যালশিয়াম। খাদ্য হজমকারী আঁশ, ভিটামিন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে যা শরীরে জমে থাকে ও দেহ সুস্থ রাখে।

লিচুর অলিগোনল নামের উপাদান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লুয়েঞ্জা হিসেবে কাজ করে। এ উপাদান রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে, ত্বকে ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করে এবং ওজন কমায়।

লিচু মানবদেহে ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা হ্রাস করে। ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ ধ্বংস করে। এতে অবস্থিত ফ্ল্যাভানয়েডস নামক উপাদান স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

লিচুতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

এটি শরীরে ফ্লুইডের পরিমাণ বাড়ায়। লিচুতে ক্যালরির পরিমাণ বেশি থাকে তাই ডায়াবেটিস রোগী পরিমিত লিচু খাবেন।

তথ্যসূত্র : এটিএম নাছিমুজ্জামানের ফল পরিচিতি গ্রন্থ এবং ইন্টারনেট।

এএইচ/