ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

শরীর দুর্বলতার প্রধান কারণ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৫২ এএম, ১৪ জুন ২০১৯ শুক্রবার

আমাদের মধ্যে অনেকেই মাঝে মধ্যে বলে থাকেন- ভালো লাগছে না, কাজে মন বসছে না, শরীর ম্যাজ ম্যাজ লাগছে, অসার লাগে, ক্লান্তি বোধ হয়, বেশি বেশি ঘুম পায়, ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট হয়, কাজে গতি আসে না ইত্যাদি। এগুলো শরীর দুর্বলতার লক্ষণ। বড় কোন রোগের উপসর্গও হতে পারে এই দুর্বলতা।

দুর্বলতার বহু কারণ থাকলেও আমাদের দেশে দুর্বলতার প্রধান কারণগুলো হচ্ছে- রক্ত স্বল্পতা, আমিষের অভাব, ক্রনিক পাতলা পায়খানা, ডায়াবেটিস, ক্রনিক লিভার রোগ, ক্রমিক কিডনি রোগ, প্রকাথ ক্যান্সার, থাইরয়েড রোগ, ক্রমিক হার্ট ফেইলিউর ইত্যাদি।

রক্ত স্বল্পতা : ক্রিমি, মহিলাদের বেশি রক্তস্রাব, অর্শ্ব থেকে রক্তপাত, ক্রনিক রোগ, ভিটামিনের অভাব, অস্থিমজ্জা রোগ এবং জন্ম থেকে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম ইত্যাদি কারণে শরীরে রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয়। দুর্বলতার অন্যতম কারণ রক্ত স্বল্পতা। এর চিকিৎসার পাশাপাশি খাবারের প্রতি মনোযোগী হোন।

আমিষের অভাব : আমষের অভাবে হাত, মুখ ফুলে যাওয়া, পায়ের গোড়ালি ফুলে যাওয়া, পেটে পানি হওয়া, ক্রমাগত দুর্বলতা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। ছানা, পনির, ডিম, বিভিন্ন রকম সবুজ শ্বাস-সব্জি আমিষ ঘাটতি পুষিয়ে দেয়।

ক্রনিক ডায়রিয়া : আমাদের খাদ্যের মূল জিনিসগুলো- আমিষ, শর্করা, পানি, ভিটামিন, বিভিন্ন ধরনের লবণ, লোহা, দস্তা ইত্যাদি জিনিসগুলো ক্ষুদ্রান্ত বিভিন্ন পর্যায়ে শুষে নেয়। এই শুষে নেয়ার কোন পর্যায়ে যদি ক্ষুদ্রান্ত অক্ষম বা দুর্বল হয় তখন বার বার পাতলা পায়খানা হয়। খাদ্যের মূল জিনিসগুলো মলের সঙ্গে বের হয়ে যাওয়ায় শরীর দুর্বলতা হয়। এই সময় বার বার স্যালাইন খেতে হবে।

ক্রমিক লিভার রোগ : মদ পান এবং জন্ডিস লিভার রোগের কারণ। চিন্তাশক্তি ঘোলাটে হওয়া, রক্ত বমি হওয়া, নিয়মিত অবসাদ বোধ এবং পা ও ফেট ফুলে যাওয়ার উপসর্গ দেখা দেয়। মদ্য পান ছেড়ে দিয়ে আমিষ, শর্করা ও ভিটামিন প্রধান খাবার খেলে এই রোগের দুর্বলতা কাটানো যায়।

ক্রনিক কিডনি রোগ : কিডনির প্রধান কাজ শরীর থেকে প্রসাবের মাধ্যমে বিষাক্ত ও বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়া। কিডনির ক্রনিক অসুখ হলে বিষাক্ত ও বর্জ্য পদার্থ প্রসাবের মাধ্যমে যথেষ্ট পরিমাণ বের হতে পারে না। তখন অবসাদ বা দুর্বলতার উপসর্গ দেখা দেয়। এই অবস্থায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

ক্রনিক হার্ট ফেইলিউর : করোনারি রোগ, হাইপ্রেসার রোগ এবং হার্টের বিভিন্ন ধরনের ভাল্ব রোগ সক্রিয় চিকিৎসা না করলে এক পর্যায়ে হার্টের মাংসপেশী দুর্বল হয়ে পাম্প করার শক্তি অনেকাংশে হারিয়ে ফেলে। এই অবস্থায় প্রথম দিকে অল্প পরিশ্রমে রোগী হাঁপিয়ে পড়বে। পরবর্তী পর্যায়ে লিভার ফুলে যাওয়া, পায়ে পানি, পেটে পানি এবং দুর্বলতা প্রধান উপসর্গ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞ দ্বারা চিকিৎসা নিন।

ডায়াবেটিস : দুর্বলতার অন্যতম প্রধান কারণ ডায়াবেটিস। প্রসাবের সঙ্গে সুগার বের হয়ে যাওয়ায় দুর্বলতা দেখা দেয়। পরিমিত শর্করা খেলে রক্তে সুগার স্বাভাবিক থাকবে এবং প্রসাবে সুগার যাবে না। ডায়াবেটিসের কারণে হার্ট, কিডনি এবং দৃষ্টির জটিলতা দেখা দেয়। নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন ও ব্যায়াম করুন।

থাইরয়েড রোগ : আমাদের গলার সামনের দিকে চামড়ার ঠিক নিচেই বাইরে থেকে প্রায় দেখা যায় না এমন একটি গ্ল্যান্ড থাকে। এর নাম থাইরয়েড গ্ল্যান্ড। খাবার ও পানির আয়োডিন থেকে মূলত থাইরয়েড হরমোন তৈরি হয়। এই হরমোনের ঘাটতি হলে থাইরয়েড রোগ হতে পারে। এ রোগে দুর্বলতার সঙ্গে শরীর ফুলে যাওয়া উপসর্গ হতে পারে। থাইরয়েড হরমোন সম্পর্কিত রক্ত পরীক্ষা করে এসব রোগ ধরা সহজ। 

তথ্যসূত্র : অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর, রোগ চিনতে চান? গ্রন্থ।

এএইচ/