যেভাবে সেমিফাইনালে যেতে পারে বাংলাদেশ [ভিডিও]
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:৪৩ পিএম, ১৯ জুন ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ০২:০৬ পিএম, ১৯ জুন ২০১৯ বুধবার
দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বড় দলকে হারিয়ে এবারের বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু পরের দুই ম্যাচ টানা হারে ধাক্কা খেয়েছে টাইগাররা। এরপর শ্রীলঙ্কার সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগিতে কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে তারা। তবে সেমিফাইনালে যাওয়ার স্বপ্ন এখনো শেষ হয়ে যায়নি মাশরাফিদের। যে কোনো সময় হিসেব নিকেষ পাল্টে যেতে পারে।
এ পর্যন্ত বাংলাদেশ দল নিজেদের ৫ ম্যাচের মধ্যে দুইটিতে জিতেছে আর হেরেছে ২টিতে। এর মধ্যে পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়েছে ১টিতে। এখন ৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পঞ্চম স্থানে টাইগাররা। তবে সেমিফাইনালে যেতে হলে বাংলাদেশের প্রয়োজন ১১ পয়েন্ট। ম্যাচ রয়েছে আরও ৪টি। তাই ওই ম্যাচগুলোতে আর ৬ পয়েন্ট পেলেই সেমিফাইনাল খেলতে পারবে টাইগাররা।
এদিকে, বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক যে পারফরম্যান্স, সেটি আসলে নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে সামনের দিনগুলোতে আরও চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়ে কিভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে; স্বাপ্নের সিঁড়িতে পৌঁছে যাবে। তাই এ অবস্থায় সেমিফাইনালে যেতে হলে কী করতে হবে মাশরাফি বাহিনীকে?
এ বিষয়ে একুশে টিভির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘একুশের রাত’-এ অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে বিস্তারিত জানালেন জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার জাভেদ ওমর বেলিম গোল্লা, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক পরিচালক খন্দকার জামিল উদ্দিন এবং দৈনিক কালের কণ্ঠের উপ সম্পাদক মোস্তফা মামুন।
জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার জাভেদ ওমর বেলিম বলেন, বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে এবারের দলটা নিয়ে আমাদের খুব প্রত্যাশা ছিল। বাংলাদেশের যতগুলো দল বিশ্বকাপ খেলেছে, এই দলটা সবচেয়ে অভিজ্ঞ।
বেলিম বলেন, সবকিছু মিলিয়ে আমি ভারতকে একটু এগিয়ে রাখছি। কারণ এই বিশ্বকাপ জিততে হলে ভালো তো খেলতেই হবে সেই সঙ্গে বোলিং দিয়ে আপনাকে চ্যাম্পিয়ন হতে হবে। তাই ওই জন্য বলছি, প্রথম আমি বলবো ভারত তারপর অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ড আর এর মধ্যে আমি যেটা বলছি, আমি অবশ্যই স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশ ফাইনাল খেলবে। কিন্তু বাস্তব হচ্ছে, আমাদের এখন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিততে হবে তারপর টোটাল এক্সট্রা অর্ডিনারি খেলে চারে যেতে হবে। যেহেতু, নিউজিল্যান্ডের একটা ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়াতে একটু পিছিয়ে আছে। তাই ওই জায়গাতে আমি বাংলাদেশকে দেখতে চাই। আর আল্লাহ না করুক, ওই চার নাম্বারে যদি বাংলাদেশ না থাকে তবে সেখানে নিউজিল্যান্ড থাকবে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক পরিচালক খন্দকার জামিল উদ্দিন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের যে পারফরম্যান্স এবং যারা জুনিয়র তাদের যে পারফরম্যান্স তা একটু আশা যোগাচ্ছে। একটা সময় ছিল, পঞ্চপাণ্ডব পারফর্ম করলেই বাংলাদেশ জিততো আর পঞ্চপাণ্ডব পারফর্ম না করলে বাংলাদেশ হেরে যেত। অর্থাৎ, জুনিয়রদের খুব একটা ভূমিকা ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে জুনিয়ররাও ভূমিকা রাখছে। যেমন- লিটন দাস, বিশ্বকাপে যার প্রথম ম্যাচ। প্রথম ম্যাচেই সে ৯৪ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেছে। বুঝাই যায়নি যে এটা তার প্রথম ম্যাচ। অর্থাৎ, জুনিয়রাও কিন্তু সিনিয়রদের সঙ্গে মিলে পারফর্ম করছে। এটা কিন্তু আমরা ২০১৫তে দেখেছিলাম। এবং ২০১৫তে যখন এ রকম জুনিয়ররা সিনিয়রদের সঙ্গে পারফর্ম করছিল, তখন কিন্তু দেশের মাটিতে আমরা পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজ পরাজিত করেছিলাম। তবে মাঝখানে একটু খেই হারিয়ে গিয়েছিল আমাদের। এখন সেটা আবার আমরা দেখতে পারছি।
বিসিবির সাবেক এই পরিচালক বলেন, বাংলাদেশের এখনও আশা আছে। আমাদের পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা যদি ধরে রাখতে পারি, তাহলে অবশ্যই আমাদের সম্ভাবনা আছে। এছাড়া, ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড-এদের সঙ্গেই আসলে আমাদের লড়াইটা করতে হবে। আসলে নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গেই আমাদের লড়াইটা হবে শেষ চারে। কারণ আমরা যদি অস্ট্রেলিয়াকে পরবর্তী ম্যাচে পরাজিত করতে পারি তবে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে আমরা থকবো। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, দোয়া করতে হবে যেন বৃষ্টির বাগড়ায় আমরা না পরি। বিশেষ করে আফগানিস্তানের মতো দলের সঙ্গে ম্যাচে, যেটা শ্রীলংকার সঙ্গে আমরা কিন্তু ১টা পয়েন্ট একেবারেই হাতছাড়া করেছি। কারণ আমাদের দল যে রকম অবস্থায় আছে, তাতে আমি মনে করি শ্রীলংকার সঙ্গেও আমরা জিততে পারতাম। এতে আরেকটা পয়েন্ট যোগ হতো। ঠিক সে রকম আমাদের ভালো ম্যাচে পরবর্তী যে কয়টা ম্যাচ আছে, আমরা যাতে পুরো ম্যাচ খেলতে পারি। এবং আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যটা অর্জন করতে পারি, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবশ্যই লড়াইটা হবে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে। আর পরবর্তী ম্যাচে আমরা যদি অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারি, তবে আমাদের সম্ভাবনাটা উজ্জ্বল হয়ে দাঁড়াবে।
সাংবাদিক মোস্তফা মামুন বলেন, বাংলাদেশ সেমিফাইনালে যেতে পারবে কি না, সে বিষয়ে আলোচনা এখনই না করাটাই ভালো। কারণ এটা বলা খুব ক্রিটিক্যাল। এখন যে সমীকরণ সেটা মিলানো খুব কঠিন। এখন বিষয়টা হচ্ছে, এ ওর সঙ্গে জিতবে; ও এর সঙ্গে হারবে। তাই এ সব একদমই মাথা থেকে বাদ দিয়ে ম্যাচ বাই ম্যাচ দেখা উচিত যে আমরা আমাদের পরবর্তী ম্যাচ জিতব; এই ম্যাচে আমাদের এ রকম একাদশ দরকার ওই ম্যাচে আমাদের এই দরকার- এগুলো দেখতে হবে।
তিনি বলেন, হিসাবটা যদি ক্লিয়ার থাকত, তাহলে আমরা দেখতাম যে এটা শেষ ম্যাচ ফলে তাদের ওটা লাগবে আর আমাদের এটা করতে হবে। আসলে এখন কোনটা যে কি সেটা বলা মুশকিল। এখন অনেকগুলো ম্যাচের ফলাফল কী হলে ভালো হবে, সেটা বুঝা যাচ্ছে না। মনে করেন, একটা ম্যাচ হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া বনাম ভারত। এখন এখানে কী হলে আমাদের ভালো হবে? বা নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা। এখন মনে করেন এদের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার খেলা হচ্ছে। তাহলে স্বাভাবিক হিসাব হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়া জিতে গেলে আমাদের জন্য ভালো। কিন্তু সেটাও আবার অজানা যে, এই দক্ষিণ আফ্রিকা- নিউজিল্যান্ডের যে পয়েন্ট তা এটা হয়ে যেতে পারে; ওটা হয়ে যেতে পারে।
তাই এখন আমাদের ম্যাচ বাই ম্যাচ দেখা উচিত বলে মনে করেন তিনি। বলেন, প্রতিটা ম্যাচ আসলে ওইভাবে চিন্তা করা উচিত। অন্য সব হিসাবে না গিয়ে। আর বিশ্বকাপের ওভারঅল নিয়ে যদি আমি চিন্তা করি অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে পরবর্তী ম্যাচটা, সেখানে দেখা যায় অস্ট্রেলিয়া কিন্তু এখনও সেটেল টিম না। যদিও তারা ৮ পয়েন্ট পেয়েছে। কিন্তু দেখা যায় যে প্রত্যেক ম্যাচেই তারা কোনও না কোনও সময় ভালনারেবল (সুরক্ষিত নয় এমন) হচ্ছে। এবং তারাও বলছে, তারা সেরা ছন্দে নেই। ফলে এটিই উপযুক্ত সময়। কারণ আমাদের একটা মোমেনটাম আছে। বাংলাদেশ টিম কিন্তু মোমেনটামের উপর খেলে। প্লেয়ার-টেয়ার আমরা যত যাই কিছু বলি, যখন মোমেনটাম থাকে ধরেন সাকিব আমাদের সেরা খেলোয়ার। কিন্তু সাকিব ছাড়াও ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল জিতেছি। মোসাদ্দেক জিতিয়েছে। ফলে এই মোমেটামটা যে এসেছে, সেই মোমেনটামটা যেন নষ্ট না হয়। ওইটা দিয়ে খেললে আমার মনে হয় সম্ভব। আর অস্ট্রেলিয়াকে যদি হারাতে পারি, তবে যতই সমীকরণ যাই হোক বাংলাদেশ ভালো করবে।